সিতিমা/চতুর্থ দৃশ্য

চতুর্থ দৃশ্য।
বীরগ্রাম, প্রাচীন দুর্গের নিম্নতলে অন্ধকারাগার। বাহিরে একজন বৃদ্ধ ও একজন তরুণ সন্ন্যাসী ও প্রহরী।
তরুণ স। এ দরজা কখন খুলবে ভাই?
প্রহরী। দরজা যখন তখন খোলে না।
তরুণ স। তাতো খুব জানি, তবু কখনো তো খোলে?
প্রহরী। এই যেদিন রাজা সাহেবেব মনে পড়ে, ইচ্ছা যায়। ছ’দিনে ন’দিনে। একটা দিন ঠিক করা নেই।
বৃদ্ধ স। খাবার দিতে যাও কোন রাস্তায়?
প্রহরী। ঐ যে গোল ফোকর, আলো হাওয়া ঢুকবার পথ-এখান দিয়ে একটা রসি গলিয়ে দেওয়া যায়, রসিতে ছাতুর ঠোঙ্গা আর জলের কুঁজো বাঁধা থাকে।
তরুণ স। সে লোকটি দেখ্‌তে কেমন ভাই?
প্রহরী। আহা যখন এল খাসা দেখ্‌তে ছেল, কিন্তু এই পনের কুড়ি দিনে রোগা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।
তরুণ স। আমি হলে কবে পালিয়ে যেতুম।
বৃদ্ধ স। কি খেতে দাও?
প্রহরী। একশরা ছাতু, একটু নুন এক কুঁজা জল।
তরুণ স। ফলটল কিছু নয়?

প্রহরী। হু ঁফল দেবে, মেওয়া দেবে মেঠাই মণ্ডা পরমান্ন দেবে- তবে শ্বশুরবাড়ী না পাঠিয়ে অন্ধকার কয়েদখানায় পূরবে কেন?
তরুণ স। ঠিক বলেছিস ভাই, এতো শ্বশুরবাড়ী নয়, এ হল অন্ধকারাগার। কিন্তু ভাই তোমার ঐ পথ দিয়ে আমার ঝুলিটা নামিয়ে দিতে হবে।
প্রহরী। ওটাতে কি আছে ঠাকুর?
তরুণ স। এই পুঁটলীতে আছে কাপড়, শীত করলে পারবে; আর এই যে কাগজখানা দেখছি। এতে একটা মন্ত্র লেখা আছে। ভয় পেলে মন্ত্র আওড়াবে।
প্রহরী। ভয়তো খুবই পাবার কথা। ওর মধ্যে অনাহারে যারা মারা গেছে, লোকে বলে তাদের হাড়গুলো ওর ভেতরেই পড়ে আছে, আর তাদের ভূতগুলো ওইখানে মাঝে মাঝে এসে ভারি উৎপাত করে।
বৃদ্ধ স। একটা বন্দী ওর মধ্যে মরেছিল?
প্রহরী। একটা? ঢের লোক ওর মধ্যে মরেছে। এ লোকটা যে জ্যান্ত বেরোবে তা’ কে জানে?
তরুণ স। তবে তো আমার এই মন্তর তার খুব কাজে আসবে। কিন্তু পাঠাই কি করে?
প্রহরী। কি করে পাঠাবে? ছাতু জল ছাড়া কোন কিছু পাঠাবার হুকুম নেই।
তরুণ স। কেউ তো ভাই জানবে না?

প্রহরী। তুমি জানবে, আমি জানব, এই বুড়ো ঠাকুরটি জানবে, আর বাকী থাকবে কে? যখন জঙ্গলের ভেতর কি অন্ধকার ঘরে একটা মানুষ আর একটাকে খুন করে, তথন জানে কে?—তারা দুইজন। তারাই সে কথা লুকোতে পারে না, আপনারা বের করে দেয়। ঠাকুর, এ রাজার রাজ্যি! সোজা কথা?
তরুণ স। তা কি বলব ভাই, মন্ত্রের গুণে সব করা যায়, মুখবন্ধ, চোখ বন্ধ হয়, লোহাকে সোনা, সোনাকে লোহা করা যায়, মানুষকে গাধা ভেড়া যা খুসী করা যায়।
প্রহরী। মানুষকে গাধা করা কিছু বাহাদুরী না; তবে লোহাকে সোনা করতে পারলে একটা কাজ হোত, তোমাদের বিদ্যেও বোঝা যেত।
তরুণ স। এ লোকটা নিরেট মুর্খ। চল ঠাকুর আমরা যাই। মন্ত্র শক্তি বুঝবে ওর মত লোক?
প্রহরী। আচ্ছা। ঠাকুর। আমাকে মস্তর শিখিয়ে দাও, যাতে আমি লোহা সোনা করতে পারি, তখন যা বল কর্‌ব।
তরুণ স। শিখ্‌বে মন্তর?
প্রহরী। শিখব।
তরুণ স। কিন্তু মন্তর নিতে হলে আগে কণ্ঠ শুদ্ধ করা চাই।
প্রহরী। সে কি ঠাকুর?
তরুণ স। যে মুখ দিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করবে সে মুখটা আর গলাটা একটা ঔষধ-—একটা শুদ্ধ জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হয়, তবেই দিয়ে বেরোয়, নইলে অত সংস্কৃত বাক্য তুমি বলতে পারবে না।

আচ্ছ। বলতো—
মন্থায় স্তার্ণবাম্ভঃ প্লৃত কুহর চলনন্মন্দর ধ্বান ধীরঃ
কোণাঘাতেযু গর্জ্জৎ প্রলয় ঘনঘটা ন্যেন্য সংঘট্ট চণ্ডঃ।
কৃষ্ণা ক্রোধাগ্র দূতঃ কুরুকুল নিধনোৎপাত নির্ঘাতবাতঃ
কেনান্মৎ সিংহনাদ প্রতিরসিত সমো দুন্দুভি স্তাদ্যতেহয়ম্‌?

প্রহরী। ও বাবা! অত কথা মুখ দিয়ে বেরোবে কি করে?
তরুণ স। তবেই তো! কণ্ঠশুদ্ধির দরকার। তুমি মন্ত্র দিয়ে কি কর্‌তে চাও? সোনা?
প্রহরী। তা একবার ঘরে না হয় জিজ্ঞেস করেই আসি।
তরুণ স। আচ্ছ। আমি। তোমাকে মন্ত্রের গুণ দেখাচ্ছি। তুমি চোখ বোঁজ-এখন এই ফিরে। দাঁড়াও। দেখ্‌বে এখনি কোমরের এই রূপার গোট ছড়া আমি সোনার চন্দ্রহারে করে দেব। আরে ফিরোনা-খুব এঁটে চোখ বুঁজে থাক, দুই হাতে কান কসে বন্ধ কর-আমার মন্ত্র তোমার কানে গেলে সব ফস্কাবে।

[ ঝুলিতে রূপার গোট পুরিয়া, সোনার চক্রহার বাহির করণ ] এইবার আস্তে ফের। স্বাহা-স্বধা - ফট - হুম-এই দেখ।’

প্রহরী। বাঃ এযে দিব্যি সোণার চন্দ্রহার! এতো মেয়েলোকে পরে- যাই ঘরে একবার দেখিয়ে আসিগে। ভারি খুসী হবে। খাসা জিনিষটে। চাবিগাছা সোনা হয় নি। [ গমনোদ্যত ]
তরুণ স। আরে দেখাবে এখন, তাড়াতাড়িটা এত কিসের জন্য? মন্ত্র রইল আমার কাছে। আবার তো সোণা রূপো হয়ে যেতে। পারে, লোহাও হতে পারে। নিজে মন্ত্র না শিখ্‌লে সব ফাঁকি।

প্রহরী। আচ্ছা আমায় ঐ মন্তর শিখিয়ে দাও ঠাকুর।
তরুণ স। আগে এটা দিয়ে কণ্ঠশুদ্ধি কর।

[ প্রহরী কর্তৃক ঔষধ গ্রহণ ও সেবন। ]

প্রহরী। বেশত মিষ্টি! ও ঠাকুর আমার গা। কেমন কচ্চে যে। হাত পা যেন এলিয়ে আস্‌চে ঘুম পাচ্চে-এ
তরুণ স। ঐ রকম তো হবেই-তোমার ধ্যানের অবস্থা আসচে ভাই, এর পর দিব্যদৃষ্টি আস্‌বে।
প্রহরী। তা দিব্যি দেখ্‌ছি-সোণার গোটছড়া-একটু শুই। আরে আমার কোমর থেকে গোট ছড়া নিচ্চ নাকি?
তরুণ স। না না-সোণার গোট পরাচ্চি। ভাই, তুমি আরাম করে একটু ঘুমোও।
প্রহরী। আচ্ছা ঠাকুর [ প্রহরীর শয়ন ও সন্ন্যাসী কর্ত্তৃক কারাগারের চাবি গ্রহণ ]
তরুণ স। এখন চাবিতো পাওয়া গেল, কিন্তু কোন দিকে দরজা। তাই যে জানি না। [ ছিদ্রমুখ দিয়া উচ্চকণ্ঠে ] ও ভাই বন্দী যদি উপরে উঠবার পথ জান, তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এস। আমি দরজার চাবি পেয়েছি দরজা কোথায় বলে দাও। [ বৃদ্ধ সন্ন্যাসীর প্রতি ] কৈ কেউতো সাড়া দেয়না। চলুন ভাল করে দেখি।

[ উভয়ের প্রস্থান ও কিয়ৎক্ষণ পরে বন্দী সহ পুনঃ প্রবেশ।
চক্ষু আলোক সহ্য করিতে পারিতেছে না, এই ভাবে বন্দী
কর্ত্তৃক বারবার চক্ষু আবরণ ]

বন্দী। আপনারা কে?
বৃদ্ধ স। আমরা দুটি সন্ন্যাসী

বন্দী। আপনার পুরুষ কি নারী? [সন্দিগ্ধভাবে সন্ন্যাসীদের মুখাবলোকন ]
বৃদ্ধ স। এমন প্রশ্ন কেন? [ গুম্ফ ও শ্মশ্র নির্দেশ করিয়া] এসব কি দেখ্‌চেন?
বন্দী। উনি কতকটা নারীর আকৃতি নিয়ে এসেছেন। আমি নারীকে বিশ্বাস করিনা-ছলনাই তার স্বভাব।
তরুণ স। আপনি খল প্রকৃতির সহিত অধিক পরিচিত।
বৃদ্ধ স। আকৃতি এক হলেই কি প্রকৃতি এক হয়?
বন্দী। আমি নারীকে বিশ্বাস করিনা।
তরুণ স। আমরাও করিনা। নইলে আর সন্ন্যাসী হই?
বন্দী। আপনারা আমাকে উদ্ধার কর্‌লেন কেন?
বৃদ্ধ স। রাজ্যরক্ষার জন্য আপনার আবশ্যক। বীরেরা সব যুদ্ধে আহত ও নিহত, রাজা ও রাজ্য বিপন্ন।
বন্দী। রাজা স্বয়ং আমাকে কারাবদ্ধ করেছেন।
তরুণ স। তাঁর পূর্ব্বের স্নেহ ও অনুগ্রহ স্মরণ করে দেশের দুর্গতি নিবারণ করতে অগ্রসর হউন। এখন অভিমানের সময় নয়, নিজের ক্ষতির প্রতিশোধও নেবার সময় নয়। নিজের অতীত ভবিষ্যৎ ভুলে কেবল বর্ত্তমান বিপদটা ভাবুন। আজ যেখানে হাজার লোক মর্‌ছে, সেখানে আপনাকে গিয়ে বুক পেতে দাঁড়াতে হবে।
বন্দী। আপনারা আমাকে মুক্তি দিয়ে এই প্রহরীকে আর দুর্গরক্ষক সামন্তরাজকে বিপন্ন করলেন।

তরুণ স। সেনাপতি, সহস্র বীরপুরুধ যুদ্ধে মরছে, ঘরের কোণের একটি দুটি প্রাণের মূল্য তার চেয়ে কি বেশী? সময় বিশেষে অনেকের জন্য একজনকে নষ্ট কর্‌তে হয়; নিজের প্রাণতো তুচ্ছ করতেই হয়, দয়াধর্ম্ম হতেও ভ্রষ্ট হতে হয়। উপায় নাই। অবস্থা ভেদে ধম্মের ব্যবস্থা।
বন্দী। কিন্তু আমি মহারাজের আদেশে বন্দী। মহারাজকে অনেক মিনতি করে বলেছিলাম-যুদ্ধে যেতে দিন, তারপর যা হয় শাস্তি দেবেন। মহারাজের আদেশ হল-‘কারাগারে যাও’।
তরুণ স। রাজা যায়, রাজার আদেশ কে রক্ষা কর্‌বে? আপনার স্বদেশী সৈন্যেরা বিদ্রোহী হয়েছে, মহারাজ বা তাদের হাতেই যান।
বন্দী। আমি তাঁর ভৃত্য তাঁর আদেশ লঙ্ঘন করে
বৃদ্ধ স। তাঁকে রক্ষা করা আপনার কর্ত্তব্য।
তরুণ স। গুরুজী, সেনাপতি বহুকাল অল্পাহারে আছেন-বড়ই দুর্ব্বল। আগে এঁকে কিছু বলকারক আহার ও পানীয় দিয়ে তার পরে তর্কবিতর্ক করলে ভাল হয়। আর এ স্থান হতে শীঘ্র সরে পড়া ভাল। প্রহরী জেগে উঠলেই বিপদ।
বন্দী। আমি মুক্ত হয়ে যাব, কিন্তু এ লোকটা আমার জন্য বিপদে পড়বে—মহারাজ জানবার আগে এর প্রভু এর প্রাণদণ্ড কর্‌বেন। আমি প্রত্যহ এর হাতে ছাতু আর লবণ আর জল খেয়েছি বেঁচে থেকে একদিন আপনার নির্দ্দোষিতা প্রমাণ কর্‌ব এই আশাতেই এই অখাদ্য খেয়ে, অস্থানে পড়ে আছি। আজ কারাগারের বাইরে প্রথম পা ফেলেই নিমকহারামি করতে পারিনা।

তরুণ স। হা রাম! হা রাম!—মশাই এমন সময়েও আপনি এত কথা ভাবেন। ধন্য আপনার ধর্ম্মজ্ঞান!
বন্দী। [স্বাগত] এ স্বর যে আমার পরিচিত মনে হয়। [প্রকাশ্যে] কে তুমি—তুমি কে?
বৃদ্ধ স। এটি আমার শিষ্য। এ অঞ্চলের লোক নয়, তাই কথাবার্ত্তা একটু কেমন কেমন।
তরুণ স। আমি বলি মশাই, আপনি যান—আমি আপনার ধর্ম্মরক্ষা করুক—এই গুরুর চরণ ছুঁয়ে ধর্ম্মতঃ প্রতিজ্ঞ, কচ্চি—নিশ্চিন্ত হয়ে যান।
বন্দী। তুমি কি কর্‌বে?
তরুণ স। মশাই, আমি আপনার হয়ে এই গুহার মধ্যে নির্জ্জনে ধ্যান ধারণা করব। আমরা সন্ন্যাসী, একটু ছাতু আর জল হলেই ঢের—সবদিন তারও দরকার নেই। বিল্লপত্রের রস আর বটের আঠা খেয়ে কত সন্ন্যাসী বেঁচে থাকে।
বন্দী। তুমি জাননা। কারাগারের নির্জ্জনতা আর গিরিগুহার নির্জ্জনতা এক নয়।
তরুণ স। আমাদের সকল রকমই জানা আছে। মন যদি মুক্ত থাকে তার কারাগারও যেমন রাজপথও তেমন। আপনার কারাগার আমার মুক্ত আকাশ। এখন যান। সম্প্রতি এই পুঁটলীটির কাপড়গুলি পরে নিন, আপনার চাদরখানা আমাকে দিয়ে যান। যান—নমস্কার। গুরুদেব প্রণাম।
বন্দী। কিন্তু চিরদিন এই অন্ধকারাগারে—

তরুণ স। চিরদিন নয়। আমরা সন্ন্যাসী-কামচার। ইচ্ছা হলে কোথায় না যেতে পারি? আপনি নিশ্চিন্ত হউন। গুরুদেব একে গন্তব্য স্থানে পৌছিয়ে দেবেন।
বৃদ্ধ সন্ন্যাসী। তোমার বন্দীর স্থান অধিকার করাই অভিপ্রায়?
তরুণ সী। তা বইকি? প্রণাম ঠাকুর-পদধূলি দিন। [প্রণাম পুর্ব্বক পদধূলি গ্রহণ।
বৃদ্ধ স। ভগবান তোমায় রক্ষা করুন।
বন্দী। ভাই সন্ন্যাসী তুমি আমাকে মুক্তি দিলে শুধু তাই নয়। আমাকে কলঙ্ক মৃত্যু থেকে নবজীবনের পথে দাঁড় করিয়ে দিলে। আমি মহারাজাধিরাজের কাজে চললাম। যদি জয়ী হয়ে প্রাণ নিয়ে ফিরি, প্রভু স্বয়ং
তরুণ স। (ভীতিকণ্ঠে) আর দাঁড়াবেন না। যান-যান!

[বন্দীসহ বৃদ্ধ সন্ন্যাসীর প্রস্থান কারাগারের দ্বার ঠেলিয়া তরুণ সন্ন্যাসী প্রবেশোন্মুখ। দ্বার ঠেলার শব্দে প্রহরীর নিদ্রা ভঙ্গ।]

প্রহরী। [গা মোড়া দিয়া] আ-আ -এ-একি? আমি কি ঘুমুলাম নাকি? দরজা খোলা-মাটিতে চাবি পড়ে-বন্দী পালাল নাকি? সন্ন্যাসী বেটার ফাঁকি দিলে বুঝি?—সোনারূপার স্বপ্ন-না। এই তো সোনার চন্দ্রহার-ভিতরে গেল নাকি? [ উঠিয়া দরজার নিকটে আসিয়া ] তুমি কে হে?
তরুণ স। আমি বন্দী। তুমি ঘুমের ঘোরে কি আওড়াচ্ছিলে আমাকে একেবারে টেনে বার করেছ। তুমি বল্লে বন্দী কোথায়-বন্দী?

প্রহরী। মন্তরটা তো আমাকে শেখাবে বলে কি খাওয়ালে-সেটা ভণ্ডামি নাকি?—না আমি স্বপ্নই দেখলাম।
তরুণ স। ভাই তোমার কোমরে ওটা কি চক্‌ চক্‌ কছে?
প্রহরী। এটাতো ঠিক আছে-এ আমার অনেক কালের, ঠাকুর্দ্দার কালের একটা জিনিস, রাজার কাছে বকশিষ পাওয়া। বুঝলে কিনা, আমার বাপের বাপের তারও বাপের পাওয়া [ বস্ত্রাভ্যন্তরে গোপন ] কিন্তু সন্ন্যাসী দুটো গেল কোথায়? কোথায় গেল কিছু বলতে পার? আমায় মন্তর দিয়ে গেল ন॥
তরুণ স। তারা হয়তো দিয়েছে, তুমি ঘুমের ঘোরে হারিয়ে ফেলেছ।
প্রহরী। তাঁদের আবার পাই কোথায়?
তরুণ স। কোথায় উড়ে গেছে। মন্ত্রের জোরে ওরা পাখী হয়ে ওড়ে, মাছ হয়ে সাঁতার কাটে, ঘোড়া হয়ে ছোটে।
প্রহরী। কোথায় গিয়ে ঘুমোয় তা বলতে পার?
তরুণ স। না ভাই, তাতে। পারিনা। কিন্তু তুমি আমায় এখন কয়েদখানার পথ দেখিয়ে নিয়ে চল।
গান।

অন্ধকারে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলরে ভাই
মঠের খবর জানি, কিন্তু পথের সন্ধান নাই।
মাঠের পারে মঠের মাঝে, নিয়ে চলরে ভাই।
উচ্চ চূড়ায় নিশান উড়ে,  ভিতটি নাকি পাহাড় জুড়ে
যাবার পথ নয়কো সোজা আঁকাই বাকাই।
পথ যে জানিস্ চল্‌রে আগে সামনে সোনার চূড়া জাগে।
জল জঙ্গল মাঠ গোবাট সব পেরিয়ে যাই।

প্রহরী। বেশতো গলা তোমার। ছাতুজল খেয়ে আজও গলার আওয়াজ একেবারে বসে যায়নি। আর একটা গান গাওনা ভাই।
সন্ন্যাসীর গান

আরতো আমার এ জীবনে পাওনা কিছু নাই
বাঁচা গেল বাঁচা গেল গো।
ভিতর বাহির ঘুচল ভেদ, সকল বাঁধন হল ছেদ,
সুখের তরে নাইকো খেদ, দুঃখের দাহ নাই,
সাধ মিটেছে, ঘুচে গেছে সকল বালাই,
বাঁচা গেল বাঁচা গেল গো।