সঞ্চয়িতা/অসম্ভব
অসম্ভব
পূর্ণ হয়েছে বিচ্ছেদ যবে ভাবিনু মনে
একা একা কোথা চলিতেছিলাম নিষ্কারণে।
শ্রাবণের মেঘ কালো হয়ে নামে বনের শিরে,
খর বিদ্যুৎ রাতের বক্ষ দিতেছে চিরে,
দূর হতে শুনি বারুণীনদীর তরল রব—
মন শুধু বলে, অসম্ভব এ অসম্ভব।
এমনি রাত্রে কতবার, মোর বাহুতে মাথা,
শুনেছিল সে যে কবির ছন্দে কাজরি গাথা।
রিমিঝিমি ঘন বর্ষণে বন রোমাঞ্চিত,
দেছে আর মনে এক হয়ে গেছে যে বাঞ্ছিত
এল সেই রাতি বহি শ্রাবণের সে বৈভব—
মন শুধু বলে, অসম্ভব এ অসম্ভব ৷
দূরে চলে যাই নিবিড় রাতের অন্ধকারে,
আকাশের সুর বাজিছে শিরায় বৃষ্টিধারে।
যূথীবন হতে বাতাসেতে আসে সুধার স্বাদ,
বেণী-বাঁধনের মালায় পেতেম যে সংবাদ
এই তো জেগেছে নবমালতীর সে সৌরভ—
মন শুধু বলে, অসম্ভব এ অসম্ভব।
ভাবনার ভুলে কোথা চলে যাই অন্যমনে
পথসংকেত কত জানায়েছে যে বাতায়নে।
শুনিতে পেলেম, সেতারে বাজিছে সুরের দান
অশ্রুজলের-আভাসে-জড়িত আমারি গান।
কবিরে ত্যজিয়া রেখেছ কবির এ গৌরব—
মন শুধু বলে, অসম্ভব এ অসম্ভব।
১৬ জুলাই ১৯৪০