সঞ্চয়িতা/অবিনয়
অবিনয়
হে নিরুপমা,
চপলতা আজ যদি কিছু ঘটে করিয়ো ক্ষমা।
এল আষাঢ়ের প্রথম দিবস,
বনরাজি আজি ব্যাকুল বিবশ,
বকুলবীথিকা মুকুলে মত্ত কানন-’পরে।
নবকদম্ব মদির গন্ধে আকুল করে।
হে নিরুপমা,
আঁখি যদি আজ করে অপরাধ করিয়ো ক্ষমা।
হেরো আকাশের দূর কোণে কোণে
বিজুলি চমকি উঠে খনে খনে,
বাতায়নে তব দ্রুত কৌতুকে মারিছে উঁকি।
বাতাস করিছে দুরন্তপনা ঘরেতে ঢুকি।
হে নিরুপমা,
গানে যদি লাগে বিহ্বল তান করিয়ো ক্ষমা।
ঝরঝর ধারা আজি উতরোল,
নদীকূলে-কূলে উঠে কল্লোল,
বনে বনে গাহে মর্মরস্বরে নবীন পাতা।
সজল পবন দিশে দিশে তুলে বাদলগাথা।
হে নিরুপমা,
আজিকে আচারে ত্রুটি হতে পারে, করিয়ো ক্ষমা।
দিবালোকহারা সংসারে আজ
কোনোখানে কারো নাহি কোনো কাজ।
জনহীন পথ, ধেনুহীন মাঠ যেন সে আঁকা।
বর্ষণঘন শীতল আঁধারে জগৎ ঢাকা।
হে নিরুপমা,
চপলতা আজি যদি ঘটে তবে করিয়ো ক্ষমা।
তোমার দুখানি কালো আঁখি-’পরে
শ্যাম আষাঢ়ের ছায়াখানি পড়ে,
ঘন কালো তব কুঞ্চিত কেশে যূথীর মালা।
তোমারি ললাটে নববরষার বরণডালা।