সঞ্চয়িতা/গুপ্ত প্রেম
গুপ্ত প্রেম
তবে পরানে ভালোবাসা কেন গো দিলে
রূপ না দিলে যদি বিধি হে?
পূজার তরে হিয়া উঠে যে ব্যাকুলিয়া,
পূজিব তারে গিয়া কী দিয়ে?
মনে গোপনে থাকে প্রেম, যায় না দেখা,
কুসুম দেয় তাই দেবতায়।
দাঁড়ায়ে থাকি দ্বারে, চাহিয়া দেখি তারে,
কী বলে আপনারে দিব তায়?
তাই লুকায়ে থাকি সদা পাছে সে দেখে,
ভালোবাসিতে মরি শরমে।
রুধিয়া মনোদ্বার প্রেমের কারাগার
রচেছি আপনার মরমে।
যত গোপনে ভালোবাসি পরান ভরি
পরান ভরি উঠে শোভাতে।
যেমন কালো মেঘে অরুণ-আলো লেগে
মাধুরী উঠে জেগে প্রভাতে।
দেখো বনের ভালোবাসা আঁধারে বসি
কুসুমে আপনারে বিকাশে।
তারকা নিজ হিয়া তুলিছে উজলিয়া,
আপন আলে। দিয়া লিখা সে।
তবে প্রেমের আঁখি প্রেম কাড়িতে চাহে,
মোহন রূপ তাই ধরিছে।
আমি যে আপনায় ফুটাতে পারি নাই,
পরান কেঁদে তাই মরিছে।
আমি আপন মধুরতা আপনি জানি
পরানে আছে যাহা জাগিয়া—
তাহারে লয়ে সেথা দেখাতে পারিলে তা
যেত এ ব্যাকুলতা ভাগিয়া।
পাছে কুরূপ কভু তারে দেখিতে হয়
কুরূপ দেহ-মাঝে উদিয়া,
প্রাণের এক ধারে দেহের পরপারে
তাই তো রাখি তারে রুধিয়া।
তাই আঁখিতে প্রকাশিতে চাহি নে তারে,
নীরবে থাকে তাই রসন।
মুখে সে চাহে যত নয়ন করি নত,
গোপনে মরে কত বাসনা।
তাই যদি সে কাছে আসে পালাই দূরে,
আপন মনোআশা দলে যাই—
পাছে সে মোরে দেখে থমকি বলে ‘এ কে’
দু হাতে মুখ ঢেকে চলে যাই।
পাছে নয়নে বচনে বুঝিতে পারে
আমার জীবনের কাহিনী,
পাছে সে মনে ভানে ‘এও কি প্রেম জানে—
আমি তো এর পানে চাহি নি’।
তবে পরানে ভালোবাসা কেন গো দিলে
রূপ না দিলে যদি বিধি হে!
পূজার তরে হিয়া উঠে যে ব্যাকুলিয়া,
পূজিব তারে গিয়া কী দিয়ে।