পরিশিষ্ট

 আমাদের পূর্ব্বপরিচিত বন্ধুদ্বয় রামচাঁদ ও শ্যামচাঁদ ইতিপূর্ব্বেই পলাইয়া নলডাঙ্গায় বাস করিতেছিলেন। সেখানে একখানি আটচালায় বসিয়া কথোপকথন করিতেছেন।

 রামচাদ। কেমন হে ভায়া! মহম্মদপুরের খবরটা শুনেছ?

 শ্যামচাঁদ। আজ্ঞে হাঁ—সে ত জানাই ছিল। গড় টড় সব মুসলমানে দখল করে লুঠপাঠ করে নিয়েছে।

 রাম। রাজা রাণীর কি হ’লো, কিছু ঠিক্ খবর রাখ?

 শ্যাম। শোনা যাচ্চে, তাঁদের না কি বেঁধে মুর্শিদাবাদ চালান দিয়েছে। সেখানে না কি তাঁদের শূলে দিয়েছে।

 রাম। আমিও শুনেছি তাই বটে, তবে কি না শুন্‌তে পাই যে, তাঁরা পথে বিষ খেয়ে মরেছেন। তার পর মড়া দুটো নিয়ে গিয়ে বেটারা শূলে চড়িয়ে দিয়েছে।

 শ্যাম। কত লোকেই কত রকম বলে! আবার কেউ কেউ বলে, রাজা রাণী নাকি ধরা পড়ে নাই—সেই দেবতা এসে তাদের বার করে নিয়ে গিয়েছেন। তার পর নেড়ে বেটারা জাল রাজা রাণী সাজিয়ে মুর্শিদাবাদে নিয়ে শুলে দিয়েছে।

 রাম। তুমিও যেমন! ও সব হিন্দুদের রচা কথা, উপন্যাস মাত্র।

 শ্যাম। তা এটা উপন্যাস, না ওটা উপন্যাস, তার ঠিক কি? ওটা না হয় মুসলমানের রচা। তা যাক্ গিয়ে—আমরা আদার ব্যাপারী—জাহাজের খবরে কাজ কি? আপনার আপনার প্রাণ নিয়ে যে বেঁচে এয়েছি, এই ঢের। এখন তামাকটা ঢেলে সাজ দেখি।

 রামচাঁদ ও শ্যামচাঁদ তামাক ঢালিয়া সাজিয়া খাইতে থাকুক। আমরা ততক্ষণ গ্রন্থ সমাপন করি।