হিন্দু মহিলাগণের হীনাবস্থা/ধনাঢ্য বংশীয় মহিলাগণের বিবরণ
প্রধান বংশীয়দিগের সহিত আমাদিগের কোন বিষয়েরই সাদৃশ্য নাই, সুতরাং তদ্বংশীয় কামিনীগণও আমাদিগের তুল্য নহে। এই নিমিত্ত তাহাদিগের আচার ব্যবহারাদি পৃথক করিয়া প্রকাশ করিতে বাধ্য হইলাম। এই প্রধান বংশীয় বরবর্ণিনীগণ মধ্যবিধ ও সামান্য বংশস্থ ভামিনীগণাপেক্ষা অনেক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করিয়াছেন যথার্থ বটে, কিন্তু এখনও সম্পূর্ণরূপে পারেন নাই। তাঁহাদিগের মধ্যে প্রায় অনেকেই শুদ্ধ বস্ত্রালঙ্কারাদিতেই প্রধানত্ব প্রাপ্ত হইয়াছেন, কিন্তু আমাদিগের ন্যায় বিদ্যাধনে বঞ্চিত হইয়া তাঁহারাও বৃথা ধনে অভিমানিনী হইয়া জীবন শেষ করিতেছেন। ইহাঁদিগকে আমাদিগের ন্যায় সাংসারিক কার্য্যে বিবৃত থাকিতে হয় না, এবং কেহ প্রতিবাদী হইয়া কোন বিষয়ে কিছুমাত্র ব্যাঘাত ঘটাইতে সক্ষম হয় না, অতএব ইহাঁরা বিদ্যাবতী ও অনায়াসে গুণবতী হইতে পারেন। দুঃখের বিষয় এই যে, ইহাঁরা স্বভাবতই আলস্য-পরায়ণা হইয়া নিদ্রা ও বৃথা গল্প ও তাসাদি ক্রীড়া দ্বারা কাল যাপন করেন। বিবেচনা করিয়া দেখিলে বিদ্যা বিষয়ে অগ্রে তাঁহাদিগেরই উৎসাহিনী হওয়া কর্ত্তব্য, এবং সাধারণ মহিলাগণের হিতের নিমিত্ত তাঁহাদিগকেই সদুপদেশ দেওয়া উচিত, কিন্তু আমাদিগের দুরদৃষ্ট বশতঃ তাহার বিপরীত হইতেছে। হায়! সকলে তাঁহাদিগের অনুবর্ত্তিনী হইয়া কোথায় যশস্বিনী হইবে, না তদ্বিপরীত ফল লাভ হয়। অতিশয় পরায়ণা সর্ব্ব বিষয়ে অশিক্ষিতা, এবং শিশিরসহি বস্ত্র পরিধানাদি যে তাঁহাদিগের কার্য্য তদনুকরণে সর্ব্ব সাধারণের কি প্রকারে হিত সাধন হইতে পারে? কিন্তু বিবাদের বিষয় এই যে, কি মধ্যবিধ, কি দরিদ্র সকলেই ঐ ধনিধনীগণের অনুবর্ত্তিনী হইতে বাসনা করে, এই নিমিত্ত ধনিধনীরাই সর্ব্ব গুণে ভূষিত হইতে চেষ্টা করিবেন।