ভুল-ভাঙা

বুঝেছি আমার নিশার স্বপন হয়েছে ভোর।
মালা ছিল, তার ফুলগুলি গেছে, রয়েছে ডোর।
নেই আর সেই চুপিচুপি চাওয়া,
ধীরে কাছে এসে ফিরে ফিরে যাওয়া—
চেয়ে আছে আঁখি, নাই ও আঁখিতে প্রেমের ঘোর।
বাহুলতা শুধু বন্ধনপাশ বাহুতে মোর।

হাসিটুকু আর পড়ে না তো ধরা অধরকোণে।
আপনারে আর চাহ না লুকাতে আপন মনে।
স্বর শুনে আর উতলা হৃদয়
উথলি উঠে না সারা দেহময়,
গান শুনে আর ভাসে না নয়নে নয়নলোর।
আঁখিজলরেখা ঢাকিতে চাহে না শরম চোর।

বসন্ত নাহি এ ধরায় আর আগের মতো,
জ্যোৎস্নাযামিনী যৌবনহারা জীবনহত।

কে জানে কাননে ফুল ফোটে কিনা—
আর বুঝি কেহ বাজায় না বীণা—
কে জানে সে ফুল তোলে কিনা কেউ ভরি আঁচোর,
কে জানে সে ফুলে মালা গাঁথে কিনা সারা প্রহর।

বাঁশি বেজেছিল, ধরা দিনু যেই থামিল বাঁশি।
এখন কেবল চরণে শিকল কঠিন ফাঁসি।
মধুনিশা গেছে, স্মৃতি তারি আজ
মর্মে মর্মে হানিতেছে লাজ—
সুখ গেছে, আছে সুখের ছলনা হৃদয়ে তোর—
প্রেম গেছে, শুধু আছে প্রাণপণ মিছে আদর।

কতই না জানি জেগেছ রজনী করুণ দুখে,
সদয় নয়নে চেয়েছ আমার মলিন মুখে।
পরদুখভার সহে নাকো আর,
লতায়ে পড়িছে দেহ সুকুমার—
তবু আসি আমি, পাষাণ হৃদয় বড়ো কঠোর।
ঘুমাও, ঘুমাও— আঁখি ঢুলে আসে ঘুমে-কাতর।

কলিকাতা
বৈশাখ ১২৯৪