সঞ্চয়িতা/বিদায়
বিদায়
ক্ষমা করো, ধৈর্য ধরো, হউক সুন্দরতর
বিদায়ের ক্ষণ।
মৃত্যু নয়, ধ্বংস নয়, নহে বিচ্ছেদের ভয়
শুধু সমাপন—
শুধু সুখ হতে স্মৃতি, শুধু ব্যথা হতে গীতি,
তরী হতে তীর,
খেলা হতে খেলাশ্রান্তি, বাসনা হইতে শান্তি,
নভ হতে নীড়।
দিনান্তের নম্র কর পড়ুক মাথার ’পর,
আঁখি-’পরে ঘুম—
হৃদয়ের পত্রপুটে গোপনে উঠুক ফুটে
নিশার কুসুম।
আরতির শঙ্খরবে নামিয়া আসুক তবে
পূর্ণ পরিণাম—
হাসি নয়, অশ্রু নয়, উদার-বৈরাগ্য-ময়
বিশাল বিশ্রাম।
প্রভাতে যে পাখি সবে গেয়েছিল কলরবে
থামুক এখন।
প্রভাতে যে ফুলগুলি জেগেছিল মুখ তুলি
মুছুক নয়ন।
প্রভাতে যে বায়ুদল ফিরেছিল সচঞ্চল
যাক থেমে যাক।
নীরবে উদয় হোক অসীম নক্ষত্রলোক
পরমনির্বাক্।
হে মহাসুন্দর শেষ, হে বিদায় অনিমেষ,
হে সৌম্য বিষাদ,
ক্ষণেক দাঁড়াও স্থির, মুছায়ে নয়ননীর
করো আশীর্বাদ।
ক্ষণেক দাঁড়াও স্থির, পদতলে নমি শির
তব যাত্রাপথে—
নিষ্কম্প প্রদীপ ধরি নিঃশব্দে আরতি করি
নিস্তব্ধ জগতে।