আজাদী সৈনিকের ডায়েরী/আজাদী সৈনিকের প্রতিজ্ঞাপত্র
৩০শে নভেম্বর ১৯৪৩:
আজ আমি রিক্রুট্মেণ্ট অফিসে। অনেক লোক আসিতেছে সৈন্যদলে যোগদানের জন্য। আজাদ হিন্দ্ ফৌজের প্রত্যেক সৈনিককে, এই প্রতিজ্ঞা করিতে হইবে—
‘আমি স্বেচ্ছায় আজাদ হিন্দ্ ফৌজে যোগদান করিয়া সৈন্যশ্রেণীভুক্ত হইতেছি। আমি সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সহিত ভারতবর্ষের সেবায় আত্মোৎসর্গ করিতেছি এবং মাতৃভুমির স্বাধীনতার জন্য জীবন পণ করিতেছি।
‘আমি সর্বপ্রকারে—এমন কি জীবন পণেও ভারতের সেবা করিব এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশ গ্রহণ করিব। নিজেকে দেশের সেবায় উৎসর্গ করিয়া কখনো ব্যক্তিগত স্বার্থকামনা করিব না। প্রত্যেক ভারতবাসীকে আমার ভ্রাতা ও ভগ্নী বলিয়া মনে করিব। ধর্ম, ভাষা বা ভৌগোলিক সংস্থানকে আমি কখনো প্রাধান্য দিব না।
১লা ডিসেম্বর ১৯৪৩:
অসামরিক ভারতীয়দের মধ্যে যাঁহারা আজাদ্ হিন্দ্ ফৌজে যোগদান করিতে ইচ্ছুক তাঁহাদের ভর্তি করা হইতেছে।
সকাল হইতে লোক আসিতেছে দলে দলে। সকলের মধ্যেই অসীম উৎসাহ! ডাক্তারী পরীক্ষায় যাহারা পাশ হইল না, তাহাদের জন্য সহানুভূতি হইল।
আজিজ্ আসিয়া প্রতিজ্ঞাপত্র দেখিল, কিন্তু সহি করিল না।
তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম—‘তুমি কি যোগ দিবে না?’
সে বলিল—‘ভাবিতেছি। আপনি তো গোয়ার লোক—পর্ত্তুগীজ গভর্ণমেণ্টের প্রজা। তাহারা যুদ্ধের মধ্যে নাই। সুতরাং হার-জিত যাহাই হউক না কেন, আপনাকে কেহ কিছু করিতে পারিবে না। কিন্তু যদি বৃটিশ শেষ পর্য্যন্ত জয়লাভ করে, তাহা হইলে আমাদের দুর্দ্দশা হইবে।
আজিজ চলিয়া গেল।
আজ প্রায় ৮ হাজার লোক স্বেচ্ছায় নাম লিখাইয়াছে। নেতাজী সত্যই মানুষকে মাতাইতে পারেন।
৬ই ডিসেম্বর ১৯৪৩:
আজ রেডিওতে শুনিলাম, কাল কলিকাতার খিদিরপুর ডকে জাপানীরা বোমা ফেলিয়াছে। উহারা কি নিজেরাই ভারত আক্রমণ করিল?