সিরাজদ্দৌলা (অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়)/বাল্য-লীলা

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ।

বাল্যলীলা।

রোমক-সভ্যতার তিরোভাবে ইউরোপখণ্ড অন্ধকারে ঢাকিয়া পড়িয়াছিল। শিল্প বিজ্ঞানের অভাবে, শিক্ষাদীক্ষার দুর্দ্দশায়, ইউরোপীয়গণ এক প্রকার অসভ্য বর্ব্বর হইয়া উঠিয়াছিলেন। মধ্যযুগের অবসানে আবার ইউরোপের সৌভাগ্য-সূর্য্য উদিত হইল, শিক্ষার জ্যোতিতে আবার চারিদিক উজ্জ্বল হইয়া উঠিল, উৎসাহ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার তীব্র তাড়নায় ধনরত্নের সন্ধানে লোকে দেশে দেশে ছুটিতে আরম্ভ করিল; পুরাতন গ্রীক ও রোমক গ্রন্থাবলীর জরাজীর্ণ কীটদষ্ট দুই এক পাতা যে যেখানে কুড়াইয়া পাইল, তাহাই লোকে আগ্রহের সহিত অধ্যয়ন করিতে নিযুক্ত হইল। এইরূপে কালক্রমে ভারতবর্ষের নাম ইউরোপে প্রচারিত হইয়া পড়িল সেকালে “স্বর্ণখনি” বলিয়া ভারতবর্ষের সুখ্যাতি ছিল; অধ্যবসায়ী ইউরোপীয়গণ সেই স্বর্ণখনি হস্তগত করিবার আশায় নানা পথে সমুদ্র-যাত্রা করিলেন এবং অধ্যবসায়গুণে কালক্রমে ভারতবর্যের সন্ধানলাভ করিলেন। দলে দলে। ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গগণ ভারতবর্ষে পদার্পণ করিতে লাগিলেন; কিন্তু সেই স্বর্ণখনি সহসা হস্তগত করিবার সেরূপ সম্ভাবনা না দেখিয়া[১] তাহার ধনরত্ন কুক্ষিগত করিবার আশায় দেশে দেশে বাণিজ্যালয় খুলিয়া, পণ্যদ্রব্য সাজাইয়া, ডাক হাঁক আরম্ভ করিলেন। তাঁহাদের পণ্যদ্রব্য কতকগুলি কাচের পুতুল,—এদেশের লোক তাহাতে ভুলিল না। ইংরাজ বণিক গ্রামে গ্রামে সেই সকল পণ্যদ্রব্য বহিয়া “বহুত আচ্ছা মাল যাতা হ্যায়” বলিয়া অনেক চীৎকার করিলেন, কৌতুক দেখিবার জন্য কেহ কেহ বোঝা নামাইতে বলিল, কিন্তু একজনেও ‘সওদা' করিল না![২] সওদাগরেরা অবশেষে কুঠি খুলিয়া এ দেশের কার্পাস এবং পট্টবস্ত্র বিলাতে রপ্তানি করিতে আরম্ভ করিলেন, কারবার বেশ জাঁকিয়া উঠিল, দেশের লোকের সঙ্গেও একটু আধটু করিয়া আত্মীয়তার সূত্রপাত হইল।

 মুসলমান নবাব বিদেশীয় বণিকের সৌভাগ্য-গর্ব্বে সেরূপ আনন্দ অনুভব করিলেন না। ইংরাজের কলিকাতা, গোবিন্দপুর ও সুতানটী নামক তিনখানি গণ্ডগ্রাম লইয়া ছোটখাট একটা দুর্গ ও বাণিজ্যালয় নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন; দিল্লীর নাম-সর্ব্বস্ব বাদশাহের “ফরমাণ” দেখাইয়া জলে স্থলে বিনাশুল্কে বাণিজ্য করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন, এবং আরও ৩৮ খানি গ্রাম ক্রয় করিবার ক্ষমতা-পত্র আনাইয়াছিলেন।[৩] নবাব জমাদারদিগকে শাসন করিয়া দিলেন, কেহ ইংরাজের নিকট সুচ্যগ্র ভূমিও বিক্রয় করিতে সাহস পাইলেন না;[৪] অগত্যা ইংরাজ বণিক দেশে দেশে বাণিজ্য করিয়া বেড়াইতে লাগিলেন।

 দিল্লীর বাদশাহের বাহুবল ক্রমেই টুটিয়া আসিতেছিল। অযোধ্যায় এবং দাক্ষিণাত্যে স্বাধীন মুসলমান-রাজ্য গঠিত হইতেছিল। শিবাজীর পদানুসরণ করিয়া মহারাষ্ট্র-সেনা হিন্দুসাম্রাজ্য বিস্তৃত করিতেছিল; দেখাদেখি বাঙ্গালার নবাবেরাও বাদশাহকে রাজকর প্রদানের আবশ্যকতা অস্বীকার করিতেছিলেন। বাঙ্গালাদেশ প্রকৃত প্রস্তাবে স্বাধীন,— কেবল কাগজপত্রে দিল্লীর অধীন বলিয়া পরিচিত হইতেছিল।

 এই সময়ে সরফরাজ খাঁ বাঙ্গালার নবাব। তিনি অল্পদিনের মধ্যেই লোকের বিরাগভাজন হইয়া উঠিলেন। ইন্দ্রিয়ালালসাই তাঁহর কাল হইল! তিনি মোহান্ধ হইয়া একদিন জগৎশেঠের পুত্রবধূকে ধরিয়া আনিলেন; দেশের লোকে একেবারে শিহরিয়া উঠিল[৫]! রাজা ও জমীদারবর্গ সকলে মিলিয়া সরফরাজকে সমুচিত শিক্ষা দিবার জন্য মন্ত্রণা করিতে লাগিলেন।

 সেকালের জমীদারদিগের ক্ষমতা ছিল, পদগৌরব ছিল, দিল্লীর দরবারে পরিচয় ছিল। তাঁহারা দশজনে মিলিয়া বাদশাহকে ধরিয়া বসিালে ইচ্ছামত লোককে নবাব করিতে পারিতেন। সরফরাজের অত্যাচারে মর্ম্মপীড়িত হইয়া সকলে মিলিয়া সেই চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইলেন; কিছুদিনের মধ্যেই বাদশাহের অনুমতি আসিল।

 সরফরাজের পিতা সুজাখাঁর নবাবী আমলে হাজি আহমদ ও আলিবর্দ্দী খাঁ নামে দুইজন সুশিক্ষিত প্রতিভাসম্পন্ন মুসলমানের বড়ই প্রাধান্য হইয়াছিল। তাহারা দুই সহোদর সুজা খাঁর দক্ষিণবাহু হইয়া প্রথমে মুর্শিদাবাদের মন্ত্রভবনে, পরে উড়িষ্যা ও পাটনার রাজধানীতে রাজকার্য্যে নিযুক্ত হইয়াছিলেন। আলিবর্দী পাটনার নবাব বলিয়া পরিচিত ছিলেন; লোকে তাঁহাকেই সিংহাসনে বসাইবার জন্য চেষ্টা করিতেছিল। সরফরাজ সেই গুপ্তমন্ত্রণার সংবাদ পাইয়া পাটনা অভিমুখে চলিলেন, আলিবর্দ্দীও বাদশাহের ফরমাণ পাইয়া মুর্শিদাবাদ অভিমুখে যাত্রা করিলেন। পথিমধ্যে গিরিয়ার প্রান্তরে উভয় নবাবের যুদ্ধ হইল। সরফরাজ নিহত হইলেন, আলিবন্দী সিংহাসনে আরোহণ করিলেন।

 আলিবর্দ্দী হিন্দু মুসলমানের প্রিয়পাত্র, শুদ্ধ, শান্ত, উৎসাহশীল, ন্যায়পরায়ণ, ধর্ম্মভীরু নরপতি বলিয়া পরিচিত। তিনি হিন্দুদিগকে সবিশেষ শ্রদ্ধা করিতেন; লোকে বলে তিনি যখন পাটনার নবাব, তখনই একজন হিন্দু সাধুপুরুষ নাকি তাঁহার সিংহাসন লাভের কথা গণনা করিয়া দিয়াছিলেন। মূল কাহিনী যাহাই হউক, আলিবর্দী যে বাপুদেব শাস্ত্রী ও তাহার শিষ্য নন্দকুমারকে সবিশেষ ভক্তি শ্রদ্ধা করিতেন। এরূপ জনরব এখনও মধ্যে মধ্যে শুনিতে পাওয়া যায়।[৬]

 আলিবর্দ্দীর তিনটিমাত্র কন্যা, একটিও পুত্র সন্তান নাই[৭]। তিনিও নিজ ভ্রাতা হাজি আহমদের তিন পুত্র নওয়াজেস্ মোহাম্মদ, সাইয়েদ আহমদ এবং জয়েনউদ্দীনের সঙ্গে আপনি তিন কন্যার বিবাহ দিয়াছিলেন; এবং সিংহাসন লাভ করিলে, যথাকালে তিন জামাতাকে তিন প্রদেশের শাসনভার প্রদান করিয়াছিলেন। তদনুসারে জয়েনউদ্দীন পাটনায়, সাইয়েদ আহমদ পূর্ণিয়ায় এবং নোয়াজেস মোহাম্মদ ঢাকায় থাকিয়া নবাবী করিতেন।

 আলিবন্দী যে সময়ে পাটনার শাসনভার প্রাপ্ত হন, সেই শুভ সময়ে; তাহার কন্যাস আমিনাবেগমের গর্ভে মিরজা মোহাম্মদ নামে তাহার এক দৌহিত্র ভূমিষ্ঠ হইয়াছিল। আলিবর্দ্দী সেই শুভদিনের আনন্দ কোলাহলের মধ্যে নবজাত শিশুকে পোষ্যপুত্ররূপে গ্রহণ করিয়াছিলেন। আজ যে বালক, কা’ল সে যুবা হয়;—আজ সূতিকা-গৃহের ধাত্রীক্রোড় যাহার একমাত্র ক্রীড়াভূমি, কালে সমগ্র পৃথিবীও তাঁহার জন্য যথেষ্ট বিহারক্ষেত্র দেখাইয়া দিতে পারে না। আজ যে আলিবর্দ্দী স্নেহ পুত্তল পোষাপুল, সময়ে সেই বালকই যে বাঙ্গালা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব সিরাজদৌলানামে জগতের নিকট চিরপরিচিত হইবে, তাহা কে জানিত।

 বাল্যকাল বড়ই সুখের কাল; কিন্তু বাল্যকালই আবার ভবিষ্যতের অনেক দুঃখযন্ত্রণার মূল! যেভাবে, যাহার সহবাসে, যেরূপ শাসনে বাল্যজীবন অতিবাহিত হয়, পরজীবনে তাহার দাগ একেবারে বিলীন হয় না। মানব চরিত্র বুঝিতে হইলে, লোকে সেই জন্য বাল্যজীবনের আলোচনা করিয়া থাকে;—আমরা ও বালক সিরাজদ্দৌলার বাল্যজীবনের আলোচনা করিব।

 সিরাজদ্দৌলা মাতামহের স্নেহ পুত্তল, সেই মাতামহ আবার বাঙ্গালা, বিহার, উড়িষ্যার প্রবল প্রতাপান্বিত নবাব;— সুতরাং বালক সিরাজদৌলা যখন যাহা ধরিয়া বসেন, “সাগর ছেঁচিয়া সাত রাজার ধন এক মাণিক” আনিতে হইলেও, মাতামহ তৎক্ষণাৎ তাহা আনিয়া হাজির করেন! তাড়না নাই,—স্নেহ-সম্ভাষণ আছে; শাসন নাই,—আবদার পূরণটুকু পূর্ণমাত্রায় চলিতেছে ইহাতে আবদার দিন দিনই বাড়িয়া চলিতে লাগিল। আবদার পূরণ করিয়া শিশুর মুখে সাময়িক উৎফুল্লতা দেখিতে কোন্ মাতামহের না ইচ্ছা হয়? তাহাতে আবার আলিবর্দ্দীর পুত্রসন্তান নাই।

 শিশু যাহা ধরিয়া মাসে, তাহ প্রায়ই অকিঞ্চিৎকর অথবা নিতান্ত হাস্যস্পদ। সে কখন হাতী চায়, কখন ঘোড়া চায়, কখন বা একেবারে চাঁদখানা হাতের মধ্যে ধরিতে চায়! গরীব লোকে আর কি করিবে? শোলার হাতী, মাটির ঘোড়া কিনিয়া দেয়, এবং “আয় আয় চাঁদ আয়” বলিয়া আকাশের চাঁদকে সাদর-সম্ভাষণে- আবাহন করে। বড় লোকে সত্য সত্যই হাতী ঘোড়া কিনিয়া দেয়, চাঁদ ধরিবার জন্য লোক লস্করের উপর হুকুম জারি করে;—শিশু ভবিষ্যতে চাঁদ হাতে পাইবার আশায় আশ্বস্ত হয়। এ সকলই অতি তুচ্ছ বিষয়; কিন্তু এই সকল তুচ্ছ বিষয় হইতেই শিশুর একটি প্রবল কুশিক্ষার আরম্ভ হয় এবং একটি প্রয়োজনীয় সুশিক্ষার অভাব জন্মে। সে প্রবৃত্তি দমন করিতে শিখে না; ইচ্ছামাত্রে বাঞ্ছিত বস্তু হাতের কাছে না পাইলে ধৈর্য্যধারণ করিতে পারে না। মাতামহের আদরে সিরাজের তরল হৃদয়ে এইরূপে অনেক কুশিক্ষার বীজ পতিত হইতে আরম্ভ করিল। বালক সিরাজদ্দৌলা প্রবৃত্তি-দমনের শিক্ষা পাইলেন না; বাল্যকাল হইতেই মনোবৃত্তির বেগ দুর্দ্দমনীয় হইয়া উঠিতে লাগিল।

 এই বালক যে একদিন বাঙ্গালা, বিহার, উড়িষ্যার “মসনদে” উপবেশন করিবে, সে কথা লোকের কাছে বেশি দিন গোপন রহিল না। দাসদাসী এবং আত্মীয় বন্ধুদিগের শিষ্টাচারে এবং কথোপকথনে বালক সিরাজদ্দৌলাও বুঝলেন যে, তিনি একটি ক্ষুদ্র নবাব! শৈশব জীবনেই বিলাসের বীজ পতিত হইল; পার্শ্বচরেরা প্রাণপণ যত্নে তাহাকে অঙ্কুরিত ও ফলফুলে সুশোভিত করিয়া তুলিতে লাগিলেন।

 রাজপ্রাসাদের আশে পাশে যাহাদের গতিবিধি, তাহারা একেবারে স্বার্থশূন্য নহে। কেহ পরের খরচে বাবুগিরি চালাইবার আশায়, কেহবা পরের ঘাড়ে সকল দোষ চাপাইয়া ডুব্ দিয়া জল খাইবার ভরসায়, রাজকুমারদিগের সহবাসে মিলিত হইতে আরম্ভ করে। আলিবর্দ্দীর ধর্ম্মজীবন এই শ্রেণীর লোকের নিকট চক্ষুঃশূল হইয়া উঠিয়াছিল। আলিবর্দ্দী কর্ত্তব্য-পরায়ণ;—কর্ত্তব্য পালনে ধর্ম্ম আছে, পুণ্য আছে, যশোগৌরব আছে; কিন্তু নিয়ত কর্তব্যপালনে আমোদ কোথায়! নবাব হইয়াও যদি কেবল একটিমাত্র মহিষী এবং রাজ্যচিন্তা লইয়াই পরিতৃপ্ত থাকিবেন, তবে আলিবর্দ্দী নবাব হইলেন কেন? আলিবর্দ্দী উন্নত জীবন যাঁহাদের নিকট এই সকল কারণে নিতান্ত উপহাসের বিষয় হইয়া উঠিয়াছিল, তাঁহারা পছন্দমত নবাব গড়িবার আশায় গায়ে পড়িয়া সিরাজের হিতাকাঙ্ক্ষায় নিযুক্ত হইতে লাগিলেন।

 বুড়া বয়সের অনেক গুণ; কিন্তু একটি প্রধান দোষ এই যে, বড় স্নেহপ্রবণ; সে স্নেহ-প্রবণতা প্রায়ই অন্ধতার নামান্তর মাত্র। স্নেহ পরায়ণ বুড়া স্বামী দ্বিতীয়পক্ষের তরুণী ভার্য্যার মেজাজ একেবারেই বিগড়াইয়া দেন; কেহ চোখে আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া দিলেও একটু মুচকি হাসি হাসিয়া সে কথা একেবারেই উড়াইয়া দেন;—কালে সেই স্বহস্ত-রোপিত বিষবৃক্ষে সুধাফল ফলে না! বুড়া মাতামহ নাতি নাতনীর অসঙ্গত আবদারেও সহায়তা করিয়া তাহাদের পরকাল মাটি করেন; কেহ সে কথা তুলিলে, “আহা! উহারা সেদিনের দুধের ছেলে, এখনই কি শাসন করিবার সময় হইয়াছে?” বলিয়া কথাটা একেবারেই পাড়িতে দেন না; বুড়া মাতামহের কাছে নাতি নাতনীরা চিরকালই “সেদিনের দুধের ছেলে” থাকিয়া যায়, কখনই তাহাদিগকে শাসন করিবার সময় উপস্থিত হয় না। আলিবর্দ্দীর বুড়া বয়সের অসঙ্গত স্নেহপ্রবণতায় সিরাজদ্দৌলার শাসনকার্যের সময় হইয়া উঠিল না!

 বাল্য ফুরাইল, কৈশোর আসিল; কৈশোরও ফুরাইল, যৌবন আসিল;—কেবল শাসনের সময় আসিলনা! সিরাজ ক্রমে ক্রমে কুক্রিয়াসক্ত যুবকদলের সঙ্গে মিলিত হইয়া তাঁহাদের দলপতি হইয়া উঠিলেন।

  1. “The people of Hindoostan were not timid savages capable of being robbed or swindled by whoever chose to try; they were a great and intelligent race, acquainted with commerce and art."—Torren's Empire in Asia p. 10.
  2. Dow's Hindoostan.
  3. The Emperor Ferrokhsere's Phirmaund for Bengal, Bahar and Orixa A. D. 1717
  4. Stewart's History of Bengal.
  5. Orme's Indostan vol. II. 30. Hunter's Statistical Accounts. of Bengal—Moorshidabad.
  6. মহারাজা নন্দকুমার-শ্রীচণ্ডীচরণ সেন প্রণীত।
  7. ইতিহাস-বিমুখ বাঙ্গালাদেশে এই অল্প দিদৈর মধ্যেই নবাব আলিবর্দ্দীর কয়টি কন্যা-তাহা লইয়া বিবাদের ভিত্তিমূল স্থাপিত হইয়াছে। মুর্শিদাবাদের ইতিহাস লিখিবার জন্য বিবরণ সংগ্রহ করিবার সময়ে বহরমপুর কলেজের শিক্ষক শ্রীযুক্ত বাবু কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় যাহা জানিয়াছেন, তাহাতে তাঁহার ধারণা এই যে, ঘসেটি ও আমিনাবেগম নামে আলিবর্দ্দীর দুইটী মাত্র কন্যা ছিল। ইতিহাস-লেখক অর্ম্মি বলেন “না, নবাব আলীবর্দ্দীর মোটেই এক কন্যা”। মুত্রক্ষরীণ লেখক সাইয়েদ গোলাম হোসেন আলীবর্দ্দীর আত্মীয় এবং সমসাময়িক; তিনি তিন কন্যার কথাই লিখিয়া গিয়াছেন এবং আনুসারে ইতিহাসলেখক মিল সাহেবও তিন কন্যার উল্লেখ করিয়া টীকায় লিখিয়াছেন-Orme, ii. 34, says that Aliverdi had only one daughter. The author othe Seer Mutakherin, who was his near relation, says he had three, i, 304 - Mill's History of British India, Vol. III. কিলীপ্রসন্ন বাবু সম্প্রতি যে বাংলার ইতিহাস প্রকাশিত করিয়াছেন, তাহাতে টীকাস্থলে আলিবর্দ্দীর তিন কন্যা স্বীকার করিয়াছেন। ১৪৩ পৃষ্ঠার ৩য় টীকায় তাহা এক্ষণে স্পষ্টাক্ষরে স্বীকৃত হইয়াছে।