হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা (১৯৫১)/চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়/৩৫

৩৫

রাগ মল্লারী

ভাদেপাদানাং।  এত কাল হাঁউ অচ্ছিলেঁ স্বমোহেঁ।
এবেঁ মই বুঝিল সদ্গুরুবোহেঁ॥ ধ্রু॥
এবেঁ চিঅরাঅ মকুঁ ণঠা।
গণসমুদে টলিআ পইঠা॥ ধ্রু॥
পেখমি দহদিহ সর্ব্বই শূন।
চিঅ বিহুন্নে পাপ ন পুন্ন॥ ধ্রু॥
বাজুলে দিল মোহকখু ভণিআ
মই অহারিল গঅণত পণিআঁ॥ ধ্রু॥
ভাদে[] ভণই অভাগে[৫১ক] লইআ।
চিঅরাঅ মই অহার কএলা॥ ধ্রু॥

 জ্ঞানানন্দপ্রমোদযুক্তো হি সিদ্ধাচার্য্যো ভদ্রপাদস্তমেবার্থং প্রতিপাদয়তি—

 এত কালেত্যাদি। অনাদিসংসারে কল্যাণমিত্রসংসর্গাৎ। মোহমিতি বাহ্যবিষয়সঙ্গেনা[ন]ল্পকল্পান্ত[ং] তাবৎ স্থিতোস্মি। ইদানীং বুদ্ধানুভাবাৎ সদ্গুরুবোধপ্রসঙ্গেন ময়া চিত্তস্য স্বরূপমবগতম্।

 ধ্রুবপদেন তমেবার্থং দ্রঢ়য়তি—

 এবেঁমিত্যাদি ইদানীং পবিপদ্মসংযোগাক্ষরসুখে চিত্তরাজো মম বিনষ্টগমনমিতি প্রকৃতিপ্রভাস্বরে প্রবিষ্টমিতি।

 দ্বিতীয়পদেনাভ্যাসস্বরূপমাহ—

 পেখমীত্যাদি। সর্ব্বধর্ম্মানুপলংভযোগেন যং যং দিগ্ভাগং পশ্যামি তং তং সর্ব্বশূন্যং প্রভাস্বরময়ং প্রতিভাতি[] অতএব[] চিত্তস্যানুদয়েন পাপপুণ্যাদিকং সংসারবন্ধনঞ্চ জানামীতি।

 তথাচ সরহপাদাঃ

 অঙ্গেঁপচ্ছেমিত্যাদি।

 তৃতীয়পদেন বজ্রপ্রভাবমাহ—

 বাজুলেত্যাদি। [৫২]বজ্রকুলেনেতি। বজ্রগুরুণা লক্ষ্যমিতি ভাব্যমুক্তং মহ্যং চতুর্থানন্দোপায়ং প্রদত্তং। ময়া পুনঃ সাদরনিরন্তরাভ্যাসেন। গগনেতি প্রভাস্বরসমুদ্রে অহারীকৃতম্।

 চতুর্থপাদেনাত্ম[]স্বরূপমাহ—

 ভণই ইত্যাদি। অভাগ ইতি। অনুৎপাদভাগগৃহীতোহ[ং] ভদ্রপাদঃ। যদানাদিভববিকল্পাধারচিত্তরাজো ময়া সর্ব্বধর্ম্মানুপলম্ভসমুদ্রে প্রবেশিতং। ৩৫।

  1. পুথি, ভাবে; কিন্তু গানের মাথায় ভাদেপাদানাং; টীকায়ও ভদ্রপাদ আছে।
  2. এখানে ব্যাকরণ লাগে না। পুথিতে আবার প্রতিভাতি শব্দের পর মাং শব্দটি আছে।
  3. অতএব শব্দের পর বৃথা একটি আকার আছে।
  4. পু, আত্মাস্বরূপং।

৩৫

রাগ মল্লারী

ভাদেপাদানাম্— এত কাল হাঁউ অচ্ছিলোঁ স্বমোহেঁ।
এবেঁ মই বুঝিল সদ্গুরুবোহেঁ॥ ধ্রু॥
এবেঁ চিঅরাঅ মকুঁ ণঠা।
গঅণসমুদে টলিআ পইঠা॥ ধ্রু॥
পেখমি দহ দিহ সর্ব্বই শূন।
চিঅ বিহুন্নে পাপ ন পুন্ন॥ ধ্রু॥
বাজুলে দিল মো লক্খ ভণিআ।
মই অহারিল গঅণত পসিআ॥ ধ্রু॥
ভাদে ভণই অভাগে লইআ।
চিঅরাঅ মই অহার কএলা॥ ধ্রু॥

 (অনাদি সংসারে) এত কাল (বহু কল্পান্তকাল) আমি (বাহ্য বিষয়সঙ্গরূপ) স্বগত মোহ দ্বারা [বশীভূত ছিলাম]। এখন আমি সদ্গুরুপ্রদত্ত জ্ঞান দ্বারা (চিত্তের স্বরূপ) বুঝিলাম। (বজ্র ও পদ্মের সংযোগরূপ অক্ষর সুখে) এখন আমার চিত্তরাজ নষ্ট হইয়া গিয়াছে [মোহভাব ত্যাগ করিয়াছে এবং] গগনসমুদ্রে (প্রকৃতিপ্রভাস্বরে) ঘুরিয়া প্রবিষ্ট হইয়াছে। (সর্ব্বধর্ম্মের অনুপলম্ভরূপ যোগ দ্বারা এখন আমি) দশ দিক্ সবই শূন্য (প্রভাস্বরময়) দেখিতেছি এবং চিত্ত বিহনে (চিত্তের অনুদয়ে) পাপ পুণ্য [কিছুই আমার নিকট প্রতিভাত হইতেছে] না। বাজুল (বজ্রকুল বা বজ্রগুরু) আমাকে লক্ষ্য (চতুর্থানন্দ এবং তৎপ্রাপ্তির উপায়) বলিয়া দিলেন; (নিরন্তর আদরের সহিত তাহার অভ্যাস দ্বারা) আমি গগনে (প্রভাস্বর শূন্যে) প্রবেশ করিয়া [চিত্তকে] আহার [নির্ব্বিকল্প] করিলাম। ভাদে বলেন,—[চিত্তের] অভাগকে (অনুৎপাদরূপ ভাগকে) লইয়া, (অনাদি ভববিকল্পের আধার) চিত্তরাজকে আমি আহার করিলাম (সর্ব্বধর্ম্মের অনুপলম্ভরূপ সমুদ্রে প্রবেশ করাইলাম)।