একাধিক লেখক
মুহম্মদ মনসুর উদ্দিন সম্পাদিত
(পৃ. ১২১-১২৪)
◄  ৮৯
৯১  ►

৯০

চিলার বারোমাসী

কাঁদে চিলা পদ্মরমণী লয়ে সখিগণ
বেলন কাষ্ঠের থাম্বা ধরিয়া রোদন।
আহারে বৈদেশী সাধু তুই বড় নিষ্ঠুর,
বঞ্চিত করলি মুখের অল্প সিঁথ্যার সিন্দুর।
অঘ্রাণ মাসেতে চিলালো নারী খ্যাতে পাকা ধান,
খাও আর বিলাও লো চিলা ভাত আর পান।
খাও আর বিলাও লো বর্ষকালের ধন,
শেষ কালের জন্য রাখিও সম্বল।
এও মাস গেল চিলার না পুরিল আশ,
নবরঙ্গ নউলী যৌবন সামনে পৌষ মাস।
পৌষ না মাসেতে চিলালো নারী হামেলা,
চিলা নারীর যৈবন দেখ্যা গুঞ্জরে ভ্রমরা।
গুঞ্জরে গুঞ্জরে ভ্রমরা ফলের মধু খায়,
ফুলের মধু ফুলে র’ল ভ্রমর উড়ে যায়।
এও মাস গেল চিলা নারীর না পুরিল আশ,
নবরঙ্গ নউলী যৈবন সামনে মাঘ মাস।
মাঘ মাসেতে ওগো চিলালো নারী দুগুণ পরে জার,
চিলা নারী বিছানা পাতে শয়ন মন্দির ঘর।
অবলা তুলার বালিশ কথা নাহি কয়,
আহারে বৈদেশী সাধু তোরে লাগল পাই।
অঞ্চলে বিছায়ে আমি রজনী পোহাই।

এও মাস গেল চিলার না পুরিল আশ,
নবরঙ্গ নউলী যৈবন সামনে ফালগুন মাস।
ফালগুন মাসেতে চিলালো নারী ফাগু খেলে রাজা,
আম্বু ডালে ভরসা করে কোকিল সাজায় বাসা।
সাজাক সাজাক বাসা তোলাক দু’টি ছাও,
সোনা দিয়া বাঁধ্যা দেবো কোকিলার ঠোট পাও।
এও মাস গেল চিলার না পুরিল আশ,
নবরঙ্গ নউল যৈবন সামনে চৈত্তির মাস।
চৈত্তির মাসেতে চিলালো নারী এ শাক নালিতা,
সবের মুখে লাগে ভালো চিলার মুখে তিতা।
রাঁধিয়া বাড়িয়া শাকরে সোমরাইতাম থালে,
মোর সাধু থাকতো দেশে দিতাম তার ঐ গালে।
এও মাস গেল চিলার না পুরিল আশ,
নবরঙ্গ নউলী যৈবন সামনে বৈশাখ মাস।
বৈশাখ মাসেতে চিলালো নারী কৃষাণে বোনে বীজ,
কোটরা গুলায়া আমি খা’তেম গরল বিষ।
বিষ খা’তেম জহর খা’তেম জানতো বাপ মায়,
আমার দিছিলো বিয়া দূর দেশ ঠাঁই।
এও মাস গেল চিলার না পুরিল আশ,
নবরঙ্গ নউলী যৈবন সামনে জৈষ্ঠি মাস।
জৈষ্ঠি না মাসেতে গাছে পাকা আম,
মোর সাধু থাকতো দ্যাশে খাইতাম আম।

আম খাইতাম কাঠাল খাইতাম পঞ্চ গাভীর দুধ,
শয়ন মন্দিরে বস্যা করিতাম কৌতুক।

এও মাস গেল চিলার না পুরিল আশ
নবরঙ্গ নউলী যৈবন সামনে আষাঢ় মাস,
আষাঢ় মাসেতে চিলালো নারী গাঙে নতুন পানি।
কত সাধু বায় নৌকা উজান ভাটানী।
যার সাধু গেছে পাছে সেও ত আ’ল আগে,
মোর সাধু গেছে আগে খাইছে বনের বাঘে।

এও মাস গেল চিলার না পুরিল আশ,
নবরঙ্গ নউলী যৈবন সামনে শাঁঙন মাস।
শাওন মাসেতে ঢিলালো নারী খেতে ভাসে নাড়া,
নাড়ার উপর বস্যা ডাকে নিদারুণ কোঁড়া।
ডাক ডাকে ডাকিনীরে ডাকে তনুর হ’ল শেষ,
নিদারুণ কোঁড়ার ডাকে ছাড়বো রাজার দেশ।
যে না দেশে গেছেরে সাধু সেই না দেশে যাও,
সেই না দেশে যায়ারে কোঁড়া ডাকো ঘনঘন,
শুনিয়া কোড়ার ডাক সাধু দেশে করবি মন।

এও মাস গেল চলার না পুরিল আশ,
নবেরঙ্গ নউলী যৈবন সামনে ভাদ্দর মাস।
ভাদ্দর মাসে চিলালো নারী গাছে পাকা তাল।
মোর সাধু থাকতো দেশে খাতাম পাকা তাল।

এও মাস গেল চিলার না পুরিল আশ,
নবরঙ্গ নউল যৈবন সামনে আশ্বিন মাস।
আশ্বিন মাসে চিলালো নারী দেবী দুর্গার পূজা,
ঘরে ঘরে করে পুজা বাঁওনের বিধবা।
আহারে বৈদেশী সাধু তোরে লাগাল পাই,
অঞ্চল বিছায়া রে সাধু আমি রজনী পোহাই।
এও মাস গেল চিলার না পুরিল আশ,
নবরঙ্গ নউল যৈবন সামনে কার্ত্তিক মাস।
কার্ত্তিক মাসে চিলালো নারী ক্ষেতে পরে নেতি,
মোর সাধু আ’লো দেশে কাধে লইয়া ছাতি।
আহারে বৈদেশী সাধু তুই বড় নিষ্ঠুর,
বঞ্চিত করলি মুখের পান সিঁথার সিন্দুর।
সিঁথির সিন্দুর আমার মৈলাম হ’ল,
আসমানের চন্দ্র সুর্য্য আবেতে ঘিরিল।