জন্মান্তর

আমি ছেড়েই দিতে রাজি আছি সুসভ্যতার আলোক,
আমি চাই না হতে নববঙ্গে নবযুগের চালক।
আমি নাই-বা গেলাম বিলাত,
নাই-বা পেলাম রাজার খিলাত—
যদি পরজন্মে পাই রে হতে ব্রজের রাখাল বালক
তবে নিবিয়ে দেব নিজের ঘরে সুসভ্যতার আলোেক।

যারা নিত্য কেবল ধেনু চরায় বংশীবটের তলে,
যারা গুঞ্জাফুলের মালা গেঁথে পরে পরায় গলে,
যারা বৃন্দাবনের বনে
সদাই শ্যামের বাঁশি শোনে,
যারা যমুনাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে শীতল কালো জলে।
যারা নিত্য কেবল ধেনু চরায় বংশীবটের তলে।

ওরে, বিহান হল, জাগো রে ভাই— ডাকে পরস্পরে—
ওরে, ওই-যে দধিমন্থধ্বনি উঠল ঘরে ঘরে।
হেরো মাঠের পথে ধেনু
চলে উড়িয়ে গোখুর-রেণু,
হেরো আঙিনাতে ব্রজের বধূ দুগ্ধদোহন করে।
ওরে, বিহান হল, জাগো রে ভাই— ডাকে পরস্পরে।

ওরে, শাঙন-মেঘের ছায়া পড়ে কালো তমাল-মূলে,
ওরে, এপার ওপার আঁধার হল কালিন্দীরই কূলে।
ঘাটে গোপাঙ্গনা ভরে
কাঁপে খেয়াতরীর ’পরে,
হেরো কুঞ্জবনে নাচে ময়ুর কলাপখানি তুলে।
ওরে, শাঙন মেঘের ছায়া পড়ে কালে। তমাল-মূলে।

মোরা নব-নবীন ফাগুন-রাতে নীলনদীর তীরে
কোথা যাব চলি অশোক-বনে, শিখিপুচ্ছ শিরে।
যবে দোলার ফুলরশি
দিবে নীপশাখায় কষি,
যবে দখিন-বায়ে বাঁশির ধ্বনি উঠবে আকাশ ঘিরে,
মোরা রাখাল মিলে করব মেলা নীলনদীর তীরে।

আমি হব না ভাই, নববঙ্গে নবযুগের চালক,
আমি জ্বালাব না আঁধার দেশে সুসভ্যতার আলোক।
যদি ননীছানার গাঁয়ে
কোথাও অশোক-নীপের ছায়ে
আমি কোনো জন্মে পারি হতে ব্রজের গোপবালক,
তবে চাই না হতে নববঙ্গে নবযুগের চালক।