আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ)/দয়ালুতা ও ন্যায়পরতা
দয়ালুতা ও ন্যায়পরতা
জর্ম্মনির সম্রাট দ্বিতীয় জোজেফের এই রীতি ছিল, সামান্য পরিচ্ছদ পরিধান করিয়া, রাজধানীর উপশল্যে একাকী পদব্রজে ভ্রমণ করিতেন। একদা, এক দীন বালক তদীয় সৌম্যমুর্ত্তি দর্শনে সাহসী হইয়া, সহসা তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হইল। তাঁহাকে সম্রাট্ বলিয়া জানিত না, একজন সামান্য ধনবান্ ব্যক্তি জ্ঞান করিয়া, অশ্রুপূর্ণলোচনে, কাতরবচনে বলিল, মহাশয়, আপনি কৃপা করিয়া আমায় কিছু ভিক্ষা দেন। সম্রাট্ অত্যন্ত দয়ালুস্বভাব, এই ব্যাপার দর্শনে তাঁহার অন্তঃকরণে করুণা-সঞ্চার হইল। তিনি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, অহে বালক, তোমার আকারপ্রকার ও প্রার্থনাপ্রণালী দেখিয়া স্পষ্ট বোধ হইতেছে, তুমি অতি অল্প দিন ভিক্ষা করিতে আরম্ভ কবিয়াছ।
এই কথা শ্রবণমাত্র বালক বলিল, মহাশয়, আমি ইহার পূর্ব্বে কখনও কাহারও নিকট ভিক্ষা করি নাই, আমাদের অত্যন্ত দুরবস্থা ও বিপদ ঘটিয়াছে, এজন্য আজ ভিক্ষা করিতে আসিয়াছি। অল্পদিন হইল, আমার পিতৃবিযোগ হইয়াছে। আমাদের কেহ সহায় নাই, এবং জীবিকা নির্ব্বাহের কোনও উপায় নাই। আমরা দুই সহোদর, আমি জ্যেষ্ঠ। আমাদের জননী আছেন, তিনি অত্যন্ত পীডিত হইয়া শয্যাগত রহিয়াছেন। সম্রাট জিজ্ঞাসা করিলেন, কে তোমার জননীর চিকিৎসা করিতেছে। বালক বলিল, মহাশয়, তিনি বিনা চিকিৎসায় পড়িয়া আছেন, চিকিৎসককে দিতে, অথবা চিকিৎসক যে ঔষধের ব্যবস্থা করিবেন, তাহা কিনিতে পারি, আমাদের এমন সঙ্গতি নাই, সেই জন্য ভিক্ষা করিতে আসিয়াছি।
দীন বালকের মুখে দুরবস্থাবর্ণন শ্রবণ করিয়া, সম্রাটের হৃদয়ে প্রভূত কারুণ্যরস উচ্ছ্বলিত হইল। তিনি, শোকপূর্ণ দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ পূর্ব্বক, সেই বালকের বাটীর ঠিকানা জানিয়া লইলেন, এবং তাহার হস্তে কতিপয় মুদ্রা প্রদান পূর্ব্বক বলিলেন, তুমি সত্বর তোমার জননীর নিমিত্ত চিকিৎসক লইয়া যাও, কোনও খানে বিলম্ব করিও না। বালক, মুদ্রালাভে প্রফুল্ল হইয়া, চিকিৎসক আনিবার নিমিত্ত দ্রুতবেগে প্রস্থান করিল।
এদিকে, সম্রাট অন্বেষণ করিতে করিতে, সেই বালকের আলয়ে উপস্থিত হইলেন, এবং দর্শনমাত্র বুঝিতে পারিলেন, বালক যেরূপ বর্ণন কবিয়াছিল, তাহাদের দুরবস্থা তদপেক্ষা অনেক অধিক, দেখিলেন, তাহার জননী শয্যাগত আছে, আর, একটা শিশুসন্তান নিতান্ত অশান্ত হইয়া তাহার পার্শ্বে রোদন ও উৎপাত করিতেছে। তিনি তাহার নিকটবর্ত্তী হইয়া, চিকিৎসাব্যবসায়ী বলিয়া আপন পরিচয় দিলেন, এবং নিরতিশয় সদয়ভাবে, মৃদুবচনে তাহার পীড়ার বিষয়ে সবিশেষ সমস্ত জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন।
তদীয় সদয় ভাব অবলোকন ও কোমল সম্ভাষণ শ্রবণ করিয়া, সেই স্ত্রীলোক বলিল, মহাশয, কযেক দিবস অবধি আমার অতিশয় পীড়া হইয়াছে বটে, কিন্তু আমি পীড়া অপেক্ষা, দুরবস্থায় অধিক অভিভূত হইযাছি, আমার দুর্ভাগ্যের বিষয়ে আপনার নিকটে কি পরিচয় দিব। অল্প দিন হইল, স্বামীর মৃত্যু হইয়াছে, যাহা কিছু সংস্থান ছিল, অমুক বণিক্ দেউলিয়া হওযাতে, সমস্ত লোপ পাইয়াছে। আমার দুটি সন্তান, দুটিই শিশু, উহাদের প্রতিপালনের কোনও উপায় নাই। বিশেষতঃ, আমার উৎকট রোগ জন্মিয়াছে, অর্থাভাবে চিকিৎসা হইতেছে না, সুতরাং ত্বরায় আমার প্রাণবিয়োগ হইবে, তখন এই দুই হতভাগ্যের কি দশা ঘটিবে, সেই ভাবনায় আমি অতিশয় অভিভূত হইয়াছি। বড় পুত্রটি অতিশয় মাতৃবৎসল, সে আমার চিকিৎসার নিমিত্ত ভিক্ষা করিতে গিয়াছে।
এই অনাথ পরিবারের দুরবস্থা শ্রবণ করিয়া, সম্রাট সাতিশয় শোকাকুল হইলেন, এবং বাষ্পবারিপরিপূরিত নয়নে বলিলেন, তুমি উদ্বিগ্ন হইও না, তোমার এ দুরবস্থা অধিক দিন থাকিবে না। ত্বরায় তোমার রোগশান্তি ও দুঃখশান্তি হইবে, তাহার সন্দেহ নাই। এক্ষণে তুমি আমায় একখণ্ড কাগজ দাও, তোমাব অবস্থানুরূপ ঔষধের ব্যবস্থা লিখিয়া দিতেছি। অন্য কাগজ ছিল না, এজন্য সেই স্ত্রীলোক, জ্যেষ্ঠ পুত্রের পড়িবার পুস্তকের প্রান্তভাগে যে কাগজ ছিল, তাহাই ছিন্ন করিয়া তাঁহার হস্তে দিল। তিনি, লিখন সমাপ্ত করিয়া টেবিলের উপর রাখিযা দিলেন, এবং আমি যে ব্যবস্থা করিলাম, উহাতে তুমি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যলাভ করিবে, এই বলিয়া প্রস্থান করিলেন।
সম্রাট বহির্গত হইবার অব্যবহিত পরক্ষণেই, সেই দুঃখিনীর জ্যেষ্ঠ পুত্র, চিকিৎসক সঙ্গে লইয়া গৃহপ্রবেশ করিল, এবং আহ্লাদে অধীর হইয়া জননীকে সম্ভাষণ করিয়া বলিতে লাগিল, মা, তুমি আর ভাবনা করিও না, আমি টাকা পাইয়াছি ও চিকিৎসক আনিয়াছি। পুত্রের আহ্লাদ দর্শনে, তাহার নয়নদ্বয় অশ্রুপূর্ণ হইয়া আসিল। সে, পুত্রকে পার্শ্বে বসাইয়া, তাহার মুখচুম্বন করিল, এবং বলিল, বৎস, তোমার যত্ন ও আগ্রহ দেখিয়া আমার বোধ হইতেছে, তুমি অতিশয় মাতৃবৎসল, জগদীশ্বর তোমায় দীর্ঘজীবী ও নিরাপদ করুন। এই বলিয়া সে বলিল, আর চিকিৎসক না হইলেও চলিত। ইতঃপূর্ব্বে একজন আসিয়াছিলেন। তিনি অত্যন্ত দয়ালু, ঔষধের ব্যবস্থা লিখিয়া, টেবিলের উপর রাখিয়াছেন, আমায় অনেক উৎসাহ ও আশ্বাস দিয়া এইমাত্র চলিয়া গেলেন।
এই কথা শুনিয়া, পুত্রের আনীত চিকিৎসক সেই স্ত্রীলোককে বলিলেন, যদি তোমার আপত্তি না থাকে, তিনি কি ব্যবস্থা করিয়া গিয়াছেন, দেখি। সে বলিল আমার কোনও আপত্তি নাই, আপনি স্বচ্ছন্দে দেখুন। তখন তিনি, সেই কাগজ হস্তে লইয়া, সম্রাটের স্বাক্ষরদর্শনে চকিত হইয়া উঠিলেন, এবং বলিলেন, আজ তোমার কি সৌভাগ্যের দিন বলিতে পারি না। আমার পূর্ব্ব যে ব্যক্তি আসিযাছিলেন, তিনি অন্যবিধ চিকিৎসক। তিনি তোমার পক্ষে যে ব্যবস্থা করিয়া গিয়াছেন, আমার সেরূপ ব্যবস্থা করিবার ক্ষমতা নাই। তাঁহার ব্যবস্থা দ্বারা তোমার যেরূপ উপকার দর্শিবে, আমার ব্যবস্থায় কোনও ক্রমে সেরূপ হওয়া সম্ভাবিত নহে। অধিক আর কি বলিব, আজ অবধি তোমার দুরবস্থার অবসান হইল। যিনি তোমার আলয়ে আসিয়াছিলেন, তিনি চিকিৎসক বা অন্যবিধ ব্যক্তি নহেন, জর্ম্মনির সম্রাট্ পরম দয়ালু দ্বিতীয় জোজেফ্। তিনি তোমার দুরবস্থাদর্শনে দয়ার্দ্রচিত্ত হইয়া, এই কাগজে তোমাকে অনেক টাকা দিবার অনুমতি লিখিয়া দিয়াছেন।
শ্রবণমাত্র, সেই স্ত্রীর ও তাহার পুত্রের অন্তঃকরণে যেরূপ ভাবের উদয় হইতে লাগিল, তাহার বর্ণন করিতে পারা যায় না। তাহারা উভয়েই, সম্রাটের দয়া ও সৌজন্যের একশেষ দর্শনে, মোহিত ও চমৎকৃত হইয়া, কিয়ৎ ক্ষণ স্তব্ধ হইয়া রহিল, অনন্তর অশ্রুপূর্ণলোচনে, গদগদবচনে, জগদীশ্বরের নিকট তাঁহার অচল রাজ্য ও দীর্ঘ আয়ুর প্রার্থনা করিতে লাগিল। এই অতর্কিত আনুকূল্য লাভ করিয়া, সেই স্ত্রীলোক ত্বরায় রোগমুক্ত হইল, এবং সুখে ও স্বচ্ছন্দে সংসারযাত্রানির্ব্বাহ করিতে লাগিল।
আর একদিন সম্রাট্ রাজপথে একাকী ভ্রমণ করিতেছেন, এমন সময়ে এক দীন বালিকা সেই পথ দিয়া আপনার বস্ত্র বিক্রয় করিতে যাইতেছে। সে সম্রাটকে চিনিত,না, সুতরাং তাঁহাকে লক্ষ্য না করিয়া, তাঁহার সম্মুখ দিয়া, চলিয়া যাইতে লাগিল। কিন্তু, তিনি তাহার মুখ দেখিয়া স্পষ্ট বুঝিতে পারিলেন, সে অত্যন্ত দুরবস্থায় পড়িয়াছে। তখন তিনি তাহাকে সদয় সম্ভাষণ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, অয়ি বালিকে। কি জন্য তোমায় বিবর্ণ ও বিষণ্ন দেখিতেছি, বল।
এই সস্নেহবাক্য শ্রবণগোচর করিয়া, বালিকা দণ্ডায়মান হইল, এবং বলিতে লাগিল, মহাশয়, কিছু দিন হইল, আমি পিতৃহীন হইয়াছি, আমাদের এরূপ দুরবস্থা যে, দিনপাত হওয়া কঠিন। আমার জননী অসুস্থ হইয়াছেন, তাঁহার পথ্য ও ঔষধের নিমিত্ত, আর কোনও উপায় দেখিতে না পাইয়া, অবশেষে আমার পরিধেয় বস্ত্র বিক্রয় করিতে যাইতেছি, আমার আর বস্ত্র নাই। আজ ইহা বিক্রয় করিয়া কঞ্চিৎ চলিবে, কাল কি উপায় হইবে, এই ভাবিয়া আমি অস্থির হইয়াছি। বোধ হয়, পথ্য ও ঔষধের অভাবে, জননীকে প্রাণত্যাগ করিতে হইবে।
এই বলিতে বলিতে সেই বালিকার নয়নযুগল হইতে, প্রবলবেগে বাষ্পবারি বিগলিত হইতে লাগিল। সে কিয়ৎক্ষণ মৌনাবলম্বন করিয়া রহিল, অনন্তর শোকসংবরণ করিয়া বলিতে লাগিল, মহাশয, যদি এ রাজ্যে ন্যায় অন্যায় বিচার থাকিত, তাহা হইলে কখনই আমাদের এরূপ দুরবস্থা ঘটিত না। আমার পিতা, বহুকাল সৈন্যসংক্রান্ত কর্ম্মে নিযুক্ত ছিলেন, এবং, যেরূপ যত্ন ও উৎসাহ সহকারে কার্য্যনির্ব্বাহ করিয়াছিলেন, সম্রাট ন্যায়বান হইলে, তিনি সবিশেষ পুরস্কার পাইতে পারিতেন, পুরস্কার পাওয়া দূরে থাকুক, যখন তিনি বৃদ্ধ ও অকর্মণ্য হইলেন, তখন আর সম্রাট তাঁহার কোনও সংবাদ লইলেন না। তিনি অর্থাভাবে, শেষ দশায় অনেক ক্লেশভোগ করিয়া প্রাণত্যাগ করিয়াছেন।
সম্রাট্ শুনিয়া সাতিশয় দুঃখিত ও শোকাকুল হইলেন,এবং তাহাকে সান্ত্বনাপ্রদানার্থ বলিলেন, তুমি সম্রাটের উপর যে দোষারোপ করিতেছ, তাহা বোধ হয় বিচারসিদ্ধ নহে। তাঁহার উপর তোমাদের যে দাওয়া আছে, হয় ত তিনি তাহা জানিতেই পারেন নাই। তাঁহাকে রাজ্যশাসনসংক্রান্ত নানা বিষয়ে নিরন্তর ব্যাপৃত থাকিতে হয়। তোমার পিতার দুরবস্থার বিষয় তাঁহার গোচর হইলে, অবশ্যই তিনি সমুচিত বিবেচনা করিতেন। এক্ষণে তোমায় পরামর্শ দিতেছি, সবিশেষ সমস্ত বিবরণ লিখিয়া, তাঁহার নিকট প্রার্থনাপত্র প্রদান কর।
এই কথা শুনিয়া বালিকা বলিল, মহাশয়, আপনি প্রার্থনাপত্র প্রদানের পরামর্শ দিতেছেন বটে, কিন্তু তদ্দারা আমাদের উপকারের কোনও প্রত্যাশা নাই। আমাদের কেহ সহায় নাই। দুঃখীর পক্ষে অনুকূল কথা বলেন, এমন লোক দেখিতে পাই না। যদি আমাদের সম্পত্তি থাকিত, অনেকে আমাদের আত্মীয় হইতেন ও সহায়তা করিতেন। আমাদের মত লোকের প্রার্থনা সম্রাটের গোচর হওযা, কোনও মতে সম্ভাবিত নহে। তখন সম্রাট বলিলেন, তুমি সে জন্য উদ্বিগ্ন হইও না। সম্রাটের নিকট আমার বিলক্ষণ প্রতিপত্তি আছে। আমি অঙ্গীকার করিতেছি, সাধ্যানুসারে তোমাদের সহায়তা করিব। আর বোধ করি, যাহাতে তোমাদের পক্ষে যথার্থ বিচার হয়, আমি তাহা করিতে পারিব।
ইহা বলিয়া, তিনি সেই বালিকার হস্তে কতিপয় মুদ্রা প্রদান পূর্ব্বক বলিলেন, তোমার বস্ত্রবিক্রয় করিবার প্রয়োজন নাই, গৃহে গমন কর। তুমি দুই দিবস পরে রাজবাটীতে গিয়া, আমার সহিত সাক্ষাৎ করিবে। ইতিমধ্যে আমি তোমাদের বিষয়ে চেষ্টা দেখিব, এবং কত দূর করিতে পারি, তাহা তোমাকে জানাইব। তুমি ঐ দিন অবশ্য আমার নিকটে যাইবে, কোনও মতে অন্যথা করিবেনা। এই বলিয়া সম্রাট্ তাহার পিতার নাম জানিয়া লইলেন; এবং তাহাকে আশ্বাসিত হইতে বলিয়া প্রস্থান করিলেন।
বালিকা তাঁহার এইরূপ নিরুপাধি দয়া ও অসামান্য সৌজন্য দর্শনে, মোহিত ও চমৎকৃত হইল, এবং আহ্লাদে পুলকিত হইয়া, বাষ্পবারিপরিপূরিতনয়নে কিয়ৎক্ষণ তাঁহার দিকে নিরীক্ষণ করিয়া রহিল, পরে তিনি দৃষ্টিপথের বহির্ভূত হইলে, গৃহপ্রতিগমনপূর্ব্বক, সবিশেষ সমস্ত আপন জননীর গোচর করিল।
সম্রাট্ রাজবাটীতে প্রবিষ্ট হইয়াই উপস্থিত বিষয়ের তত্ত্বানুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইলেন, এবং অবিলম্বে জানিতে পারিলেন, বালিকা যাহা বলিয়াছিল, তাহার সমস্তই সম্পূর্ণ সত্য। বালিকা ও তাহার জননী যে অকারণে এত দিন কষ্টভোগ করিতেছে, এবং তাহার পিতাও যে, শেষদশায় ক্লেশভোগ করিয়া প্রাণত্যাগ করিয়াছে, সে জন্য তিনি যৎপরোনাস্তি ক্ষোভ ও পরিতাপ প্রাপ্ত হইলেন, এবং কালবিলম্ব না করিয়া তাহাদের উভয়কে রাজবাটীতে আনাইলেন। সেই বালিকার পিতা যত বেতন পাইতেন, তৎসমান পেন্সন্ প্রদানের আদেশ দিয়া, তিনি তাহাদিগকে বিনীতভাবে বলিলেন, যথাকালে পেন্সন্ না পাওয়াতে তোমাদিগকে অনেক ক্লেশভোগ করিতে হইয়াছে, সে জন্য আমি তোমাদের নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করিতেছি। তোমরা বিবেচনা করিয়া দেখ, আমি ইচ্ছাপূর্ব্বক তোমাদিগকে ক্লেশ দি নাই। যদি তোমাদের পরিচিতের মধ্যে কাহারও পক্ষে কোনও অন্যায় ঘটিয়া থাকে, এই প্রার্থনা করিতেছি, তোমরা তাহাদিগকে আমায় জানাইতে বলিবে।
এই বলিয়া সম্রাট তাহাদিগকে বিদায় দিলেন, এবং তদবধি এই নিয়ম করিলেন, এবং এই ঘোষণা করিয়া দিলেন যে, তিনি সপ্তাহের মধ্যে অমুক দিন, অমুক সময়ে প্রজাদের সহিত সাক্ষাৎ করিবেন, এবং যাঁহার যে প্রার্থনা বা অভিযোগ থাকে, তিনি সেই সময়ে তাঁহাকে জানাইতে পারিবেন।
সম্পূর্ণ।