১৫১৩ সাল/সপ্তম পরিচ্ছেদ
সপ্তম পরিচ্ছেদ।
নানা কারণে আমরা বলমহাশয়ের কাণ্ড অংশীদারগণকে জানাইলাম না। কেবলমাত্র এই প্রকাশ করিলাম যে তাঁহার অংশ আমি কিনিয়া লইয়াছি। জিজ্ঞাসিত হইলে বল মহাশয় লোকলজ্জার ভয়ে বলিতেন যে তিনি “প্রভাতী”—সম্পাদক কর্ত্তৃক লাঞ্ছিত হওয়ায় আমাদের সহিত সকল সম্পর্ক চ্যুত করিয়াছেন।
সপ্তাহ খানেক যাইতে না যাইতে আমরা দুইজন, অর্থাৎ বন্ধুবর ও আমি, দুইখানি সমন্ পাইলাম। দেখি সম্পাদক বলমহাশয়ের নামে প্রতারণার অভিযোগ করিয়াছেন এবং আমাদিগকে তাঁহার সাক্ষী মানিয়াছেন। উভয় পক্ষই ভাল ভাল কৌঁসিলী নিযুক্ত করিলেন। কয়েকদিন ধরিয়া মামলা চলিল। কিন্তু বলমহাশয়ের দোষ প্রমাণ না হওয়ায় তিনি অব্যাহতি পাইলেন। আমরা হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচিলাম।
এদিকে হাসানজী কোম্পানীর চুক্তির কাল পূর্ণ হইয়া আসিল। আর দিন পনের বাকী আছে, এমন সময় আমরা টেলিগ্রাম পাইলাম যে জাহাজ তৈয়ার হইয়াছে। আমরা কাল বিলম্ব না করিয়া উহা দেখিতে বোম্বায়ে গেলাম। উহা লম্বায় ২০০ ফুট। Hull ভাগটা আবলুশ কাষ্ঠে প্রস্তুত ও তাম্র মণ্ডিত। কেবিনগুলি বেশ প্রশস্ত ও সুন্দরভাবে সজ্জিত। এঞ্জিনগুলি মধ্যস্থলে রক্ষিত হইয়াছিল। শুনিলাম জাহাজখানি প্রতি ঘণ্টায় ৭০ হইতে ৮০ মাইল পর্য্যন্ত যাইতে পারিবে। বন্ধুবর উহা ভাল করিয়া পরীক্ষা করিয়া অতীব সন্তুষ্ট হইলেন! তাহার পর একটা “চলন্ পরীক্ষার” দিন নির্দ্ধারিত হইল। সকল অংশীদারগণকে নিমন্ত্রণ করা গেল। অনেকে বোম্বায়ে আসিলেন। কেহ কেহ আসিতে অপারগ্ ইহা জানাইয়া আপনাদিগের কর্ত্তব্য সাঙ্গ করিলেন। আমাদের উৎসাহ তখন দেখে কে? একটা মানুষ যেন তিনজন হইলাম।
যেদিন পরীক্ষা হইবে তাহার পূর্ব্বদিনে আমরা উপস্থিত সকল অংশীদার ও ডাইরেক্টরগণ মিলিয়া এক সভা করিলাম। ইহার প্রধান উদ্দেশ্য অংশীদারগণকে আমাদের কার্য্য কতদূর অগ্রসর হইয়াছে ও পরে কি হইবে তাহা বুঝাইয়া দেওয়া।
সভার কার্য্য বেশ চলিতেছে, এমন সময় আমাদের গৃহের দ্বার খুলিয়া দুইজন কোর্টের কর্ম্মচারী প্রবেশ করিল ও বন্ধুবরের হস্তে কি দুইখানি কাগজ দিল। তিনি উহা পাঠ করিয়া যাহা বলিলেন তাহাতে আমরা অতি আশ্চর্য্য বোধ করিলাম। “প্রভাতী”—সম্পাদক আমাদের নামে কলিকাতা হাইকোর্টে সুবর্ণ প্রস্তুত করিতে কেন আমরা নিরস্ত হইব না—যেহেতু আমাদের নক্সাদি তাঁহার নক্সাদির অবিকল নকল মাত্র—তাহার কারণ দর্শাইবার জন্য এক রুল লইয়াছেন। তিনি ক্ষতিপূরণ স্বরূপ দশলক্ষ টাকাও চাহিয়াছেন।
কর্ম্মচারীদ্বয় চলিরা গেলে পর বন্ধুবর উপস্থিত সকলকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন:—
“বন্ধুগণ, আপনারা কেহ উদ্বিগ্ন হইবেন না। আমাদের অনিষ্ট করিবার জন্য সম্পাদক-প্রবর আর এক খেলা খেলিয়াছেন। ফলে তাঁহার হার নিশ্চিত। তবে আমাদের কার্য্যারম্ভের কিছু বিলম্ব হইবে এই যা। সম্পাদকের এই কার্য্যের ভিতর এক গুঢ় রহস্য নিহিত আছে। তাহা এখন প্রকাশ করিব না। আপনারা আমার উপর যেমন বিশ্বাস স্থাপন করিয়া আসিতেছেন, তাহাতে আমি বড়ই বাধিত আছি। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন, আমাদের কেহ কোন অনিষ্ট করিতে পারিবে না।”
আমার প্রস্তাবে বন্ধুবরের প্রতি একবাক্যে এক বিশ্বাসসূচক ভোট পাশ করা হইল। তৎপরে আমরা এই স্থির করিলাম যে “পরীক্ষা” আপাততঃ বন্ধ থাকুক। হাসানজী কোম্পানীর ইহাতে কোন আপত্তি না থাকায় যথারীতি ধন্যবাদাদির পর সভা ভঙ্গ হইল।