শান্তি-গীত।


ঘুমা’ দুঃখ, হৃদয়ের ধন,
ঘুমা’ তুই, ঘুমারে এখন।
সুখে সারা দিনমান  শােণিত করিয়া পান
এখন ত মিটেছে তিয়াস?
দুঃখ তুই সুখেতে ঘুমাস্!

প্রশান্ত যামিনী আজি
কুসুম শয্যার পরে আঁচল পেতেছে,-
আকুল জোছনা,
বসন্ত-হৃদয়া আর ফুলন্ত-স্বপনা
শ্যামল-যৌবনা পৃথিবীর
বুকের উপরে আসি মরিয়া যেতেছে।
তবে ঘুমা দুঃখ ঘুমা!

স্বপনের ঘােরে যেন বেড়ায় ভ্রমিয়া
শিশু-সমীরণ,
কুসুম ছুঁইয়া,
ঘুমে যেন চলে না চরণ-


দুই পা চলিতে যেন পড়িছে শুইয়া
প্রশান্ত সরসী কোলে দেহটি থুইয়া;
দুঃখ তুই ঘুমা!

আজ জোছনার রাত্রে বসন্ত পবনে,
অতীতের পরলােক ত্যজি শুন্য মনে,
বিগত দিবস গুলি শুধু একবার
পুরানাে খেলার ঠাঁই দেখিতে এসেছে
এই হৃদয়ে আমার;-
যবে বেঁচেছিল, তারা এই এ শ্মশানে
দিন গেলে প্রতি দিন পুড়াত’ যেখানে
একেকটি আশা আর একেকটি সুখ,-
সেই খানে আসি তারা বসিয়া রয়েছে
অতি ম্লান মুখ!
সেখানে বসিয়া তারা সকলে মিলিয়া
অতি মৃদু স্বরে
পুরাণো কালের গীতি নয়ন মুদিয়া
ধীরে গান করে।
বাঁশরীর স্বর দিয়া
তারকার কর দিয়া


প্রভাতের স্বপ্ন দিয়া
ইন্দ্রধনু-বাষ্পময় ছবি আঁকিতেছে!
বুকে-ঢেকে রাখিতেছে।
দুঃখ তুই ঘুমা!’
ধীরে-উঠিতেছে গান-
ক্রমে—ছাইতেছে প্রাণ,
নীরবতা ছায় যথা সন্ধ্যার গগন।
গানের প্রাণের মাঝে, তাের তীব্র কণ্ঠস্বর
ছুরীর মতন-
তুই—থাম্ দুঃখ থাম্‌,
তুই—ঘুমা’ দুঃখ ঘুমা’!

প্রাণের একটি ধারে আছেরে আঁধার ঠাঁই,
শুকানো পাতার পরে ঘুমাস্ সেথাই।
আঁধার গাছের ছায়ে রয়েছে কুয়াশা করি,
শুকানাে ফুলের দল পড়িছে মাথার পরি,
সুমুখে গাহিছে নদী কলকল একতান,
রজনীর চক্রবাকী কাঁদিয়া গাহিছে গান;
ঘুমাস্ সেথাই—


আজ রাত্রে র’ব শুধু চাহিয়া চাঁদের পানে,
আর কিছু নয়—
বহু দিন পরে দেখা মুমূর্যু প্রণয়ী যথা
আঁকড়িয়া ধরে বুক একটি কহে না কথা-
পুরাতন দিবসের যত কথাগুলি
শত গীত ময়-
প্রাণের উপরে আসি রহিবে পড়িয়া
মরমে মরিয়া!
আজ তুই ঘুমা’ –

কাল্ উঠিস্ আবার
খেলিস্ দুরন্ত খেলা হৃদয়ে আমার।
হৃদয়ের শিরাগুলি ছিঁড়ি ছিঁড়ি মাের
তাইতে রচিস্ তন্ত্রী বীণাটির তাের,
সারাদিন বাজাস্ বসিয়া
ধ্বনিয়া হৃদয়।-
আজ রাত্রে র’ব শুধু চাহিয়া চাঁদের পানে
আর কিছু নয়!-