সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/বৈশাখী ভোরে

বৈশাখী ভোরে

ঘুম ছেড়ে আজ সকালবেলা উঠেই দেখি রে—
নতুন আলোর ফিনিক ছোটে বাইরে, একি রে!
ঠিক‍্রে-পড়া রঙীন আলো, চৈতী-রাতের ঘুম টুটালো,
পলাশ পারুল ঝরিয়ে এলো কাল-বোশেখী রে।

আমবাগানের বিভোল ঘ্রাণে পরান মাতালো,—
দাঁড়িয়ে বুঝি ভাবছে কেবল আকাশ-পাতাল ও!
আম-চুরিতে বকবে মালী? তাইতে বুঝি ভাবনা খালি!
পট‍্লা ছোঁড়া মালীর সনে স্যাঁঙাৎ পাতালো।

গাছের ডালে আকুল হ’ল কোকিল-পাপিয়া,
দখিন হাওয়া বিরাম-হারা ফিরছে কঁপিয়া—
ফুল-মুকুলে পড়লো সাড়া! নিদ‍্ তেয়াগি জাগলো তারা—
আনন্দ আজ উঠছে সবার বুকটি ছাপিয়া।

সবুজ পাতার কাতার ছাওয়া অবুঝ কেতকী—
ঘোমটা টেনে আজকে ভোরেও ঘুমোয় এত কী!
জাগলো সবাই মাতলো সবে, ও কেতকী, জাগ‍্না তবে,
ঘুম দিলে আজ সবাই এত আমোদ পেত কি?

আয় ছেলেরা, বাইরে দাওয়ায় আমোদ লুটি রে—
আজ পড়া থাক্‌, থাক্ না প’ড়ে শেলেট-পুঁথি রে।
থাকবে কে আজ ঘরের কোণে একলা বসে সঙ্গোপনে,
থাকবে যে থাক্‌, আয় না তোরা বাইরে ছুটি’ রে।

শুনব মোরা ধানের ক্ষেতের গানের বহরই,
নীল-দরিয়ার নিতল জলের গুনব লহরী;
উড়ন্ত ঐ পাখীর পিছে  ঘুরব মিছে, ঘুরব মিছে,
খামখেয়ালে কাটাব আজ সকল প্রহরই।

আজকে ভোরে নতুন সালের নতুন আলো রে—
জীর্ণ জরায় সজীব করে তাক লাগালো রে।
আজ নতুনের স্বাদটি পেয়ে  আনন্দে মন উঠছে গেয়ে;
বৈশাখী ভোর আজকে আমার মন ভুলালো রে।