হিন্দু মহিলাগণের হীনাবস্থা/বঙ্গদেশীয় মহিলাগণের জন্ম
হিন্দু মহিলাগণের হীনাবস্থা।
ইহা প্রায় সকলেরই বিদিত আছে যে সকল সভ্য- দেশীয় নারীগণাপেক্ষা অস্মদ্দেশীয় মহিলাগণেরাই অতি হীনাবস্থায় অবস্থিতি করিতেছে, আমাদিগের দোষাকর দেশাচারই ইহার আকর স্বরূপ হইয়াছে। এই দেশা- চারের বশীভূত হইয়া আমাদিগের হিন্দুধর্ম্থাভিমানী মহোদয়গণ কি অপ্রিয় কার্য্যই না করিতেছেন। তাঁহারা বিষম কৌলীন্য মর্য্যাদা রক্ষার্থে স্ব স্ব দুহিতাগণকে অতি শৈশব কালেই অযাগ্য পাত্রে নিক্ষেপ পূর্ব্বক কতই শ্লাঘা প্রকাশ করেন। হা জগৎ পিতা পরম বিধাতা পরমেশ্বর! আমাদিগের এই মনোবেদনা কত দিনে দূর হইবে? কত দিনে এই বঙ্গদেশে জ্ঞান সুর্য্য উদয় হইয়া অজ্ঞান অন্ধকার নষ্ট করিবে? হে বঙ্গবাসিনী ভগিনীগণ! কত দিনে তামরা সর্ব্ব গুণালঙ্কৃতা হইয়া এই বঙ্গমাতাকে শোভিতা করিবে?
বঙ্গদেশীয় মহিলাগণের জন্ম।
গর্ব্ভিনি যত দিন পর্য্যন্ত প্রসব না করেন, তত দিন দিবা নিশি কেবল এই চিন্তা করেন, আহা! জগদীশ্বর আমাকে যদি একটি পুত্র সন্তান প্রদান করেন, তাহা হইলে আমি কতই সুখী হই এবং সুহৃদগণের নিকট কতই আদরণীয়া হই। কিন্তু যদি অদৃষ্ট ক্রমে কন্যা ভূমিষ্ঠা হয়, তবে সেই কন্যার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া মাতা যে কতই দুঃখিতা হয়েন তাহা বলিবার নহে, অধিক কি কহিব সকল বিষাদের চিহ্ন যে রোদন কেহ কেহ তাহাও কুরিয়া থাকেন, এবং আর আর সুহৃদগণও অতিশয় মনস্তাপ করেন। পুত্র জন্মইলে যেরূপ বাদ্যবাদন, ব্রাহ্মণ পূজন, দরিদ্র ভোজন, স্বস্ত্যয়ন, এবং পুত্রের আয়ু বৃদ্ধি কারণ বহুবিধ দ্রব্য সামগ্রী দান, ও দেশ বিদেশস্থ আত্মীয় কুটুম্বগণকে জ্ঞাপনার্থে নাপিত প্রেরণাদি যে সকল মঙ্গলাচরণ হইয়া থাকে, কন্যা জন্মাইলে তাহার কিছুই হয় না, বরং তদ্বিপরীত কার্য্যই হইয়া থাকে। হা বিধাতঃ। আমরা কি এতই নিকৃষ্ট যে আমাদিগের জন্ম মৃত্যু কালই সমান হইবে? হা দেশাচার! তোমার কি মোহিনী শক্তি! তোমার মোহে মুগ্ধ হইয়া লোক সকল মোহান্ধকার ভোগ করিতেছে। হায়! কত দিনে আমাদিগের এই বাঙ্গলা দেশ সুখের আলয় হইবে, কত দিনে এই ঘৃণিত দেশাচার একেবারে দূরীভূত হইবে। হে সর্ব্ব জন হিতৈষী মহোদয়গণ! তোমরা সকলে যত্নবান হইয়া এই দুঃসহ অত্যাচারকে সমূলে নির্ম্মূল কর।