নবম দৃশ্য।

গ্রীষ্ম ঋতু।

(নায়ক-নায়িকার গীত।)

টলে লালরবি, টলে লাল রবি।
লাল তোমারি বদন ছবি॥
লাল আভা নয়নে, গগনে লাল মেঘদল,
রবি টলে, টলে টলে ঢলে জলে;
চাহি ফটিকজল চাতক কাতর,
থাকি থাকি পাখী সকরুণ বোলে,
দে জলদে কত নিদয় হবি।
পাখী কহিছে ছলে,
চাহ ফটিক জল দারুণ তৃষা কেন সহ;
চ্যুত লতিকাদল ধীর সমীরে দোলে,
ডাকি কহে পাখী ছলে,—
পিও পিও বারি মোহন মোহিনী,
হের মোহিনী মাধুরী মাধবী॥

(রঙ্গদার রঙ্গদারণীর রঙ্গ।)

বর্ষা ঋতু।

(নায়ক-নায়িকার গীত।)

গভীর মেঘদল গরজে।
বাজে বাজে প্রাণে, থেকনা থেকনা,
থেকনা থেকনা দূরে,
চাহি চুমিতে মুখ সরোজে।
চমকি চাকিচূকি, চমকি চমকি লুকি
চপলা, মন উতলা,
নীরদ ঢালিছে ধারা তর তর ঝর ঝর,
চমকি শিহরি ঘন, নয়ন নীর ধারা নেহার,
কাতর কুলিস কঠোর কত বাজে।
বাজে বাজে, না জেনে না বুঝে তোরি প্রেমে মজে॥

(রঙ্গদার রঙ্গদারণীর-রঙ্গ।)


শরৎ ঋতু।


নায়ক-নায়িকার গীত।

মেঘে আর চাঁদ ঢাকে না।
বদন খানি আর ঢেকনা॥

চাও হে চাও দেখি আঁখি,
ফুটলো কলি ঐ দেখনা॥
সোহাগে কইছে কথা তরুলতা,
কেন ব্যথা দাও বলনা॥
ছলনা আর কোরনা,
রাগের ভরে তার থেকনা।
কোরনা পর কোরনা,
সাধের শরত বাদ সেধন॥
হাসবে কমল হেরে হাসি,
শশির হাসির মান রেখনা॥

(রঙ্গদার রঙ্গদারণীর রঙ্গ।)


হেমন্ত ঋতু।


তোরি আশে।
হের বেশভূষা পরি দাঁডায়ে রয়েছে উষা,
হেরিতে সাধ তব রাঞ্জিত অধরে,
আদরে এখন দাঁড়ায়ে উষা তোরি তরে,
তোরি আশে॥
প্রাণ মন মম আশে বিলাসে, ভাসে ভাসে॥

নীহার হার পরি; ঝর ঝর তর তর-
ঝরিছে মুকুতা পাঁতি,
রঞ্জিত কুসুমিত রমিত মোহিত বনরাজি;
হেমন্ত হিল্লোলে, হেমশির্ষ দোলে,
প্রান্তরে তরঙ্গ মালা,
হেলা দোলা, অঙ্গ তরঙ্গিত,
হেরিতে পিয়াস বিভোলা;
কপোত কপতী কত সোহাগে কহিছে কথা,
ব্যাকুল খেলিতে ভাসিতে সমিরে,
হেমকিরণ মাখি সাজি;
পাখী জাগে,
মাতি তরুণ রাগে গাইছে,
পবন কাকলি বহে,
গায়িছে পাখী অনুরাগে;
হৃদয়ে তোমারে ধরি,
বদন রাগ হেরি,
নয়নে নয়ন অভিলাষে॥

(রঙ্গদার রঙ্গদারণীর রঙ্গ।)

শীত ঋতু।

নায়ক-নায়িকার গীত।

হের ধূসর দিশা।
ধূসর ধূমরাশি নিবিড় কুয়াশা—
আদরে করিছে মানা,
যেওনা যেওনা নিশা,
যুবক যুবতী সাধ রহিল,
রহিল তোমারি বিধুমুখ সুধা পান তৃষা॥
বরিষা ইরিষা করি ধূসর রেণু কত উড়িছে ঝরিছে,
কিশোর অরুণ কর বারিছে;
লোহিত সিত পীত তরে তরে ফুল কলি,
তারকা মেঘ ঢাকা;
না হেরি উষা ব্যাকুল পাখী,
শাখা শীরে বসি রহি রহি বোলে,
চ্যুত মুকুল দোলে কিরণ চুম্বন আশা॥
চঞ্চল চিত মম নয়ন কিরণ তব চুমিতে পিপাসা॥

(রঙ্গদার রঙ্গদারণীর রঙ্গ।)

বসন্ত ঋতু।

নায়ক-নায়িকার গীত।

স্বরে তোর মন মেতেছে কোকিলে ঐ কুহরে।
গাঁদা গোলাপ হার গেঁথেছে,
চেয়ে আছে তোর অধরে॥
কিশলয় কাঁপিয়ে মলয়,
তোর কথা কয় আমোদ ভরে,
বয় ধিরে সৌরভ বয়ে,
গা ছুঁয়ে তোর যায় আদরে॥
গুঞ্জরে ঐ ভ্রমরা ফুলে টলে ধায় বিভোরে,
চায় তোরে মন বিভোরা,
আঁখি বিভোর হেরে তোরে॥

(রঙ্গদার রঙ্গদারণীর রঙ্গ।)