১৯০৫ সালে বাংলা/এণ্টিসার্কুলার সোসাইটী

এণ্টি সার্কুলার সোসাইটী।

 ছাত্রদলনার্থ কালাইল সাহেবের যে আদেশপত্র প্রচারিত হইয়াছিল এবং যাহার বলে রাজনীতিক আলোচনার্থ কোন সভায় ছাত্রেরা যোগদান করিতে পারিবে না ইহা স্থির হইয়া গিয়াছিল সেই আদেশ পত্রে প্রতিবাদ করিবার নিমিত্ত এই সভায় প্রথম প্রতিষ্ঠা হয়। রঙ্গপুরে যে সকল ছাত্রের অনর্থক অর্থদণ্ড হইয়াছিল তাহাদিগের শিক্ষা বিষয়ে সুবন্দোবস্ত করা এই সভার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল। সদস্য ছাত্রেরা দলবদ্ধ হইয়া প্রতিজ্ঞ করেন যে দেশের মঙ্গলকর কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিবার জন্য যদি আবশ্যক বোধ হয়, তাহা হইলে বরং বিশ্ববিদ্যালয় পরিত্যাগ করিব তথাপি স্বদেশ সেবা পরিত্যাগ করিব না।

 এই সভার উদ্দেশ্যের বিস্তার ও প্রসার বৃদ্ধি হইয়াছিল তজন্য ইহার নামকরণে পরিবর্তন সঙ্ঘটন বাঞ্ছনীয় বোধ হয় নাই। বঙ্গদেশে যেখান হইতে ছাত্রদিগের প্রতি অত্যাচারবিষয়ক সংবাদ আসিয়াছে সেইখানেই এই সমিতি নেতাদিগের পরামর্শানুসারে সহায়তা করিতে অগ্রসর হইয়াছেন। এম্-এ পরীক্ষোত্তীর্ণ ছাত্রেরা পর্য্যন্ত গৃহে গৃহে বস্ত্রাদি বহন করিয়া বিনালাভে সরবরাহ করিয়া বেড়াইয়াছিলেন।

 সমিতির কার্য্য নিম্নলিখিত বিভাগ অনুসারে চলিয়াছিল:—

 ১। বিদ্যালয় বিভাগ। যে সকল ছাত্র স্বদেশানুরাগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় হইতে বিতাড়িত হইয়াছিলেন বা নিগৃহীত হইয়াছিলেন তাঁহাদিগের শিক্ষার্থ এই বিভাগে কার্য্য হইত। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাত্তীর্ণ ব্যক্তিরা অধ্যাপনা করিতেন।

 ২। সঙ্গীত বিভাগ। এই বিভাগ হইতে পথে পথে সঙ্কীর্ত্তন প্রচার প্রভৃতি কার্য্য হইত।

 ৩। অনুসন্ধান বিভাগ। কেহ বিলাতী জিনিস ক্রয় করে কি না, এবং করিলে অনুরোধ, অমুনয়, যুক্তি বা তর্কের সাহায্যে তাহাকে ফিরান যায় কি না তদ্বিষয়ে এই বিভাগ ব্যাপৃত থাকিতেন। বিলাতী দ্রব্যাদি বিক্রেতার পণ্যাদি প্রত্যর্পণ বা বিনষ্ট করিবার জন্য সকল সময়ে সচেষ্ট থাকিতেন।

 ৪। বিক্রয় বিভাগ। বিনা লাভে গৃহে গৃহে স্বদেশীয় বস্ত্রাদি সরবরাহ করা, ও সমিতির কার্য্যালয়ে বিক্রয় করা এই বিভাগের কার্য্য। ইহার কার্য্যকলাপ চারিদিকে সুফল উৎপন্ন করিয়াছিল। অধিক লাভের আশায় ও লোভে পড়িয়া যে সকল দোকানদার দর চড়াইয়া বিক্রয় করত এই বিভাগের কার্য্যে তাহাদিগের দমন হইয়াছিল। ইচ্ছা করিলেই ক্রেতারা এই বিভাগের কল্যাণে দেশীয় দ্রব্যাদি উচিত মূল্যে পাইতেন।

 ৫। প্রচার বিভাগ। এই বিভাগ হইতে প্রচারকেরা চারি দিকে স্বদেশের মঙ্গলকর রাজনীতিক প্রচার কার্য্যে ব্যাপৃত ছিলেন। অনেক সুবক্তা উন্নতচরিত্র যুবক এই বিভাগে পরিশ্রম করিয়াছিলেন।

 আমরা অতি সংক্ষেপে এই এণ্টিসার্কুলার সোসাইটির কার্য্য প্রণালী বিবৃত করিলাম। এই সভার ভিন্ন ভিন্ন বিভাগের শাখা সমিতি চারি দিকে প্রতিষ্ঠিত হইলে আমাদিগের কার্য্য কিরূপ সুশৃঙ্খলার সহিত নির্ব্বাহিত হইতে পারে তাহা চিন্তাশীল ও কার্য্যক্ষম ব্যক্তি মাত্রেই সহজে হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিবেন।

 যুবকেরা যে অধ্যবসায় সহকারে দেশের কার্য্য করিয়াছিলেন, তাহা অনেক বয়োবৃদ্ধেরও অনুকরণীয় ইহা বলাই বাহুল্য। দুঃখের বিষয় সকলের প্রতিকৃতি সংগ্রহ করিয়া এই পুস্তকে সন্নিবিষ্ট করিতে পারিলাম না।



স্বদেশ-সেবক সম্প্রদায়।

 এই সমিতির সদস্যগণ দেশহিতকর সঙ্গীতে যে যে স্থানে ভাবের উদ্দীপনা করিতেছিলেন, তাহার ফলে স্বদেশজাত বস্তুর প্রচার ও স্বদেশানুরাগের বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হইতেছিল। অনেক স্থলে দেখা গিয়াছে বহু বক্তৃতাতেও যে ভাবের বিকাশ ঘটে নাই, ইঁহাদিগের একটী গানে তদপেক্ষা অল্পায়াসে সেই সকল ভাবোদ্রেক হইয়াছে। এই সম্প্রদায়ের ব্যয়ভার শ্রীযুক্ত কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ বহন করিয়াছিলেন।