সাহিত্য-চিন্তা/জ্ঞান
জ্ঞান
জ্ঞান আত্মার আলোক। যেমন সূর্য্যোদয়ে অন্ধকার বিনষ্ট হয়, আনন্দময়ী ভুবনমোহিনী উষার কণক-কিরণে জগৎ রঞ্জিত হইয়া ওঠে, তেমনই আত্মাতে জ্ঞানের উজ্জ্বল নির্ম্মল কিরণ উদ্ভাসিত হইলে মোহতমঃ দূরীভূত হয়। দেবমন্দীরের প্রভাত মঙ্গল শঙ্খধ্বনির ন্যায় জ্ঞান ধীরে— ধীরে, অতি ধীরে হৃদয়দ্বারে প্রবেশ করিয়া মানবাত্মাকে সচেতন করিয়া তোলে। সে মঙ্গলময় চৈতন্যময় আহ্বানধ্বনিতে মর্ম্মতন্ত্রীর প্রতি তার কি এক অজ্ঞাতসুরে বাজিতে থাকে,—প্রতি শিরা ধমনীর প্রতি রক্তবিন্দু সজাগ হইয়া ওঠে। জ্ঞান কলুষ-সমুদ্র উত্তীর্ণ হওয়ার তরণীস্বরূপ। একথা পৃথিবীর সমস্ত সাধক ভক্ত একবাক্যে স্বীকার করিয়াছেন। গীতা বলিয়াছেন,―
“যদি সমুদায় পাপী হইতেও তুমি অধিক পাপকারী হও, তথাপি সমুদায় পাপ-সমুদ্র জ্ঞানালোক দ্বারাই সম্যকরূপে উত্তীর্ণ হইবে।”
জ্ঞান, ভক্তি কর্ম্ম, আত্মার তিনটি অবস্থামাত্র। যোগী সাধকদিগের জীবনে ইহাদের আশ্চর্য্য সংমিশ্রণ ও সামঞ্জস্য দর্শন করা যায়। যেমন একটি বীণাযন্ত্রের তিনটি তার তানলয় যোগে মধুর নিস্বন তুলিয়া সমানভাবে বাজিতে থাকে, তেমনই ভক্ত হৃদয়ে জ্ঞান ভক্তি কর্ম্মের চমৎকার সমতা দর্শন করিয়া আমরা মুগ্ধ হই। মূলতঃ বিভিন্নতা সত্ত্বেও কেমন অপূর্ব্ব একত্ব! যেমন তিনটি স্রোতস্বিনী একত্র মিলিত হইয়া একই তরঙ্গ তুলিয়া মহাসাগরে গমন করে, তেমই যখন জীব হৃদয়ে জ্ঞান, ভক্তি, কর্ম্ম পরস্পর সন্মিলিত হইয়া অনস্ত প্রেমসিন্ধুর উদ্দেশে ধাবিত হয়, তখন তাহাদের প্রভেদ কোথায়? সে মধুময় সন্মিলনে কতই মাধুরী কতই মহিমা প্রকাশিত হইয়া জগৎকে ধন্য করে।
সত্যস্বরূপ, জ্ঞানস্বরূপ, আনন্দস্বরূপ ভগবানের এই তিনটি স্বরূপ সাধনাতে সাধক হৃদয়ে জ্ঞান ভক্তি, কর্ম্মের বিকাশ হইয়া থাকে।
“কৃষ্ণের স্বরূপ বিচার শুন সনাতন।
অদ্বয় জ্ঞানতত্ত্ব ব্রজে ব্রজেন্দ্র নন্দন॥
সর্ব্বাদি সর্ব্ব অংশী কিশোর শেখর।
চিদানন্দ দেহ সর্ব্বাশ্রয় সর্ব্বেশ্বর॥
জ্ঞান, যোগ, ভক্তি তিন সাধনের বশে।
ব্রহ্ম, আত্মা ভগবান ত্রিবিধ প্রকাশে॥”
“এক অখণ্ড অব্যয় জ্ঞান বস্তুকেই তত্ত্ব বলা যায়। তিনি শুদ্ধ আনন্দ চিন্ময়। তিনিই সৃষ্টাদির আদিকারণ। তাঁহার তুল্য কেহ নাই, তাঁহার শ্রেষ্ঠও কেহ নাই। আমি তাঁহাকেই ব্রজের, ব্রজেন্দ্র নন্দন শ্রীকৃষ্ণ বলিতেছি। এই তত্ত্ব বস্তুর অনন্ত প্রকাশের মধ্যে তিনটি প্রকাশ আছে। ব্রহ্ম আত্মা ভগবান তিনটি পৃথক বস্তু নহে, একই বস্তুর তিনটি প্রকাশ মাত্র। ব্রহ্মস্বরূপ নির্ব্বিশেষ জ্যোতির্ম্ময়। অনন্ত বিশ্বসৃষ্টিতে যে জ্যোতি প্রকাশিত তাহা ব্রহ্মজ্যোতির ছায়া মাত্র। দ্বিতীয় পরমাত্মা, ইনি চৈতন্যময় অন্তর্যামী আত্মারাম, অন্তরতর অন্তরতম। হিরণ্ময়ে পরে কোষে ইঁহাকে ধ্যান করিয়া যোগীগন যুগ যুগান্ত কাটাইয়া দেন। তৃতীয় ভগবান্ ইনি লীলা বিগ্রহ। নর লীলায় মানব ইতিবৃত্তে তাঁহার দর্শন হইতে পারে।”
“ব্রহ্ম” ও “আত্মার” সাধনায় কেবল জ্ঞানের বিকাশ। “ভগবৎ” তত্ত্বের সাধনায় জ্ঞান, ভক্তি, কর্ম্ম তিনেরই বিকাশ হইয়া থাকে। এই ভগবৎ তত্ত্বই সচ্চিদানন্দ মানবের বিচিত্র কর্ম্মক্ষেত্রে তাঁহার পূজা। সচ্চিদানন্দ স্বরূপ ভগবানের যে অনন্ত জ্ঞানের কণিকামাত্র আশ্রয় করিয়া জীবগণ তাঁহার দিকে অগ্রসর হয় আমরা তাহার সম্বন্ধেই দুই একটি কথা বলিব।
এই বিবিধ লীলাপূর্ণ কার্য্য কারণ সূত্রে নিয়ন্ত্রিত সৃষ্টি বৈচিত্র্যে দৃষ্টিপাত পূর্ব্বক অনুধ্যান করিলেই আমরা সর্ব্বপ্রথমে কি অনুভব করি? ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি, স্থিতি, পালনতত্ত্ব—প্রাকৃতিক অলঙ্ঘনীয় বিধান পরম্পরা নীরব ধ্বনিতে কি জ্ঞানের মহিমা ঘোষণা করিতেছে না? বিশ্বপ্রকৃতির বিরাট কাব্যগ্রন্থ হইতে প্রতি ছত্রে ছত্রে প্রতি অক্ষরে অক্ষরে অনন্ত জ্ঞানের অমৃত নিস্যন্দিনী ভাষা আমাদের প্রাণের কাছে কি এক বিহ্বলতা আনিয়া দেয় না? এই সমস্ত দর্শন করিয়া স্বভাবতঃই জ্ঞানের স্বরূপ কি এই প্রশ্ন মানব প্রাণে সমুদিত হইয়া থাকে। ঘেরণ্ড সংহিতায় আছে,—
“যে প্রকার মায়ার সমান বন্ধন নাই, এবং জ্ঞানের তুল্য বন্ধু নাই, এবং অহঙ্কারের সমান শত্রু নাই, সেই প্রকার যোগের তুল্য বল আর দৃষ্টি হয় না।”
জ্ঞান কি? এসংসারে সর্ব্বদাই আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়, নানা শাস্ত্রে অভিজ্ঞ, বিবিধ ভাষায় কৃতবিদ্য, বহু গ্রন্থ অধ্যয়নকারী ব্যক্তিগণও বিষয়ক্ষেত্রে নানাপ্রকার দুস্ক্রিয়ায় রত রহিযাছেন। গ্রন্থাদি অধ্যয়ন করিয়া তাঁহাদের মোহতমঃ বিনিষ্ট হওয়া দূরে থাকুক বরং তাঁহারা দিন দিনই মোহকূপে অধিকতর নিমগ্ন হইতেছেন। সুতরাং আমরা প্রত্যক্ষই দেখিতেছি অধ্যয়ন আলোচনা প্রভৃতি দ্বারা তাঁহারা জ্ঞানের আলো এক কণাও লাভ করিতে সমর্থ নহেন। পক্ষান্তরে বিদ্যা বুদ্ধি বিহীন নিতান্ত বর্ণজ্ঞানশূণ। দুই একটি লোক দেখা যায় যাহাদের মধ্যে তত্ত্ব জ্ঞানের উজ্জ্বল আলোক প্রকাশিত হইয়া থাকে। যাহা দ্বারা অসৎ বস্তু হইতে সৎ বস্তু পৃথক প্রতিপন্ন হয় তাহাই জ্ঞান। যদিও সমস্তই সেই সদ্ বস্তু হইতেই উৎপন্ন হইয়াছে, তথাপি সেই সত্য স্বরূপ ব্রহ্ম সমস্ত অসদ, বস্তু হইতে ভিন্ন। তিনি সমস্ত পদার্থের প্রাণরূপে প্রতিষ্ঠিত থাকিয়াও স্বয়ং স্বতন্ত্র। এই তথ্য জ্ঞানই আমাদের প্রাণের নিকট প্রকাশিত করে। “তাঁহাকে লাভ করিলেই জীবের মানব জন্মের সফলতা” এই সত্যও আমরা প্রথমে জ্ঞানের নিকট শ্রবণ করি। ব্রহ্মের স্বরূপ কি; আত্মার স্বরূপ কি? এ সকল তত্ত্বও জ্ঞানই আমাদের নিকট বিদিত করে।
মুণ্ডক্যোপনিসদে আছে,—“তিনি তাঁহাকে বলিলেন। ব্রহ্মবিদেরা বলেন দুই বিদ্যা জ্ঞাতব্য, পরা (বিদ্যা) ও অপরা (বিদ্যা)।
ইহাদের মধ্যে ঋগ্বেদ যজুর্ব্বেদ, সামবেদ অথব্ববেদ, শিক্ষা, (অর্থাৎ উচ্চারণাদিবোধক বেদাঙ্গ) কল্প (অর্থাৎ বৈদিক ক্রিয়া কল্পবোধক বেদাঙ্গ) ব্যাকরণ, নিরুক্ত (অর্থাৎ বেদ ব্যাখ্যর নিয়মাদিবোধক বেদাঙ্গ) ছন্দ ও জ্যোতিষ ইহারা অপরা (বিদ্যা), পক্ষান্তরে যদ্দ্বারা সেই অক্ষয় পুরুষকে জানা যায় তাহাই পরা (বিদ্যা)।”
এই পরা বিদ্যাই জ্ঞান।
“জ্ঞান কোথা হইতে লব্ধ হয়? আত্মানাত্ম অর্থাৎ চিৎ ও জড় এই উভয়ের স্বরূপ নির্ণয় হইতে।”
শিব সংহিতায় লিখিত আছে,— “জ্ঞানের সঞ্চার হইলেই কাম ক্রোধাদি সকল বৃত্তি বিনষ্ট হয়, তদ্ভিন্ন কোন রূপেই তাহা হইতে পারে না। বস্তুতঃ যৎকালে সকল তত্ত্বের অভাব হয় (অর্থাৎ সংসারাসক্তি দূর হয়) তখনই আত্মতত্ত্ব প্রকাশিত হইয়া থাকে।” ৫৮।
বিবেক চূড়ামণিতেও এইরূপ উক্তি আছে,—“পণ্ডিত ব্যক্তি এইরূপে সৎ ও অসৎ বস্তু বিভাগ করিয়া আত্মজ্ঞান দ্বারা তত্ত্ব নিশ্চয় পূর্ব্বক অখণ্ড বোধ স্বরূপ আত্মাকে জানিয়া স্বয়ংই তত্তৎ বিকার হইতে বিমুক্ত হইয়া শাস্তি লাভ করেন।”
অষ্টাবক্র সংহিতা ও ঠিক এই কথাই বলেন,—“তুমি যদি এই শরীরকে আত্মা হইতে বিভিন্ন বোধ করিয়া সেই চিৎস্বরূপে অবস্থান করিতে পার তবে এখনই সুখী, শান্ত ও বন্ধমুক্ত হইতে পারিবে।”
গীতা বলিয়াছেন,— “শ্রদ্ধাবান, তৎপরায়ণ জিতেন্দ্রিয় ব্যক্তি জ্ঞান লাভ করেন, জ্ঞান লাভ করিয়া অতি শীঘ্র মোক্ষ প্রাপ্ত হন।”
এক্ষণে দেখা গেল তত্ত্বজ্ঞান ভিন্ন গ্রন্থাদি অধ্যয়ন করিলে কোন ফল নাই। তাহাতে কিছুমাত্র অজ্ঞানতা বিনষ্ট হয় না। হৃদয় মধ্যে সেই পরা বিদ্যার যে উন্মেষ —জীবাত্মার মোহ নিদ্রার সুপ্তি হইতে যে জাগরণ— অনন্ত বিষয় বাসনাতে অচৈতন্য আত্মার যে চিদ্বস্তু লাভের আকাঙ্ক্ষার চেতনা তাহার নামই জ্ঞান।
হিন্দুসমাজে ভগবতী পূজার নিমিত্ত প্রথম উদ্বোধন আবশ্যক। নতুবা পূজা হয় না। ইহাদ্বারা আমরা এক চমৎকার শিক্ষা লাভ করিয়া থাকি। আমাদের আত্মা ও তত্ত্বজ্ঞানে উদ্বুদ্ধ না হইলে ব্রহ্মপূজা অসম্ভব। তত্ত্বজ্ঞানের ভিত্তির উপর ভক্তি প্রতিষ্ঠিত করিতে না পারিলে সাধন ভজন, যোগ তপস্যা সমস্তই মিথ্যা। আত্মার জাগরণ চাই। চিৎস্বরূপেই উদ্বোধন চাই। নতুবা পূজা করিবে কে? এই জন্যই মহাজনেরা বলিয়া গিয়াছেন যে, ধর্ম্মের ভিত্তি জ্ঞান।
মানবাত্মাতে জ্ঞানের বিকাশের জন্য সাধনার প্রয়োজন। যে অবস্থার ভিতর দিয়া অর্থাৎ যে প্রকার সাধন মার্গের সোপান অবলম্বন করিয়া শুদ্ধ সত্ত্ব নির্ম্মল জ্ঞানের পূর্ণ বিকশিত অবস্থা প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাহার নাম জ্ঞানযোগ। ইহা জীবাত্মার সর্ব্বপ্রথম সাধন পথ। ইহার উপর ভক্তিযোগ এবং কর্ম্মযোগ স্থাপিত।
জ্ঞানযোগ যে একটি সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত তাহার নাম “স্বতঃসিদ্ধ জ্ঞান”। স্বতঃসিদ্ধ জ্ঞান কি? যাহা স্বয়ং প্রাণে প্রতিভাত হয়। যে জ্ঞান বীজরূপে মানব প্রাণে নিহিত রহিয়াছে। যে প্রত্যয় কোন গ্রন্থবা গুরুর অপেক্ষা রাখে না। এই স্বতঃসিদ্ধ জ্ঞানই মানবের সমস্ত তপস্যার মূল। যিনি আমাদের জন্মের পূর্ব্বে জননীর বক্ষে ক্ষীর প্রদান করিয়াছেন, ক্ষেত্রে শস্য এবং বৃক্ষে ফল সৃষ্টি করিয়াছেন, তিনিই তাঁহাকে লাভ করিবার জন্য মানবের অন্তরে স্বতঃসিদ্ধ জ্ঞানকে বীজ রূপে স্থাপন করিয়াছেন। ইহাই জীবের প্রতি ভগবানের সর্ব্বপ্রধান রূপা। কে প্রাণের ভিতর গম্ভীর নীরব এই প্রকার ভাষায় বলিতে থাকেন—"ঈশ্বর আছেন! এই প্রকার নির্ব্বাক ধ্বনি প্রাণের অন্তস্তল হইতে নিরন্তর ধ্বনিত হইতেছে। জগতে এমন কে দুষ্কৃতিকারী আছে, যাহার প্রাণ হইতে একবারও দুষ্কার্য্যের প্রতিবাদ উত্থিত হয় না? এমন কে নাস্তিক আছে যে আপনার সৃষ্টিকর্ত্তাকে অস্বীকার করিবার সময় একবারও তাহার প্রাণ কাঁপিয়া ওঠে না? এই স্বভাবসিদ্ধ আত্মপ্রত্যয়কে কাহারও অস্বীকার করিবার সাধ্য নাই।
এই স্বতঃসিদ্ধ জ্ঞানকে ভক্তসাধকগণ ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তুলনা করিয়াছেন। ঘড়ির কাঁটা যেমন সর্ব্বদা টক্ টক্ শব্দ করিতেছে, দিন নাই, রাত্রি নাই অবিরাম অবিশ্রাম কেবল টক্ টক, শব্দ। তেমনই মানবের প্রাণের প্রাণে, অন্তরের অন্তরে বসিয়া একজন দিন রাত্রি অবিশ্রাম শব্দ করিয়া জানাইতেছেন “এটি ভাল, এটি মন্দ” “এটি ভাল, এটি মন্দ” “আমি আছি” “আমি আছি”। নীরব ভাষার নিরন্তর এই বাণী উত্থিত হইতেছে। ইহা প্রমাণ করিবার জন্য কোন যুক্তি তর্কের আবশ্যক হয় না। ইহাকে লোকে বলে বিবেক, কিন্তু ইহা ভগবানের সাক্ষাৎ প্রত্যাদেশ।
জল, বায়ু, আলোক যেমন স্বাভাবিক ও সহজ প্রাপ্য, ধর্ম্মও তেমনি স্বাভাবিক। সকলের প্রাণ হইতেই এই প্রকার ধ্বনি অবিশ্রাম উঠিতেছে।
তবে কেন সকলে নিজের প্রাণে প্রত্যাদেশ শুনিতে পায় না? আত্মা যতই নির্ম্মল হইতে থাকিবে ততই এই বাণী স্পষ্ট হইতে স্পষ্টতর শ্রুত হইবে। কিন্তু মানবাত্মা যতই কেন মলিন হউক না, ভিতরকার এই বাণী সকলেই অস্পষ্ট ভাবে শুনিতে পায়। কিন্তু কে তাহাকে গ্রাহ্য করে? পাপে প্রবৃত্ত হইতে আরম্ভ করিলে প্রথম নিশ্চয়ই প্রাণে আঘাত দিয়া কে জানায়— “ইহা করিও না”। অন্ধকারে লোক চক্ষুর অজ্ঞাতে এই আলোক নিশ্চয় অলক্ষিতে একবার পাপীর প্রাণে প্রকাশিত হয়। কিন্তু সে তাহা অবহেলা করে। পুনঃপুনঃ স্বতঃসিদ্ধ জ্ঞানরূপ ব্রহ্মবাণী অবহেলা করিতে করিতে অবশেষে জীব পাপে অভ্যস্ত হইয়া পড়ে। এমন সুন্দর স্বভাবতঃ পবিত্র মানবাত্মাকে অপবিত্র রাখা কি স্বাভাবিক? যদি মানব সর্ব্বদা প্রাণের এই স্বতঃসিদ্ধ জ্ঞান লক্ষ্য করিয়া প্রত্যাদেশ অনুসারে চলিতে চেষ্টা করে তবে নিশ্চয়ই সে পুণ্যজ্যোতিঃ লাভ করিতে সমর্থ হয়।
সমাপ্ত।