সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/বৈশাখী ভোর

বৈশাখী ভোর

তখনো আকাশে রবি জাগে নাই,
রজনীর অবসান;—
ভেসে ভেসে আসে
প্রভাতী বাতাসে
অজানা পাখীর গান।
ভেঙে গেল ঘুম সহসা আমার,—
খোলা বাতায়নে দেখি বারবার—
ঝিলিমিলি করে বেলোয়ারী আলো
আধো-আঁধিয়ারে অতি জমকালো;
পূব-আকাশের কালো পর্দায়—
সোনালী-সবুজে-নীলে-জর্দায়
আলোকের সমাবেশ;
চৈত্র-রজনী শেষ।
ঘর ছেড়ে আমি চলি মাঠ-পারে,—
পল্লীপ্রান্তে নদীটির ধারে।
ঝুরি-নামা বুড়ো বটগাছ-তলে
বয়ে যায় নদী কল-কল্লোলে;
তারি তীরে অতি পুরাতন ঘাট,
চারিধারে তার ধরিয়াছে ফাট;

দূবো-ঘাস আর সবজে পানায়
ভরে আছে তার কানায় কানায়।
ছল্ ছল্ জল।
বহে অবিরল;
সিঁড়িতে আঘাত
করে দিনরাত;
যেন আর তার গীতি না ফুরায়,
জল-তরঙ্গ বাজিয়ে সে যায়।

আমি এসে বসি ভাঙা পৈঠায়,—
নিরিবিলি ঘাটে একা নিরালায়।
ওপারে আঁধার হয়ে আসে ফিকে,
আলোর আমেজ জাগে দিকে দিকে;
আবলুশে ম্লান আবছায়া ঢাকা;
কালচিটে কালো ঝুলকালি মাখা—
গোপন প্রকৃতি রহস্যে ভরা
সহজ রূপেতে পড়ে গেল ধরা।
যারা ছিল সব স্বপনের দেশে
দেখা দিল তারা একে একে এসে,
চির-পুরাতন চির-চেনা যারা
আলোর জোয়ারে ধরা দিল তারা।
মাথার উপরে এপাশে ওপাশে
তারার চুমকি মিলায় আকাশে;
শুকতারা তার প্রদীপটি নিয়ে
পালালো কোথায় মুখ ঢাকা দিয়ে।
জোনাকির আলো
মিলালো মিলালো—

ঝোপে আর ঝাড়ে,
আলোর জোয়ারে।
পূব দিগন্তে খেয়ে যায় চিড়,
সোনার আগুন, আসোর আবীর,
রাঙা বিদ্যুৎ
অতি অদ্ভুত,
খান্ খান্ হয়ে ঠিরিয়ে যায়।
ফুলঝুরি ঝরে গগনের গায়।
ঐ ওঠে রবি ঝিলমিল-ঝিল,
হেসে ওঠে যেন বিশ্ব নিখিল,
বাঁধ ভেঙে নামে বন্যা আলোর,
হ’ল হ’ল আজ বৈশাখী ভোর।