১৯০৫ সালে বাংলা/প্রকাশ্য সভা
প্রকাশ্য সভা।
সেই সময়ে বাহিরে একটি প্রকাশ্য সভা করিবার প্রস্তাব হয়। কাব্যবিশারদ মহাশয় সেই প্রস্তাব করিয়াছিলেন। বিপিন বাবু সেই সভায় যোগদান করিলেন না। তিনি বলিলেন, আমার বিশেষ কার্য্য আছে। এই বলিয়া তিনি সেই স্থান হইতে প্রস্থান করিলেন। ঐ প্রকাশ্য সভায় পুলিশের আদেশের বিরুদ্ধে বক্তৃতা করা বাঞ্ছনীয় কি না, এ তর্কও তিনি তুলিলেন না। সভা আরম্ভ হইতে না হইতে বিপিন বাবু অন্য দিক্ দিয়া চলিয়া গেলেন। বলা বাহুল্য, সুরেন্দ্র বাবুর অনুমতি লইয়া এ সভা আরব্ধ হয়। কাব্যবিশারদ মহাশয় প্রথমেই বক্তৃতা করেন। তিনি বক্তৃতা মুখে অতীব ওজস্বিনী ভাষায় বিলাতী বর্জ্জন ও স্বদেশী দ্রব্যের গ্রহণ, রাজপুরুষদিগের অত্যাচারের অবৈধতা, সেই দিবসের অত্যাচার ও সভাভঙ্গ প্রভৃতি সম্বন্ধে আলোচনা করেন।
কাব্যবিশারদের বক্তৃতায় পর দেশের গৌরব, বাগ্মিপ্রবর সুরেন্দ্রনাথ সেই সভাতে বক্তৃতা করেন। তাঁহার বক্তৃতায় শ্রোতৃবৃন্দ মন্ত্রমুগ্ধবৎ হইয়াছিল। সুরেন্দ্র বাবুর উদ্দীপনাপূর্ণ এবং প্রবল স্বদেশপ্রীতিব্যঞ্জক বক্তৃতা শ্রবণ করিয়া সমবেত জন-মণ্ডলী উৎসাহে প্রদীপ্ত, করুণায় বিগলিত, রোষে উত্তেজিত, এবং অননুভূপূর্ব্ব ভাবাবেশে রোমাঞ্চিত হইয়া উঠিয়াছিল। ময়মনসিংহ প্রবাসী জনৈক হিন্দুস্থানী সুবক্তা হিন্দী ভাষায় বক্তৃতা করিয়া স্বীয় মনোভাব ব্যক্ত করেন। সভাপতি মিঃ রসুল মহাশয়কে দর্শন করিবাব জন্য এই সময়ে উপস্থিত জন-সাধারণ আগ্রহ প্রকাশ করায় সভাপতি মহাশয়কে একটি চৌকির উপর উঠাইয়া সকলকে প্রদর্শিত করা হয়। তাঁহার সৌম্যমূর্ত্তি দর্শন করিয়া সকলে উৎসাহ বিহ্বল চিত্তে সমস্বরে আল্লা হো আকবর ও ‘বন্দেমাতরম্” ধ্বনিতে দিঙ্মণ্ডল পূর্ণ করেন। মৌলবী আবুল হোসেন ও শ্রীযুক্ত গীষ্পতি রায় চৌধুরী মহাশয়েরা বক্তৃতা করিলে সুরেন্দ্রনাথের জয়ধ্বনি সহকারে সভাভঙ্গ হয়।