জননী।

যতেক আছেন গুরু এ বিশাল ভবে,
মান্যতমা গরীয়সী জননী সে সবে।
নয় মাস দশ দিন ধরেন জঠরে
কঠোর নিয়ম পালি সুত-শুভ তরে;
শরীর-নিঃসৃত স্তন্য সুধারস দানে
বাঁচান যে জন নিরুপায় সুত গণে,
সমলে বিমল বোধ সন্তানের তরে
করেন যে জন সদা সানন্দ-অন্তরে,

সুতের সুখের তরে নিজ সুখ যত
ত্যজেন সরল ভাবে যে জন সতত,
দয়ার নিধান যিনি স্নেহের সাগর.
কে আছে সমান তাঁর ভুবন-ভিতর?
এ হেন জননী বাণী ওহে শিশুগণ,
যে জন না পালে, তার বিফল জীবন।
এ হেতু পূজহ সদা জননী-চরণে,
প্রত্যক্ষ দেবতা মাতা ভাবি মনে মনে।
সুতের বদনশণী হেরিবার তরে
সহেন যে দুঃখরাশি মাতা অকাতরে,
শোধিতে সে ঋণ-রাশি মানব কখন
পারে না ধরিয়া মরি বহুল জীবন।
জনকের দশগুণ, নিখিল ভুবন,
জননীর সম নাহি হয় কদাচন;
জঠরে ধারণ আর পোষণের তরে
গুরুতর হন মাতা সবার উপরে।
অতএব শিশুগণ সদা এক মনে,
রত রও জননীর আদেশ পালনে?
শুনাও তাঁহারে সদা মধুর বচন,
দেখা ও তাঁহারে সবে প্রিয় আচরণ;
সতত ভকতি কর, দুখরাশি হর,
রাখিতে তাঁহায় সুখে সুখ পরিহর।

অগ্রজ, অনুজ কিংবা অন্য পরিজন
যদি বলে প্রতিকূলে মাতার বচন,
সে বাণী বিষের সম জীবন-নাশন
ভাবিয়া, ত্যজহ সদা ওহে শিশুগণ!
হউক জলধি-জলে কায় নিমগন,
প্রবল অনল কিংবা নাশুক জীবন,
বিষাক্ত বিশিখে হৌক হিয়া-বিদারণ
তথাপি জননী-বাণী করোনা হেলন।