সমুদ্রজয়ী কলম্বাস/রাজকীয় অভ্যর্থনা
রাজকীয় অভ্যর্থনা
কলম্বাস ফিরে এসেছেন সেই সংবাদ পেয়ে রাজা জন খুব খাতির করে তাঁকে রাজ-সভায় নিয়ে এলেন এবং কলম্বাসকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে পর্ত্তুগালের নামে সেই অভিযানকে ঘোষণা করতে বল্লেন। কিন্তু কলম্বাস কোন প্রলোভনেই তাতে সম্মত হলেন না। তখন রাজা জনের সভাসদেরা কলম্বাস এবং তাঁর লোকদের বন্দী করে রাখবার পরামর্শ দিলেন; কিন্তু তার অর্থ হলো স্পেনের সঙ্গে পর্ত্তুগালের যুদ্ধ-ঘোষণা করা। রাজা জন সে প্রস্তাবে সম্মত হতে পারলেন না। হতাশ হয়ে তিনি কলম্বাসকে ছেড়ে দিলেন।
সেই ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে কলম্বাস তাঁর লোকজনদের নিয়ে, যে বন্দর থেকে যাত্রা করেছিলেন আবার সেই বন্দরে ফিরে এলেন। যখন তাঁর জাহাজ তীরে এসে লাগলো, তখন স্পেনের রাজার আদেশে, স্পেনের তাবৎ সম্ভ্রান্ত লোক কলম্বাসকে অভিনন্দন জানাবার জন্যে তট-ভূমিতে সমবেত হয়েছিলেন···এক বিরাট রাজকীয় অভ্যর্থনার মধ্যে বিজয়ী কলম্বাস আবার স্পেনের মাটিতে পা দিলেন···
এক নগর থেকে আর এক নগরে রাজকীয় অভ্যর্থনা নিতে-নিতে কলম্বাস বার্সিলোনা শহরে এসে উপস্থিত হলেন, সেইখানে তখন রাজা ও রাণী তাঁর জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। কলম্বাস যখন রাজ-সভায় প্রবেশ করলেন, তখন রাজা ফার্ডিন্যাণ্ড এবং রাণী ইসাবেল সিংহাসন থেকে উঠে এগিয়ে এসে স্বয়ং তাঁকে অভ্যর্থনা করে সম্মান দেখালেন।
কলম্বাস সেই রাজ-সভায় তাঁর অপূর্ব্ব কাহিনী বল্লেন এবং তাঁর স্বপ্ন যে সফল হয়েছে, তার জন্যে ভগবানকে ধন্যবাদ জানালেন।
যে অটুট বিশ্বাস এবং যে অপূর্ব্ব কৃতিত্বের সঙ্গে সেই মানচিত্রহীন মহাসাগর থেকে কলম্বাস ফিরে এসেছেন, সেই অপূর্ব্ব চমকপ্রদ কাহিনী তখন য়ুরোপের চারদিকে দেখতেদেখতে ছড়িয়ে পড়লো···সঙ্গে-সঙ্গে য়ুরোপের প্রত্যেক রাজধানীতে লোকে অপূর্ব্ব বিস্ময় ও শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে লাগলো...সবাই বলতে লাগলো...সমুদ্র-অভিযানের ইতিহাসে, এ-সাহস, এ-কৃতিত্বের আর তুলনা নেই...
ইংলণ্ডের রাজ-সভায় যখন এই সংবাদ পৌঁছল, তখন স্বয়ং রাজা সপ্তম হেনরী বলেছিলেন, এ আবিষ্কার মানুষের দ্বারা সম্ভব হয় নি...কলম্বাস অতি-মানব!
সকলেই তখন জানতেন যে কলম্বাস ভারতবর্ষের তটভূমিই দেখে এসেছেন, তাই যে-সব দ্বীপপুঞ্জ তিনি আবিষ্কার করলেন, পশ্চিম দিকে গিয়ে তাদের সন্ধান পেয়েছিলেন বলে, তাদের নাম হলো West Indies বা পশ্চিম-ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ···আজও ভূগোলে সেই সব দ্বীপপুঞ্জের ঐ নামই রয়ে গিয়েছে···