সুকুমার সমগ্র রচনাবলী (প্রথম খণ্ড)/দেশ-বিদেশের গল্প/তিন বন্ধু

পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর সম্পাদিত
(পৃ. ১১৪-১১৮)

তিন বন্ধু

 এক ছিলেন রাজা—তাঁর ছিল এক ছেলে। রাজামশাই বড্ড বুড়ো হয়েছেন; তাই তিনি তাঁর ছেলেকে ডেকে বললেন, “দেখ বাবা, আমি তো বুড়ো হয়েছি, কাজকর্ম আর ভালো ক’রে দেখতে পারি না। এখন তুমি আমার কাজকর্ম বুঝে নেও, আর একটি সন্দের লক্ষ্মী বৌ নিয়ে এসো।” এই বলে তিনি একটা সোনার চাবি রাজপুত্রের হাতে দিলেন, আর বললেন, “রাজবাড়ির ছাতের দক্ষিণ কোনার ঘরটিকে এই চাবি দিয়ে খুলে, তার ভেতরে গিয়ে যে সুন্দরী রাজকন্যাদের ছবি দেখবে, তাদের মধ্যে থেকে একটিকে পছন্দ করে আমায় এসে বলবে।” রাজপুত্র তখনই সেই ঘরটিতে গেলেন। সেখানে গিয়ে তিনি একেবারে হাঁ করে রইলেন! ঘরটি গোল আর তার ছাত ঠিক আকাশের মতো নীল; তার ওপর সোনারুপোর তারা ঝলমল করছে। ঘরের চারিদিকে সোনা দিয়ে বাঁধানো বারোটি জানালা; তার প্রত্যেকটির ওপর চমৎকার পোশাকপরা একটি সুন্দরী রাজকন্যার ছবি আঁকা। তার মধ্যে কে যে বেশি সুন্দরী তাই সে আর ঠিক করতে পারছে না। এমন সময় সে দেখলো যে একটি জানালা পর্দা দিয়ে ঢাকা। তাড়াতাড়ি সে পর্দা উঠিয়ে দেখে কি—একটি অতি সুন্দরী রাজকন্যার ছবি। তার পোশাক কিন্তু একেবারে সাদাসিধে আর মাথায় মুক্তার মুকুট। বেচারার কিন্তু বড় বিষণ্ণ চেহারা; যেন তার কত দুঃখ।

 সেই রাজকন্যাকেই সে পছন্দ করলো, আর দেখতে দেখতে অন্য সব ছবি কোথায় মিলিয়ে গেল। রাজপুত্র বড়ই আশ্চর্য হয়ে, তখনই তার বাবাকে সব কথা জানাল। রাজামশাই তো সব শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন—“সর্বনাশ! এই রাজকন্যাকে যে দুষ্ট জাদুকরে লোহার বাড়িতে আটক করে রেখেছে; যে একে ছাড়াতে যায় সেই যে আর ফেরে না। তোমার কপালে সে কত দুঃখ আছে তা আর কি বলব। এখন তো আর কোন উপায় নেই। পছন্দ যখন করেছ তখন তার খোঁজে যাও।”

 তখনই রাজপুত্র একটা খুব তেজি ঘোড়া নিয়ে রওয়ানা হয়ে পড়লো। অনেক দূর গিয়েছে সে, এমন সময় শুনতে পেল, কে যেন বলছে—“আরে, থামো না! থামো না!” রাজপুত্র অমনি পেছন ফিরে দেখলো যে, এয়া লম্বা একটা লোক তাকে বলছে, “ওহে আমাকে তোমার সঙ্গে নেও, দেখবে তোমার কত কাজ করে দিতে পারি আমি।” রাজপুত্র বলল, “তোমার নাম কি? আর তুমি করতেই-বা পার কি?” সে বলল, “আমার নাম ঢ্যাঙারাম। আমি যত ইচ্ছা লম্বা হতে পারি। ঐ যে তালগাছের আগায় বাবুইয়ের বাসা দেখছ, ওটিকে আমি এখনই পেড়ে দিতে পারি; তাতে আমার গাছে চড়বারও দরকার হবে না।” এই বলে সে দেখতে দেখতে তালগাছের মতো লম্বা হয়ে গেল আর পাখির বাসাটি পেড়ে নিয়েই চট করে আবার বেঁটে হয়ে গেল। রাজপুত্র বলল, “তা তো দেখলাম, কিন্তু ওতে আমার কি সাহায্য হবে? এই বনটা পার হবার রাশটা যদি বলতে পার তবে বুঝবো আমার সাহায্য করলে।” ঢ্যাঙারাম আবার লম্বা হতে লাগলো আর দেখতে দেখতে তালগাছ ছাড়িয়ে কোথায় তার মাথা উঠলো। তারপর চারদিকে তাকিয়ে দেখে বলল, “ঐ যে রাস্তা দেখা যাচ্ছে।” তারপর সে আবার বেঁটে হয়ে, ঘোড়ার লাগাম ধরে পথ দেখিয়ে চলতে লাগলো। খানিকদূর গিয়ে বলল, “ঐ যে আমার বন্ধু যাচ্ছে। ওকে ধরে নিয়ে আসি।” বলেই সে চট করে আকাশের মতো লম্বা হয়ে গেল আর এয়া লম্বা দই পা ফেলে তার বন্ধুর কাছে গিয়ে উপস্থিত হলো। তারপর আর কোন কথাবার্তা না বলে তাকে হাতে ধরে উঠিয়ে নিয়ে রাজপুত্রের কাছে চলে এলো। বন্ধুটির বেশ ষণ্ডামার্কা চেহারা। রাজপুত্র জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার নাম কি? আর কিই-বা করতে পারো তুমি?” লোকটি বলল, “আমি ভোঁদারাম। আমি নিজেকে ফুলিয়ে প্রকাণ্ড বড় হয়ে যেতে পারি। কিন্তু এই বেলা ঘোড়া ছটিয়ে পালাও, নইলে আমি এত তাড়াতাড়ি ফুলে উঠবো যে ভারি বিপদে পড়বে। এই বলেই সে ফুটবলের মতো ফুলতে আরম্ভ করলো। ঢ্যাঙারাম তো আগেই দৌড় দিয়েছে। রাজপুত্রও দেখাদেখি ঘোড়া ছটিয়ে সরে পড়তে লাগলেন। ফুলে ফুলে পাহাড়ের মতো বড় হয়ে ভোঁদারাম হঠাৎ আবার ছোট হতে আরম্ভ করলো; পেটে যত বাতাস ভরেছিল সব ছেড়ে দিতে তার মুখ থেকে এমনি জোরে বাতাস ছুটতে লাগলো যে ঝড়ের বাতাস কোথায় লাগে! তা দেখে রাজপুত্র বলল, “বেশ, এমন লোক সচরাচর মেলে না। তুমি আমাদের সঙ্গে চল।” এই বলে তারা তিনজনে এগুতে লাগল।

 খানিকদূর গিয়ে রাজপুত্র দেখল একটি লোক চোখে পট্টি বেঁধে রাস্তা দিয়ে চলেছে। ঢ্যাঙারাম বলল, “ঐ আমাদের আরেক বন্ধু।” রাজপুত্র সে লোকটিকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কে হে? অমন করে যে চোখ বেঁধে রাস্তা দিয়ে চলেছ, পথ দেখবে কেমন করে?”

 লোকটি বলল, “আমার নাম আগুনচোখ। তোমরা খোলা চোখে যা দেখ, আমি চোখ বেঁধে রাখলেই তা দেখতে পাই। খোলা চোখে দেখলে যত মোটা জিনিসই হোক না কেন, তার এপার-ওপার স্পষ্ট দেখতে পাই। ভালো করে কোন জিনিসের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলে সেটা হয় হাজার টুকরো হয়ে ভেঙে যায়, নাহয় পড়ে ছাই হয়ে যায়।” এই বলেই সে চোখের বাঁধন খুলে সামনের একটা পাহাড়ের দিকে কটমট করে চেয়ে রইলো। দেখতে দেখতে পাহাড়টা ফেটে, ভেঙে চুরমার হয়ে একটা বালির ঢিপি হয়ে গেল, আর তার ভিতর থেকে একতাল সোনা বের হলো। আগুনচোখ সেই সোনার তালটা রাজপুত্রকে দিল।

 রাজপত্র খুব খুশি হয়ে বলল, “দেখ তো সেই রাজকন্যা কি করছেন, কোথায় তিনি আছেন, আর এখান থেকে কত দূর?”

 আগুনচোখ বলল, “ঐ যে তিনি একলা সেই লোহার বাড়িতে বন্ধ হয়ে বসে বসে কাঁদছেন। ওঃ সে যে অনেক লম্বা রাস্তা। এমনি করে ঘোড়ায় চড়ে গেলে যে এক বছরেও সেখানে পৌছতে পারবে না। অবশ্য ঢ্যাঙারাম যদি নিয়ে যায় তবে সন্ধ্যার আগেই সেখানে পৌঁছে যাব।” অমনি ঢ্যাঙারাম আর তিনজনকে কাঁধে নিয়ে রওনা হলো। সন্ধ্যার সময় সেই লোহার বাড়ির দরজায় তারা পৌঁছে দেখল দরজা খোলা রয়েছে। তাই দেখে যেই তারা ভিতরে ঢুকেছে, অমনি দরজা দড়াম করে বন্ধ হয়ে গেল আর তারা সেই বাড়ির মধ্যে বন্দী হয়ে গেল। তখন আর কি করে—তারা এদিকে-ওদিকে ঘুরে ঘুরে সব দেখতে লাগল। চারদিকে অনেক লোকজন, তাদের খুব জমকালো পোশাক, কিন্তু কেউ নড়ে চড়ে না—সব যেন পাথর হয়ে রয়েছে।

 বাড়ির চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে তারা খাবার ঘরে এসে উপস্থিত। সেখানে চারজনের জন্য নানারকম সুন্দর খাবার সাজানো রয়েছে দেখে তারা পেট ভরে খেয়ে নিলো। তারপর তারা শোবার জোগাড় দেখবে বলে উঠতে যাচ্ছে—এমন সময় হঠাৎ দরজা খুলে গেল আর একটা বুড়ো, কুঁজো, বিদঘুটে, এয়া লম্বা, পাকা দাড়িওয়ালা লোক একটি অতি সুন্দর রাজকন্যার হাত ধরে ঘরে ঢুকলো। রাজপুত্রকে দেখেই বুড়ো লোকটা বলল, “বাপুহে, সব জানি আমি! রাজকন্যাকে তো নিতে চাচ্ছ, কিন্তু তিনটি রাত যদি তাকে রক্ষা করতে পারো—তার আগে যদি সে হারিয়ে না যায়—তবেই তাকে পাবে; নইলে এই এতগুলি লোকের মতো তুমিও পাথর হয়ে যাবে।” এই বলে সে রাজকন্যাকে একটা চৌকিতে বসিয়ে দিয়ে চলে গেল।

 রাজপুত্র তো মেয়েটিকে দেখে বড় খুশি। সে তাকে কত কথা জিজ্ঞাসা করে, কিন্তু মেয়েটি কিছুই বলে না—হাসেও না। তারপর যখন রাত বেশি হয়ে এলো তখন ঢ্যাঙারাম লম্বা হয়ে ঘরের চারদিকে ঘিরে রইল; ভোঁদারাম এয়া মোটা হয়ে ফুলে তার পেট দিয়ে দরজার ছেঁদা বন্ধ করে রইল, যাতে একটি ইঁদুরও না ঢুকতে বা পালাতে পারে; আর আগুনচোখ চারদিকে খুব হুঁশিয়ার হয়ে তদ্বির করতে লাগল।

 কিন্তু সকলেই বড় ক্লান্ত হয়েছিল; তাই কিছুক্ষণ পরে সকলেই খুব নাক ডাকিয়ে ঘুমোতে লাগল। ভোরের বেলা রাজপুত্রেরই আগে ঘুম ভেঙে গেল, আর সে দেখল যে রাজকন্যা ঘরে নাই। তখন যে তার দুঃখটা হলো! সে তাড়াতাড়ি আর তিনজনকে জাগিয়ে দিল, আর তখন কি করতে হবে জিজ্ঞাসা করল।

 আগুনচোখ বলল, “ভয় কিসের? ঐ যে আমি তাকে দেখতে পাচ্ছি। এখান থেকে একশো মাইল দুরে একটা বন আছে। সেই বনে একটা আমগাছ আছে; তাতে একটি আম ফলেছে; তারই আঁঠিটি হচ্ছে সেই রাজকন্যা। ঢ্যাঙারাম আমাকে কাঁধে নিয়ে চলুক, আমরা এখনই তাকে আনছি।”

 অমনি ঢ্যাঙারাম আর কথাবার্তা না বলে আগুনচোখকে কাঁধে তুলে নিল, আর দশ মাইল লম্বা একেক পা ফেলে ফেলে মুহূর্তের মধ্যে সেখানে উপস্থিত হল। তারপর আমের আঁঠি আনতে আর কতক্ষণ লাগে!

 সেই আঁঠিটি রাজপত্রের হাতে দিয়ে আগুনচোখ বলল, “এটাকে মাটিতে ছুঁড়ে মারো।” আর রাজপুত্রও কথামত কাজ করামাত্র রাজকন্যা এসে হাজির!

 সূর্য উঠবার একটু পরেই সেই বুড়ো হাসতে হাসতে এসে, দড়াম করে দরজা খুলে ঘরে ঢুকলো; কিন্তু সেখানে রাজকন্যাকে দেখে বেচারা এমন চমকে গেল যে আরেকটু হলেই সে পড়ে যেত। তারপর রাগে গজগজ করতে করতে সে রাজকন্যাকে নিয়ে চলে গেল।

 সেদিন সন্ধ্যায় আবার বুড়ো এসে রাজকন্যাকে রেখে গেল। রাজপুত্র আর তিন বন্ধু সে রাত্রে জেগে থাকবার জন্য খুবই চেষ্টা করেছিল, কিন্তু দুপুর রাত্রের আগেই সকলে ঘুমিয়ে নাক ডাকাতে আরম্ভ করল। ভোরের বেলা রাজপুত্র আগে জেগে যেই দেখলো রাজকন্যা নেই,অমনি অস্থির হয়ে তাড়াতাড়ি তিনবন্ধুকে জাগিয়ে দিয়ে বলল, “আগুনচোখ! শিগ্‌গির দেখ রাজকন্যা কোথায় গেল। সকাল যে হয়ে এল!”

 আগুনচোখ জেগে উঠে চোখ রগড়ে বলল, “এই যে আমি তাকে দেখছি। এখান থেকে দুইশো মাইল দূরে একটা পাহাড় আছে; সেই পাহাড়ের মধ্যিখানে একটা পাথর আছে; সেইটিই হলো রাজকন্যা। ঢ্যাঙারাম যদি আমায় নিয়ে যায় তবে এখনি আমি রাজকন্যাকে আনব।”

 যেমন কথা তেমনি কাজ। ঢ্যাঙারাম তখনই আগুনচোখকে কাঁধে নিয়ে কুড়ি মাইল লম্বা একেক পা ফেলে মুহূর্তের মধ্যে সেখানে হাজির হলো। আগুনচোখ সেই পাহাড়ের দিকে কটমট করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সেই পাহাড়টাকে ফাটিয়ে গুঁড়িয়ে দিল, আর তার ভেতর থেকে সেই পাথরটা বেরিয়ে পড়ল। সেটাকে নিয়ে রাজপুত্রের কাছে দিতেই রাজপুত্র পাথরটা মাটিতে ফেলে দিল, আর রাজকন্যা এসে হাজির হলো!

 সেদিন বুড়ো এসে রাজকন্যাকে দেখে যা চটে গেল, কি আর বলব! দুইহাতে মাথার চুল ছিঁড়তে ছিঁড়তে সে বলল, “আজ রাত্রে দেখব তোর বেশি ক্ষমতা না আমার বেশি ক্ষমতা! হয় তুই মরবি নাহয় আমি মরব।”

 সে রাত্রেও রাজপুত্র আর তিন বন্ধু রাজকন্যাকে পাহারা দিতে লাগল, কিন্তু সেদিনও দুপুর রাতের আগেই সকলে ঘুমিয়ে পড়ল, আর রাজকন্যাও কোথায় জানি হারিয়ে গেল। ভোরের বেলা রাজপুত্র জেগে যেই দেখলো রাজকন্যা নেই, অমনি সে আগুনচোখকে ঠেলা দিয়ে জাগিয়ে দিয়ে বলল, “শিগ্‌গির দেখ, রাজকন্যা কোথায় গেল!”

 আগুনচোখ কিছুক্ষণ চারদিকে তাকিয়ে তারপর বলল, “এবার তাকে দেখেছি! ঐ যে তিনশো মাইল দূরে কালো জলের সাগর আছে, তার মাঝখানে, জলের তলায় একটা শামুক আছে, সেই শামুকের মধ্যে একটা আংটি আছে, সেটিই রাজকন্যা। এখনও চেষ্টা করলে আমি আর ভোঁদারাম ঢ্যাঙারামের ঘাড়ে চড়ে সেখানে গিয়ে রাজকন্যাকে উদ্ধার করে আনতে পারি।”

 এ কথা বলামাত্র ঢ্যাঙারাম, আগুনচোখ আর ভোঁদারামকে কাঁধে নিয়ে, ত্রিশ মাইল লম্বা একেক পা ফেলে, মুহূর্তের মধ্যে গিয়ে সেখানে হাজির হল। তারপর ভোঁদারাম নিজের শরীরটি ফুলিয়ে পাহাড়ের চেয়ে বড় করে, চোঁ চোঁ শব্দে সাগরের জল খেতে আরম্ভ করল। দেখতে দেখতে জল এত কম হয়ে গেল যে ঢ্যাঙারাম অনায়াসে শামুকটা তুলে এনে তার ভেতর থেকে আংটিটি বার করে নিল।

 এদিকে রাজপুত্র তো বড়ই অস্থির হয়ে পড়ল। সকাল হয়ে গেল, তবু তিন বন্ধু ফেরেই না। এমন সময় সেই বুড়ো হাসতে হাসতে দরজা খুলে ঘরে ঢুকলো, কিন্তু কোনো কথা বলার আগেই ঠন করে জানলার কাঁচ ভেঙে সেই আংটিটা এসে ঘরে পড়ল, আর রাজকন্যা উঠে দাঁড়ালো। আগুনচোখ সেই তিনশো মাইল দূর থেকে সব দেখতে পেয়েছিল আর তাই সে ঢ্যাঙারামকে আংটিটা ছুঁড়ে দেবার কথা বলেছিল। ঢ্যাঙারামও প্রকাণ্ড লম্বা হাত বার করে আংটিটাকে সাঁই করে ছুঁড়ে ঠিক ঘরের ভেতরেই ফেলে দিল, আর রাজপুত্রও বেঁচে গেল।

 বুড়ো বেচারার যা তখন দুরবস্থা! তার চোখ কপালে উঠে গেছে, দাঁতে দাঁতে লেগে গেছে। আর থরথর করে কাঁপছে। কিছুক্ষণ পরে সে ধোঁয়া হয়ে গেল, আর একটা দাঁড়কাক সেই ধোঁয়া থেকে বেরিয়ে ‘কা-কা’ করতে করতে উড়ে চলে গেল। সে বাড়ির যত লোকজন পাথর হয়ে ছিল তারাও তখন বেঁচে উঠে রাজপুত্রের কাছে এসে হাত জোড় করে দাঁড়াল।

 তারপর সকলকে নিয়ে রাজপুত্র খুব ধুমধাম করে বাড়ি ফিরে এলো। সেখানে বুড়ো রাজার আর দেশসুদ্ধ লোকের যা আনন্দ!

 তিন বন্ধু কিন্তু রাজপুত্রের দেশে ফিরলো না, তারা সেই জঙ্গলেই ফিরে গেল, রাজপুত্র তো কত সাধাসাধি করলো, কিন্তু তারা কিছুতেই যেতে রাজি হলো না।

সন্দেশ—১৩২৩