সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/গরুর গাড়ির গান

গরুর গাড়ির গান

ঐ চলেছে
কাঠের চাকায়
গাড়োয়ানটা
আপন মনে

প্রকাণ্ড মাঠ
মাথার উপর
সামনে দুরে
শন‌্শনিয়ে

গরুর গাড়ি
ক্যাঁচোর ক্যাঁচোর
পাগড়ি মাথায়
চলছে গরু

রোদের তাপে
আগুন ঢালেন
কোথাও নাহি
ছুটছে বেগে

মাঠের পাশে,
শব্দ আসে।
পড়ছে ঢুলে,
ল্যাজুড় তুলে।

তপ্ত ঝামা,
সূর্য-মামা।
একটু ছাওয়া,
গরম হাওয়া।





একটি দুটি
রোদের তেজে
স্তব্ধ দুপুর
এই দুপুরে

গরুর গাড়ির
নতুন বধূ
পর্দা তুলে
ডাগর চোখে

শীর্ণ-রোগা
মারের চোটে
গরুর গাড়ি
টুং টাং টুং

অনেক দূরে
ঝাঁকড়া মাথায়
ঐ গ্রামেতেই
ঐ গ্রামেতেই

মাঠ ছাড়িয়ে
তার তীরেতে
গরুর গাড়ি
নদীর কাছে


ধানের জমি
করছে খাঁখাঁ
দিক্‌-বিদিকে
রৌদ্রে পুড়ে

চাটাই-ছাওয়া
শ্বশুরবাড়ি
পিছন হতে
নতুন বধু,—

শ্রান্ত কাতর
ঊর্ধ্ব-শ্বাসে
চলছে দুলে
গরুর গলায়

মাঠের পারে
তালের সারি
নতুন বধূর
চলছে ছুটে

ছোট্ট নদী
তেঁতুল গাছের
ঢালু পথের
আসলো এবার


মাঠের ধারে
একেবারে।
নাইকো সাড়া,
যাচ্ছে কারা?

ছাউনি-তলে
ঐ যে চলে।
দেখছে চেয়ে
ছোট্ট মেয়ে।

বলদ দুটি
চলছে ছুটি’।
মাঠের মাঝে
ঘণ্টা বাজে।

গ্রামের কাছে
দাঁড়িয়ে আছে।
শ্বশুরবাড়ি
গরুর গাড়ি।

শীর্ণ-কায়া,
শীতল ছায়া।
বাঁকটি ধ’রে
অনেক পরে।





তৃষ্ণা-কাতর
চুমুক দিয়ে
উঠতি পথে
কাঠের চাকায়

বাঁশের ঝাড়ে
ঘুর্নি হাওয়া
পশ্চিমেতে
পুঁট্‌লি কাঁধে

মাঠ ফুরালো,
ঐ দেখা যায়
ঐ কাছারি,
অশথ তলায়

পথের পাশে
জীর্ণ ঘাটে
গরুর গাড়ির
কাজ ফেলে সে

ছেলের দলে
বটের ডালে
গরুর গাড়ি
নতুন বধূ


বলদ দুটি
তৃষ্ণা মিটায়
উঠছে গাড়ি
ক্যাঁচোর ক্যাঁচোর

বায়স ডাকে
বন্‌বনিয়ে
ঢললো রবি
পথিক চলে

ঐ যে মাঠের
নান্দীপুরের
ঐ যে গ্রামের
চণ্ডীপূজার

শ্যাওলা-ছাওয়া
বাসন মাজে
ক্যাঁচোর ক্যাঁচোর
কৌতূহলে

জট্‌লা ক’রে
দোলনা ক’রে
ঢুকলো এবার
ঘোমটা টানে


নদীর জলে
আবার চলে।
নদীর পাশে,
শব্দ আসে।

বিকট সুরে;
চলছে ঘুরে।
কমলো বেলা,
ঐ একেলা।

শেষ সীমানা,
গোসল-খানা,
পাঠশালাটা,
আটচালাটা।

ময়লা দীঘি,
বাগদিনী-ঝি;
শব্দ পেয়ে
দেখছে চেয়ে।

হল্লা তোলে
দোদুল দোলে,
গ্রামের মাঝে,
বেজায় লাজে।