আজাদী সৈনিকের ডায়েরী/আরাকান রণাঙ্গনে
১লা মার্চ্ ১৯৪৪:
অজাদ হিন্দ ফৌজের কয়েকদল ইতিমধ্যেই আরাকান্ ও চিন্ হিলের দিকে চলিয়া গিয়াছে। চিন্ পর্ব্বতমালা বামার উত্তর-পশ্চিমে ভারত সীমান্তে অবস্থিত।
আজ আমি লেফট্ন্যাণ্ট পদে উন্নীত হইয়াছি। নেতাজী আমার কার্য্যে সন্তুষ্ট হইয়াছেন। সিঙ্গাপুরে মিলিটারি শিক্ষা গ্রহণ করিয়াছিলাম। অফিসের কাজ ভাল লাগে না; যুদ্ধক্ষেত্রে যাত্রার জন্য আবেদন করিয়াছি।
২রা মার্চ ১৯৪৪: কালেওয়া:
আমাদের ছোট একটি দল কালেওয়া আসিয়াছে। পাহাড়ের উপর একটি ছোট শহর—উত্তর বর্মার চিন্দুইন্ জেলায়। মণিপুর নদীর কাছেই তাঁবুতে আছি। মণিপুর নদী এইখানে চিন্দুইন্ নদীর সঙ্গে মিলিয়াছে। শীত খুব—কম্বলে ভাঙ্গে না। দাক্ষিণাত্যের অধিবাসী— শীতে অভ্যস্ত নই; সুতরাং কষ্ট হইতেছে।
ফালাম হইতে হবিব আসিয়াছে। সেখানে শাত আরও বেশী। ফালাম্ ৫৩০০ ফিট্।
আরাকান ও মণিপুর রাজ্যের সীমান্তে—কালে, কালেওয়া, কিনাত, টিডডিম্ প্রভৃতি স্থানে চিন্দুইন্ ও মণিপুর নদী ধরিয়া আমাদের সৈন্য সমাবেশ করা হইয়াছে। তিন ডিভিসন সৈন্য এই আক্রমণে নিযুক্ত হইয়াছে। প্রত্যেক ডিভিসনে আছে প্রায় ৭।৮ হাজার সৈনিক।
১নং ডিভিসন্—সুভাষ বসু বাহিনী
২নং ডিভিসন্—গান্ধী বাহিনী
৩নং ডিভিসন্—আজাদ বাহিনী।
একটি রিজার্ভ সৈন্যদল আছে মান্দালয়ে।
৩রা মার্চ ১৯৪৪:
আজ নেতাজীর বাণী প্যারেডের সময় পড়িয়া শুনানো হইল। রণাঙ্গনে অবস্থিত সেনাবাহিনীর উদ্দেশে এই বাণী তিনি দিয়াছেন:—
সমগ্র পৃথিবীর দৃষ্টি আরাকান রণাঙ্গনের উপর নিবদ্ধ হইয়াছে—যেখানে আজ দূর প্রসারী ফলপ্রসূ ঘটনাসমূহ ঘটিতেছে। জাপানী বাহিনীর সহিত সহযোগে আজাদ হিন্দ ফৌজের গৌরববাজ্জ্বল বীরত্ব এই অংশে ইংরেজ ও আমেরিকার পাল্টা আক্রমণের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করিয়াছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস—আরাকান রণাঙ্গনে আমাদের সহকর্মীগণের আদর্শ আজাদ হিন্দ ফৌজের সকল অফিসার ও সৈনিককে অনুপ্রাণিত করিবে।
আমাদের বহুদিনের আকাঙ্ক্ষিত দিল্লী অভিমুখে যাত্রা আজ আরম্ভ হইয়াছে। আরাকান পর্বতমালার উপর যে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা প্রোথিত হইয়াছে, যতদিন না তাহা বড়লাটের প্রাসাদে উড়ে ততদিন আমাদের এই যাত্রা চলিবে।
বন্ধুগণ, ভারতের মুক্তি বাহিনীর অফিসার ও সৈনিকগণ! তোমাদের মনে যেন একটি দৃঢ় সঙ্কল্প থাকে—‘হয় স্বাধীনতা, না হয় মৃত্যু’। আমাদের মুখে শুধু একটি বুলি থাকিবে—‘দিল্লী চলো।’ দিল্লীর পথই স্বাধীনতার পথ। ঐ পথেই আমাদের মার্চ্ করিতে হইবে। জয় আমাদের নিশ্চয়ই হইবে।