আনন্দী বাঈ/দ্বিতীয় অধ্যায়
বিবাহের পর দুই বৎসরের মধ্যেই আনন্দী বাঈ গর্ভবতী হইলেন। যথাসময়ে তাঁহার একটী পুত্রলাভ হইল। কিন্তু দশ দিনের অধিক কাল ঐ শিশু ইহলোকে অবস্থান করিতে পারে নাই। যে মহান্ আদর্শ প্রদর্শনের জন্য আনন্দী বাঈ ইহজগতে আসিয়াছিলেন, বোধ হয় তাহার পথ পরিস্কৃত করিবার জন্যই ভগবান এই দুর্ঘটনার সংঘটন করিলেন।
আনন্দী বাঈর শিক্ষার সুবিধার জন্য তাঁহার স্বামী গোপাল রাও কল্যাণ পরিত্যাগপূর্ব্বক আলিবাগে গমন করিয়াছিলেন। তথায় অবস্থানকালে এক বৎসরের মধ্যে আনন্দী বাঈর মারাঠী শিক্ষা শেষ হয়। ইহার পর প্রসূতি অবস্থায় তাঁহার কয়েক মাস পিত্রালয়ে অতিবাহিত হইয়াছিল। পুত্রশোকে আনন্দী বাঈ এক মাস কাল বিমর্ষভাবে যাপন করিয়া পুনরায় লেখাপড়া শিক্ষায় মনোনিবেশ করেন। এই সময়ে গোপাল রাও তাঁহাকে ইংরাজী শিখাইতে আরম্ভ করিলেন। আনন্দী বাঈরও বিদ্যাশিক্ষার প্রতি অনুরাগ বাড়িতে লাগিল। তাহার ধীশক্তি অতীব প্রখরা ছিল বলিয়া তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যেই নিয়মিত পাঠাভ্যাস শেষ করিয়া বহু সংখ্যক সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রাদি পাঠে সময়ক্ষেপ করিতেন। গৃহসংক্রান্ত পত্রাদি লিখিবার ভারও গোপাল রাও তাঁহারই প্রতি অর্পণ করায় তাঁহার রচনায় নৈপুণ্যলাভ ও হস্তাক্ষর সুন্দর হইল। কিন্তু তাঁহাকে স্বেচ্ছামত শিক্ষিতা করিতে গিয়া গোপাল রাও এরূপ বিপন্ন হইলেন যে, তাঁহাকে অল্প দিবসের মধ্যেই বাধ্য হইয়া আলিবাগ পরিত্যাগ করিতে হয়।
ইংরাজী শিক্ষাদানের সঙ্গে সঙ্গে গোপাল রাও স্বীয় পত্নীকে লইয়া প্রায়ই সমুদ্রতীরে বায়ু-সেবনার্থ গমন করিতেন। ইহাতে অনেকেরই দৃষ্টি তাঁহার ব্যবহারের প্রতি আকৃষ্ট হয়। মহারাষ্ট্র-সমাজে অবগুণ্ঠন ও অবরোধের প্রথা না থাকিলেও এরূপভাবে যুবতী পত্নীকে লইয়া সমুদ্র তীরে ভ্রমণ সাধারণের চক্ষে দূষণীয় বলিয়া প্রতীয়মান হইল। এই কারণে দুষ্ট জনেরা গোপাল রাওকে লইয়া নানা প্রকার রহস্য বিদ্রূপ করিতে লাগিল। পরিশেষে তাহারা তাঁহাকে এরূপ উত্ত্যক্ত করিয়া তুলিল যে তিনি কোহ্লাপুরে আপনার বদলি করিয়া লইলেন। এই সময়ে আনন্দী বাঈর বয়ঃক্রম ত্রয়োদশ বৎসর ছিল।
কোহ্লাপুর দেশীয় করদ রাজ্য। তত্রত্য রাজপুরুষেরা স্ত্রীশিক্ষা বিষয়ে মনোযোগপ্রকাশ করিতেন। সেখানকার মহারাজের ব্যয়ে তথায় একটি স্ত্রী-বিদ্যালয় স্থাপিত হইয়াছিল। কুমারী মাইসী নাম্নী এক শ্বেতাঙ্গ-মহিলা সেই বিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের কার্য্যে নিয়োজিতা ছিলেন। এই সকল সংবাদ অবগত হইয়াই গোপাল রাও কোহ্লাপুরে গমন করিয়াছিলেন। কিন্তু পাশ্চাত্য প্রণালী ক্রমে-স্ত্রীকে শিক্ষিত করিবার তাহার ইচ্ছা ছিল বলিয়া কোহ্লাপুরেও তিনি অনেকের উপহাসের পাত্র হইলেন। তিনি সেখানকার মিশনরিদিগের গৃহে প্রায়ই সস্ত্রীক গমনাগমন করিতেন ও আনন্দী বাঈকে কুমারী মাইসীর সহিত এক গাড়ীতে বসাইয়া প্রত্যহ রাজকীয় স্ত্রী-বিদ্যালয়ে প্রেরণ করিতেন। এই কারণে তত্রত্য স্বদেশীয় রীতিনীতির পক্ষপাতী রাজপুরুষেরা তাঁহার প্রতি অত্যন্ত বিরূপ হইলেন। তাহার ফলে কিছু দিনের মধ্যেই সেখানকার রাজকীয় স্ত্রী বিদ্যালয়ে আনন্দী বাঈকে প্রেরণের সুবিধা তাঁহার বহু পরিমাণে কমিয়া গেল। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ গোপাল রাও ইহাতেও সংকল্পচ্যুত হইলেন না।
মিশনরিদিগের সহিত কথোপকথনের প্রসঙ্গে গোপাল রাও অবগত হইলেন যে, আমেরিকায় গমন করিতে পারিলে আনন্দী বাঈকে তাহার ইচ্ছামত শিক্ষাদানের সুবিধা হইবে। মিশনরিরা তাঁহাকে একার্য্যে সহায়তা করিতে প্রতিশ্রুত হইয়া তাঁহাদিগের মার্কিনস্থিত কর্ত্তৃপক্ষের সহিত গোপাল রাওকে পরিচিত করিয়া দিলেন। এই সময়ে তাঁহাদিগের মধ্যে যে পত্র-ব্যবহার হইয়াছিল, তাহা পাঠ করিলে বুঝিতে পারা যায় যে, গোপাল রাও মিশনরিদিগকে তাহার জন্য আমেরিকায় একটি চাকরির যোগাড় করিতে অনুরোধ করিয়াছিলেন; কিন্তু মিশনরি মহোদয়েরা সে বিষয়ে কোনও সাহায্য না করিয়া কৌশলে তাঁহাকে খৃষ্টধর্ম্মে দীক্ষিত করিবার চেষ্টা করিতেছিলেন। কাজেই বিরক্ত হইয়া গোপাল রাওকে তাঁহাদিগের সংস্রব পরিত্যাগ করিতে হইল। ইহার পূর্ব্বেই আনন্দী বাঈকে খৃষ্টান করিবার উদ্দেশ্যে মিশনরিরা বহুবার তাঁহার নিকট খৃষ্ট-মাহাত্ম্য কীর্ত্তন করিয়াছিলেন। কিন্তু ত্রয়োদশবর্ষীয়া আনন্দী বাঈর স্বধর্ম্মে নিষ্ঠা এরূপ দৃঢ় ছিল যে, কিছুতেই তাঁহার মতান্তর ঘটে নাই।
কোহ্লাপুরে আনন্দী বাঈর শিক্ষার সুবিধা বিলুপ্ত হওয়ায় গোপালরাও ১৮৭৯ খৃষ্টাব্দের প্রারম্ভে বোম্বাইয়ে গমন করিলেন। তথায় এক মিশনরি স্কুলে আনন্দ বাঈর শিক্ষার বন্দোবস্ত হয়। আনন্দী বাঈ প্রত্যহ একাকিনী পদব্রজেই বিদ্যালয়ে গমন করিতেন। তদ্ভিন্ন তাহার বেশও কিয়ৎ পরিমাণে পাশ্চাত্য ভাবাপন্ন ছিল। এই কারণে বোম্বাইয়ের ইতর লোকেরা, প্রধানতঃ বণিক, তাম্বুলী ও সামান্য শস্য-ব্যবসায়ীয়া প্রায়ই পথিমধ্যে তাঁহাকে দেখিয়া পরিহাস বিদ্রূপ করিত।
এই সময়ে গোপাল রাওয়ের পিতা বিনায়ক রাও পুত্রের সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য বোম্বাইয়ে গমন করিয়াছিলেন। তিনি পুত্রের ও পুত্রবধূর কার্য্য দর্শনে অতীব ব্যথিত হন। কারণ, মহারাষ্ট্র দেশে বহুদিন হইতে সাধারণ ভাবে স্ত্রীশিক্ষার প্রচার থাকিলেও উহা বর্ত্তমান কালের অনুরূপ ছিল না। খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে পেশওয়েগণের আমলে অবস্থাপন্ন লোকেরা গৃহে বয়স্ক শিক্ষক রাখিয়া কুলবালাগণকে যথোচিত বিদ্যা শিক্ষা করাইতেন। সে কালের সরদারদিগের ললনাগণ রাজনীতি বিষয়েও উপদেশ লাভ করিতেন এবং সময়ে সময়ে যুদ্ধক্ষেত্র হইতে রাজদরবারে সরদারদিগের অনুষ্ঠিত সমস্ত রাজ-কার্য্যাদির বিবরণী (despatches) লিখিয়া পাঠাইতেন। সেইরূপ গৃহপতিগণের অনুমতি লইয়া বিশ্বস্ত অনুচর ও আত্মীয়ের সহিত প্রকাশ্য রাজপথ দিয়া গমনাগমনও সাধারণতঃ মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণ মহিলাদিগের পক্ষে কখনও নিষিদ্ধ ছিল না এবং এখনও নাই। পাশ্চাত্য শিক্ষার আলোক পাইয়া মহারাষ্ট্র দেশের যুবকগণ সাধারণ বিদ্যালয়ে রমণীদিগকে পদব্রজে একাকিনী পাঠাইবার পক্ষপাতী হওয়াতেই প্রাচীন সমাজের বিশেষ নিন্দাভাজন হইয়াছিলেন। গোপাল রাওয়ের প্রতি তাঁহার পিতার অসন্তোষেরও ইহাই প্রধান কারণ হইয়াছিল। বিদেশীয় উচ্চশিক্ষার বিরুদ্ধে পুত্রকে বহু উপদেশ দিয়াও তিনি যখন কৃতকার্য্য হইতে পারিলেন না, তখন ক্রোধভরে, আর পুত্রের মুখদর্শন করিবেন না, বলিয়া বোম্বাই পরিত্যাগ করিলেন।
বোম্বাইয়ে মিশনরি বিদ্যালয়ে শিক্ষার কালে আনন্দী বাঈ সর্ব্বদা শ্রেণীর প্রথম স্থান অধিকারে চেষ্টা করিতেন। তত্রত্য শিক্ষয়িত্রী ও বিদ্যার্থিনীগণের সহিত তাঁহাকে ইংরাজীতে কথা কহিতে হইত বলিয়া তিনি ইংরাজী ভাষায় অল্প দিনের মধ্যেই অধিকার লাভ করিয়াছিলেন। ইংরাজী ভাষা শিক্ষার সহিত ইংরাজ মহিলাদিগের ন্যায় তিনি যাহাতে স্বতন্ত্রভাবে থাকিতে শিক্ষা করেন, সে বিষয়েও গোপাল রাও চেষ্টার ত্রুটি করেন নাই। আলিবাগ হইতে কোহ্লাপুর গমনকালে পথিমধ্যে একদিন আনন্দী বাঈকে বাসায় একাকিনী পরিত্যাগ করিয়া তিনি অষ্ট প্রহরের অধিক কাল কোথায় অন্তর্হিত হইয়াছিলেন। ত্রয়োদশবর্ষীয়া বালিকা বিদেশে অপরিচিত স্থানে এইরূপ সংকটে পড়িয়া কিরূপ ভয়বিহ্বলা হইয়াছিলেন, তাহা সহজেই বুঝিতে পারা যায়। বোম্বাইয়ে অবস্থানকালেও গোপাল রাও স্ত্রীর সাহসিকতা-বর্দ্ধনের জন্য বিবিধ উপায়ের অবলম্বন করিয়াছিলেন। আনন্দী বাঈকে একাকিনী মিশনরী স্কুলে পড়িতে পাঠাইবারও তাঁহার ইহাই উদ্দেশ্য ছিল। তথা হইতে কল্যাণ নগর দূরবর্ত্তী ছিল না বলিয়া আনন্দী বাঈর পিত্রালয়গমনের সুযোগ ঘন ঘন উপস্থিত হইত। গোপাল রাও তাঁহাকে প্রায়ই একাকিনী পিত্রালয়ে গমন করিবার আদেশ দিতেন। প্রথম প্রথম তাঁহার নির্দেশক্রমে একজন ভৃত্য স্টেশন পর্যন্ত আনন্দী বাঈর সঙ্গে গিয়া তাঁহাকে টিকিট কিনিয়া দিত, গোপাল রাও তাহাও নিষিদ্ধ করিয়া দিলেন। তখন হইতে আনন্দী বাঈকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও সম্পূর্ণ একাকিনী কল্যাণে গমনাগমন করিতে হইত।
ইহার পর গোপাল রাও আনন্দী বাঈর মাতামহীকে কল্যাণে পাঠাইয়া দিয়া স্বয়ং তিন মাসের অবকাশ-গ্রহণ-পূর্ব্বক উত্তর ভারত-পরিভ্রমণে চলিয়া গেলেন। চতুর্দ্দশবর্ষীয়া আনন্দী বাঈকে একাকিনী বোম্বাইয়ে থাকিতে হইল। এই সময়ে তিনি স্কুলবোর্ডিঙেই বাস করিতেন এবং প্রত্যহ দুই বেলা গোপাল রাওয়ের প্রথমা পত্নীর ভ্রাতার বাসায় গিয়া ভোজন করিয়া আসিতেন। এইরূপ গমনাগমন কালে ইতর লোকে তাঁহাকে পথিমধ্যে নিতান্ত বিরক্ত করিত। পরিশেষে দুইজনের বাক্যবাণ সহ্য করিতে অসমর্থা হইয়া তিনি দেড়মাস পরে পিত্রালয়ে প্রস্থান করিলেন।
উত্তর ভারত হইতে প্রত্যাবর্ত্তনের পর গোপাল রাও দেখিলেন যে, পুনঃ পুনঃ পিত্রালয়ে গমন করিতে হয় বলিয়া আনন্দী বাঈর শিক্ষায় ব্যাঘাত জন্মিতেছে। কাজেই তিনি দূরদেশে বদলি হইবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। এই সময়ে কচ্ছভুজ অঞ্চলের ভুজ ডাকঘরে পোষ্টমাষ্টারের পদ শূন্য হয়। কর্ত্তৃপক্ষ গোপাল রাওকে সেই স্থানে বদলি করিলেন। কিন্তু ভুজে গিয়া আনন্দী বাঈকে স্কুলে পাঠাইবার কোন সুবিধাই হইল না। সুতরাং গোপাল রাও ঘরেই অবকাশ-কালে তাঁহাকে শিক্ষাদান করিতে লাগিলেন।
ভুজে গমন করিয়া গোপাল রাও একটি নূতন অসুবিধায় পড়িলেন। আনন্দী বাঈকে এতদিন কেবল বিদ্যা-শিক্ষায় নিরত রাখা হইয়াছিল। সুতরাং তিনি রন্ধনাদি-কার্য্য শিক্ষা করিবার অবসর প্রাপ্ত হন নাই। মাতামহীর অনুগ্রহে গৃহস্থালী শিক্ষা করিবার তাঁহার কখনও আবশ্যকতাও হয় নাই। এক্ষণে সে সুবিধায় বঞ্চিত হওয়ায় গৃহকর্মের ভার তাঁহার উপর পতিত হইল। তিনি রন্ধনকার্য্যে পারদর্শিনী ছিলেন না, উহা তাঁহার নিকট বড়ই বিরক্তিকর বোধ হইত। ভুজে অন্য প্রকার সুখাদ্যও দুর্লভ ছিল। এই কারণে প্রথম প্রথম কিছু দিন এই দম্পতীকে ছোলাভাজা খাইয়া অতি কষ্টে কাল-যাপন করিতে হইয়াছিল।
দেড় বৎসর ভুজ নগরে অবস্থান করিয়া আনন্দী বাঈ ইংরাজী ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করিলেন। দুই এক খানি সংস্কৃত পুস্তকও তিনি শেষ করিয়াছিলেন। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই তিনি সংস্কৃতভাষাজ্ঞানে গোপাল রাওকে অতিক্রম করিলেন। কোনও শ্বেতাঙ্গ মহিলার সাহায্যে তিনি সেলাই ও পশমের কারুকার্য্যাদিও শিক্ষা করিয়াছিলেন।
এদিকে গোপাল রাওয়ের সহিত ইতঃপূর্বে মিশনরিগণের যে পত্র-ব্যবহার হইয়াছিল, তাহা সেই সময়ে “ক্রিশ্চান রিভিউ” নামক আমেরিকার এক মাসিকপত্রে প্রকাশিত হয়। ঐ পত্র দৈবক্রমে শ্রীমতী কার্পেণ্টার নাম্নী এক সদয়হৃদয় রমণীর হস্তগত হওয়ায় আনন্দী বাঈর জীবন-স্রোত অন্য মুখে ধাবিত হইল। এই রমণী রোশেল নগরে বাস করিতেন। তিনি একদিন জনৈক দন্ত চিকিৎসকের গৃহে ঐ মাসিক পত্র খানি ছিন্ন ভিন্ন অবস্থায় আবর্জ্জনারাশির মধ্যে দেখিতে পান। কৌতূহলাক্রান্ত চিত্তে তিনি উহা পাঠ করিতে গিয়া যাহা দেখিলেন, তাহাতে তাঁহার হৃদয়ে দুঃখের সঞ্চার হইল। ঐ সকল পত্র হইতে তিনি গোপাল রাওয়ের অবস্থার ও মিশনরিদিগের ব্যবহারের বিষয় অবগত হন এবং আনন্দী বাঈকে সহানুভূতিসূচক পত্র লিখিয়া উচ্চ শিক্ষালাভ বিষয়ে উৎসাহিত করিবেন, সংকল্প করেন। এই সংকল্প কার্য্যে পরিণত হইবার পক্ষে আর একটি দৈবঘটনা অনুকূল হইল।
পরদিন প্রাতঃকালে শ্রীমতী কার্পেণ্টারের “আমী” নাম্নী নবমবর্ষীয়া কন্যা শয্যা ত্যাগ করিয়াই তাঁহাকে গিয়া বলিল -“মা। আমি স্বপ্নে দেখিলাম, তুমি হিন্দুস্থানে কাহাকে পত্র লিখিতেছ।” এই বালিকা আশিয়া খণ্ডের মানচিত্র কখনও দেখে নাই এবং শ্রীমতী কার্পেণ্টারও স্বীয় সংকল্পের বিষয় ইহার পূর্ব্বে কাহারও নিকট ঘূণাক্ষরে ব্যক্ত করেন নাই। সুতরাং বালিকার এই স্বপ্ন দৈবসঙ্কেত বলিয়া তাঁহার মনে হইল। তিনি কালবিলম্ব না করিয়া কোহ্লাপুরের ঠিকানায় আনন্দী বাঈকে সহানুভূতি ও উৎসাহপূর্ণ একখানি পত্র লিখিলেন। আমেরিকার সম্বন্ধে আনন্দী বাঈর জ্ঞানবৃদ্ধির জন্য তিনি নিউইয়র্ক হইতে প্রকাশিত একখানি উৎকৃষ্ট সাপ্তাহিক বা মাসিক পত্র তাঁহার পীঠের নিমিত্ত নিয়মিতরূপে পাঠাইয়া দিবেন, একথাও এই পত্রে লিখিয়াছিলেন। এই বিষয়ের উল্লেখকালে তিনি স্বয়ং এক স্থলে বলিয়াছেন যে, “আমার কন্যা এইরূপ স্বপ্ন দেখিয়া তাহা আমার নিকট বিবৃত না করিলে, হয় ত নানা কার্য্যে আনন্দী বাঈকে পত্র লিখিবার কথা আমি ভুলিয়া যাইতাম।”
ভুজ নগরে অবস্থানকালে এই পত্র আনন্দীবাঈর হস্তগত হয়। আমেরিকার ন্যায় স্থানে এইরূপ একজন অকারণ-বন্ধু পাইয়া তাঁহার হৃদয়ে অতীব আনন্দ এবং ঈশ্বরের করুণায় প্রগাঢ় বিশ্বাসের সঞ্চার হইল। শ্রীমতী কার্পেণ্টারের সহৃদয়তার জন্য ধন্যবাদ দিয়া আনন্দী বাঈ তাঁহাকে এক পত্র লিখিলেন। এই সময় হইতে তাঁহারা পরস্পরকে প্রতিমাসে নিয়মিতরূপে পত্র লিখিতে লাগিলেন। এই সকল পত্রে উভয়েই স্ব স্ব দেশের সামাজিক আচার ব্যবহারাদির বিষয় পরস্পরকে আপন করিতেন। স্বজাতির ও স্বদেশীয় রীতিনীতির সম্বন্ধে আনন্দী বাঈর কিরূপ শ্রদ্ধা ছিল, এবং তিনি কিরূপ নির্ভীকতার সহিত তাহা বৈদেশিকদিগের নিকট স্পষ্টভাষায় ব্যক্ত করিতে পারিতেন, এই সকল পত্র হইতে, তাহা অবগত হইতে পারা যায়।
একখানি পত্রে আনন্দী বাঈ শ্রীমতী কার্পেণ্টারকে লিখিয়াছেন—“হিন্দুগণ সাধারণতঃ যেরূপ শান্ত প্রকৃতি ও সাত্ত্বিকভাবাপন্ন, ইউরোপীয়গণ সেরূপ নহেন। আমাদিগের (মহারাষ্ট্রীয়দিগের) মধ্যে পাশ্চাত্য দেশবাসীদিগের তুলনায় রোগের সংখ্যা ও কামক্রোধাদি মনোবিকারের প্রভাব অল্প।” আর একখানি পত্রে তিনি লিখিয়াছেন,—“ইউয়োপীয়দিগের বিশ্বাস, হিন্দু শাস্ত্রে সভ্যজাতিগণের শিক্ষার যোগ্য বিষয় কিছুই নাই। তাঁহাদিগের এই ধারণা যে ভ্রমাত্মক, তাহা দেখাইবার জন্যই আমি সংস্কৃত শিখিতেছি। আমি নিরামিষ ভোজন ও দেশীয় বেশ-ভূষা করিয়া থাকি। বিবি সাজিবার আমার আদৌ ইচ্ছা নাই। অতএব সম্পূর্ণরূপে স্বদেশীয় রীতিনীতি রক্ষা করিয়া আমেরিকায় বাস করা আমার পক্ষে সম্ভব হইবে কিনা, আমায় জানাইবেন।” কোন কোন পত্রে শ্রীমতী কার্পেণ্টারের নিকট তিনি স্বদেশীয়দিগের বারব্রতাদির আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যাও করিয়াছেন। তাঁহার একাধিক পত্রে মিশনরিগণ “একগুয়ে, পরধর্ম্মবিদ্বেষী ও সংকীর্ণ চিত্ত” বলিয়া বর্ণিত হইয়াছেন।
আনন্দী বাঈ ভূতপ্রেতে বিশ্বাস করিতেন। এ সম্বন্ধে তিনি একখানি পত্রে শ্রীমতী কার্পেণ্টারকে লিখিয়াছেন,—“ভূতপ্রেতপিশাচাদির প্রতি দিন দিন আমার বিশ্বাস প্রগাঢ়তর হইতেছে। নিদ্রিতাবস্থায় আমি জটিল প্রশ্নসমূহের উত্তর নির্ণয় করিতে পারি। দেশীয় স্ত্রী-পুরুষগণের উপযোগী কাপড় ছাঁটিতে আমি জানিতাম না, তাহা স্বপ্নেই শিক্ষা করিয়াছি। পাঠ্যপুস্তকের যে সকল অংশ মুখস্থ করিতে হইবে, তাহা আমি দিবসে একবার পড়িয়া রাখি। তাহার পর রাত্রিকালে ঘুমের ঘোরে স্বপ্নাবস্থায় সেগুলি বহু বার অভ্যাস করি। প্রাতঃকালে উঠিয়া দেখি, সমস্থই মুখস্থ হইয়া গিয়াছে। কাব্য পাঠকালে যে সকল অংশ অতিশয় দুর্ব্বোধ বলিয়া বোধ হয়, তাহা একবার পড়িয়া ছাড়িয়া দিই; রাত্রিকালে নিদ্রিতাবস্থায় ঐ সকল অংশের প্রকৃত অর্থ আমার জ্ঞানগোচর হয়! প্রাতঃকালে উহার অবিকল ভাষান্তর করা আমার পক্ষে কিছুমাত্র কষ্টকর বোধ হয় না। রাত্রিকালে কে আমায় জটিল বিষয় সকল শিক্ষা দেয়, তাহা আমি বুঝিতে পারি না, কিন্তু আমার পড়া হইয়া যায়। আপনাকে যথার্থ বলিতেছি, ভূতপ্রেতাদিতে বিশ্বাস আমার হৃদয়ে প্রগাঢ়রূপে মুদ্রিত হইয়াছে।”
শ্রীমতী কার্পেণ্টারের সহিত পত্রযোগে ক্রমশঃ তাহার ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। উভয়েই উপহারস্বরূপ স্বদেশের শিল্পসামগ্রী ও অলঙ্কারাদি উভয়ের নিকট পাঠাইতে লাগিলেন। শ্রীমতী কার্পেণ্টারের সহিত পরিচয় ঘটিবার পর হইতে আনন্দী বাঈর ইংরাজী ভাষায় জ্ঞান প্রগাঢ় হইতে লাগিল।
এই সময়ে বঙ্গদেশের পোষ্ট-মাষ্টার-জেনারেল ডাক-বিভাগে রমণীদিগের নিয়োগ-সম্বন্ধে একটি আদেশ প্রচার করেন। তদ্দর্শনে ঐ বিভাগে আনন্দী বাঈকে একটি কর্ম্মের সংস্থান করিয়া দিবার ইচ্ছা গোপাল রাওয়ের মনে বলবতী হইল। এই কারণে তিনি কলিকাতায় আপনার বদলি করিবার জন্য কর্ত্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করিলেন। ১৮৮১ খৃষ্টাব্দের ৪ঠা এপ্রিল গোপাল রাও সস্ত্রীক কলিকাতা নগরীতে উপস্থিত হন।
কলিকাতায় আসিয়া আনন্দী বাঈর সুখ-শান্তি একরূপ বিলুপ্ত হইয়াছিল। এখানকার জলবায়ুর দোষে পুনঃ পুনঃ অসুস্থ হইয়া তিনি নিতান্ত রুগ্ন হইয়া পড়িয়াছিলেন। এ দেশে অবরোধপ্রথার কঠোরতাহেতু তাঁহার ব্যবহার-সম্বন্ধে অনেকের মনে অমূলক সন্দেহের উদ্ভব হওয়াতেও তাহার বিশেষ কষ্টের কারণ হইয়াছিল। তাঁহার কয়েকখানি পত্রেই কলিকাতার নিন্দা দেখিতে পাওয়া যায়। একখানি পত্রে তিনি লিখিতেছেন,—
“কলিকাতা আমাদিগের সহিষ্ণুতার পরীক্ষা—অতি কঠোর পরীক্ষা করিতেছে, একথা আপনাকে (শ্রীমতী কার্পেণ্টারকে) পূর্ব্বেই জানাইয়াছি। আমার স্বাস্থ্য এতদূর খারাপ হইয়াছে যে, একবার যাহা খাই, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেও তাহা হজম হয় না। জ্বর ও মাথা ধরা এখন প্রাত্যহিক ঘটনায় পরিণত হইয়াছে। এ স্থান ভয়ানক গরম। বর্ষা আরম্ভ হইয়াছে, তথাপি গরম কমিতেছে না। আমার সর্ব্বাঙ্গে ফোড়া হওয়ায় বড়ই কষ্ট পাইতেছি।
“এখানকার লোকে আমাদিগকে বড়ই উত্ত্যক্ত করিয়া তুলিয়াছে। এখানকার ইংরাজদিগেরও হৃদয়ে দয়া নাই। আমাদের একজন প্রতিবেশিনী জার্ম্মান রমণীও আমার সম্বন্ধে নানা প্রকার কু-কথা রটাইতে ত্রুটী করে নাই। আমি ধর্ম্ম-পত্নী নহি, সমস্ত রাত্রি স্বামীর সহিত ঝগড়া করি,—প্রভৃতি গুজব তুলিয়া সে আনন্দ লাভ করে। আমরা পথে বাহির হইলে ইউরোপীয়েরা আমাদের দিকে এক দৃষ্টে চাহিয়া থাকে, আমার দিকে অঙ্গুলি-নির্দ্দেশ-পূর্ব্বক আমাদের ব্যবহারের সমালোচনায় প্রবৃত্ত হয়। দেশীয়দিগের কথা বলাই বাহুল্য। আমাদিগকে প্রকাশ্য পথে গমন করিতে দেখিলে, তাহারা গাড়ী থামাইয়া আমাদিগের দিকে তাকাইতে থাকে। কেহ কেহ বা আমাদিগের নিকটবর্ত্তী হইলে, গাড়োয়ানকে ধীরে ধীরে গাড়ী চালাইতে অনুমতি করিয়া আমাদের প্রতি লক্ষ্য স্থাপন করেন। বঙ্গদেশে অবরোধ ও অবগুণ্ঠন প্রথার কঠোরতাই ইহার কারণ। যাঁহারা বহুদিন ইংলণ্ড ও আমেরিকায় বাস করিয়া শিক্ষালাভ করিয়াছেন, তাঁহারাও দেশীয় প্রথার লঙ্ঘন করেন না। একদিন আমরা এস্প্ল্যানেডে বেড়াইতে ছিলাম, এমন সময়ে একজন পুলিশ কনেষ্টবল আমার স্বামীকে সহসা আমার পরিচয় জিজ্ঞাসা করিল! তিনি রুষ্ট হইয়া তাহার বিরুদ্ধে পুলিশ কমিশনরের নিকট রিপোর্ট করিবেন, বলেন। তখন সে ক্ষমাপ্রার্থনা ও সেলাম করিয়া চলিয়া যায়।”
কলিকাতায় চাকরীর কালে একবার একখানি সরকারি পত্র গোপাল রাওয়ের হস্ত হইতে অকস্মাৎ হারাইয়া যায়। সে জন্য তিনি অস্থায়িভাবে পদচ্যুত হইয়াছিলেন। এই ঘটনা সম্বন্ধে আনন্দী বাঈর একখানি পত্রে এইরূপ লিখিত আছে—“আমরা এখনও বিপজ্জাল হইতে মুক্তিলাভ করিতে পারি নাই। বিগত পাঁচ মাসকাল বাহিরে সমানভাবে মানসিক কষ্ট ভোগ করিতেছি। সে কষ্ট বিস্মৃত হইতে না হইতে নূতন বিপদ আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। বড়লাট বাহাদুরের নিকট হইতে বঙ্গের ছোট লাট সাহেবের নামে একখানি পত্র আসিয়াছিল। ঐ পত্রখানি সিমলা হইতে সরকারি কর্ম্মচারীর বিশেষ তত্ত্বাবধানে এখানে আসে। আমার স্বামীর প্রতি উহা রেল স্টেশনে গিয়া ডাকে দিবার ভার অর্পিত হয়। তিনি উহা গ্রহণ করিয়া একজন ভৃত্যসহ রেল ষ্টেশনের দিকে গমন করিতেছিলেন। চিঠিখানি ভৃত্যের হস্তে ছিল। তাঁহারা দ্রুতপদে গমন করিতেছিলেন, এমন সময়ে পত্রখানি নিকটেই কোথায় পড়িয়া গেল! তাঁহারা তৎক্ষণাৎ অনুসন্ধান আরম্ভ করিলেন। কিন্তু সমস্ত পথে খুঁজিয়াও উহা পাওয়া গেল না, চক্ষের পাতা ফেলিতে না ফেলিতে অদৃশ্য হইয়া গেল! এই ঘটনায় সহরে যে হুলস্থূল পড়িয়া যায়, তাহা আপনি অনুভবেই বুঝিতে পারিবেন—আমি তাহা লিখিয়া বর্ণনা করিতে অসমর্থ। এই ব্যাপারে ইতিকর্ত্তব্যতা-নির্দ্ধারণের জন্য উপরিতন রাজপুরুষেরা সমবেত হইয়া সভা করিয়াছিলেন। চারিদিকে অনুসন্ধানের জন্য পুলিশ প্রেরিত হইয়াছিল। রাস্তার সমস্ত লোকের বস্ত্রাদি পরীক্ষা করাইতেও তাঁহারা ত্রুটী করেন নাই। সর্ব্বপ্রকার উপায় অবলম্বিত হইল। কিন্তু কিছুতেই নষ্ট পত্রের পুনরুদ্ধার হইল না! আমার স্বামীকে ও তাঁহার অনুচরকে পুলিশের হাতে দেওয়া হইল। ভিন্ন ভিন্ন রাজপুরুষেরা তাঁহাদিগের জোবানবন্দী গ্রহণ করিলেন। আমার স্বামীকে অস্থায়িভাবে পদচ্যুত করা হইল। সেদিনকার বিপদের কথা আমি জীবনে বিস্মৃত হইব না।”
এই দুর্ঘটনার পর আনন্দী বাঈ স্বামীকে রেঙ্গুন ও জাপান হইয়া আমেরিকায় গমনের পরামর্শ দান করিলেন। উত্তর ভারতের সর্ব্বত্র রমণীগণের অবগুণ্ঠন ও কঠোর অবরোধপ্রথা প্রচলিত থাকায় ঐ প্রদেশে থাকিয়া তাঁহাদিগের চাকরী করিবার ইচ্ছা ছিল না। দক্ষিণ ভারতে গমন করিলেও আনন্দী বাঈর শিক্ষার ব্যাঘাত ঘটিবার সম্ভাবনা ছিল। এই সকল কারণে দেশত্যাগেই তাহারা কৃতসংকল্প হইলেন। কিন্তু ১৮৮২ সালের ১লা এপ্রিল গোপাল রাও পুনরায় চাকরী পাইয়া শ্রীরামপুরে প্রেরিত হওয়ায় সে সংকল্প কিছুদিনের নিমিত্ত পরিত্যক্ত হইল। শ্রীরামপুর আনন্দী বাঈর নিকট কলিকাতা অপেক্ষা ভাল বলিয়া বোধ হইয়াছিল। সেখানকার নরনারী-চরিত্রেরও তিনি প্রশংসা করিয়াছেন। তত্রত্য রমণীদিগের অতিরিক্ত তাম্বুল-চর্ব্বণের অভ্যাস ও শিক্ষিত মহিলাগণের বেশভূষার বৈচিত্র্যের প্রতি তাঁহার একখানি পত্রে বিশেষ কটাক্ষ দেখিতে পাওয়া যায়।
আনন্দী বাঈকে ডাক বিভাগে চাকরী করিয়া দিবার জন্য গোপাল রাও যে চেষ্টা করিতেছিলেন তাহা এই সময়ে ফলবতী হইল। ডাক বিভাগের কর্ত্তৃপক্ষ আনন্দী বাঈকে ৩০৲ টাকা মাহিনায় একটি চাকরী দিলেন। কিন্তু ইতঃপূর্ব্বে গোপাল রাওয়ের অস্থায়িভাবে পদচ্যুত হইবার পর হইতে চাকরীর প্রতি আনন্দী বাঈর ঘৃণা জন্মিয়াছিল। এই কারণে তিনি এক্ষণে চাকরী পাইয়াও গ্রহণ করিলেন না।
শ্রীরামপুরে অবস্থান-কালে কয়েক মাসের ছুটি লইয়া গোপাল রাও সস্ত্রীক জয়পুর, আগ্রা, লক্ষ্ণৌ, গোয়ালিয়ার, কানপুর, দিল্লী, এলাহাবাদ ও বারাণসী প্রভৃতি স্থান ভ্রমণ করিতে গিয়াছিলেন। এই দেশ-পরিভ্রমণের ফলে আনন্দী বাঈর বহুদর্শিতা ও প্রবাসসম্বন্ধে অভিজ্ঞতা জন্মিল।
আনন্দ বাঈর ভারতীয় শিক্ষা শ্রীরামপুরেই শেষ হইল। এইখান হইতেই তিনি পাশ্চাত্য চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষার জন্য আমেরিকা গমন করেন।