সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/আবার সুরু ঝুরু ঝুরু বাদল ঝরা গান
আবার সুরু ঝুরু ঝুরু বাদল ঝরা গান
আবার সুরু ঝুরু ঝুরু
বাদল-ঝরা গান—
আগুন হানা থামলো এবার
ঠাণ্ডা হ’ল প্রাণ।
মেঘ জমেছে নীল আকাশে,
সোঁদা মাটির গন্ধ আসে,
পুকুর-ডোবায় জল থৈ থৈ
ছুটলো গাঙে বান,—
আবার সুরু ঝুরু ঝুরু
বাদল ঝরা গান।
মেঘের কোলে গুরু গুরু
গ’র্জে ওঠে বাজ—
ভাবছি বসে সকাল হতেই
কি করা যায় আজ।
ডাকছে ফিঙে ঘরের চালে,
চাতক চেঁচায় অশথ-ডালে,
গাল-ফুলো ঐ ব্যাঙ-ব্যাঙানী
ধরলো বিকট তান—
আবার সুরু ঝুরু ঝুরু
বাদল ঝরা গান।
হিজল-বনের পিছল পথে
নাই-বা গেলি ভাই,
তাল-পুকুরে টাপুর টুপুর
শোন্ না বসে তাই;
পুঁই-পালঙের সবুজ ক্ষেতে
মাতাল বাতাস উঠলে মেতে,
অধীর হ’ল নদীর পারের
নবীন তাজা ধান,
আবার সুরু ঝুরু ঝুরু
বাদল ঝরা গান।
নেতিয়ে গেছে অপ্রাজিতা,
ঝরছে পরিমল—
জুঁই-পারুলের পাপড়ি ঝরে
হায়, কি করি বল।
হাস্নুহানার আকুল ঝাড়ে
টুনটুনি তার পাখনা নাড়ে,
ভিজছে বাবুই বাবলা-গাছে
কাঁপছে তনুখান—
আবার সুরু ঝুরু ঝুরু
বাদল ঝরা গান।
ছিপ হাতে ঐ আসলো জগা
মাথায় টোকা তার,
বসলো গিয়ে চুপটি ক’রে
বিজন দীঘির ধার;—
পাতার ছাতা মাথায় দিয়ে
পাততাড়ি বই গুটিয়ে নিয়ে
পণ্টু বাবু গুট্গুটিয়ে
পাঠশালাতে যান—
আবার সুরু ঝুরু ঝুরু
বাদল ঝরা গান।
বাগদী বুড়ি চুবড়ি হাতে
আজকে কোথায় যায়?
হিঞ্চে ক্ষেত আজ ডুবলো জলে,
বারণ কর তায়।
মাঠ-ছাড়া ঐ দূরের গ্রামে
ঝাপসা নিঝুম আঁধার নামে;
আম-বাগানে ছুটলো বাতাস
উঠলো যে তুফান।
আবার শুরু ঝুরু ঝুরু
বাদল ঝরা গান।
ঘরের দাওয়ায় একলা ব’সে
উদাস হ’ল প্রাণ!
আয় ছেলেরা আটচালাতে,
নাই-বা গেলি পাঠশালাতে,
তেল মেখে নে, বাদল-ধারায়
করবি যদি স্নান।
আবার সুরু ঝুরু ঝুরু
বাদল ঝরা গান।