আমার খাতা/ঈশ্বরের সত্ত্বা
ঈশ্বরের সত্ত্বা।
(জোড়াসাঁকোস্থ মহিলা-সভায় পঠিত প্রবন্ধ)
নিস্তব্ধতার মধ্যে আমি মহান্ অনন্তস্বরূপ ঈশ্বরের সত্ত্বা অনুভব করিয়া মোহিত হইয়া থাকি। যখন জীবন্ত জাগ্রত দেবতাকে অনুভব করিয়া শরীর রোমাঞ্চিত হইয়া উঠে তখন “বৃক্ষইব স্তব্ধ দিবি তিষ্ঠত্যেক তেনেদম্ পূর্ণম্ পুরুষেণ সর্ব্বম্” এই ঋষিবাক্যের সম্যক্ উপলব্ধি করিয়া থাকি। সজনে নির্জ্জনে পুষ্পগন্ধে বিহঙ্গমের স্বরলহরিতে তোমায় নব নব ভাবে অনুভব করি। ঘোর অমানিশায় ঘনঘটা ও মুহূর্মুহূ বজ্রাঘাত হইতেছে তাহাতে তোমার রুদ্রমহদ্ভয়ম্ বজ্রমুদ্যতম্ মূর্ত্তি বিরাজিত দেখিতে পাই। বিপদে তোমায় শান্তিদায়িনী জননীরূপে পাইয়া থাকি; সম্পদে তোমায় আনন্দময় সখারূপে পাই। অনন্তস্বরূপ ঈশ্বরকে আমরা সহস্ররূপে অন্তরে বাহিরে বিরাজিত দেখি। তিনি সুখে দুঃখে বিপদে সম্পদে আমাদের নিত্য সঙ্গী হইয়া রহিয়াছেন; তাঁহা অপেক্ষা প্রিয়তর আর কাহাকে পাইব? তিনি যেমন আমাদের বিপদ সম্পদের সঙ্গী হইয়া রহিয়াছেন সেইরূপ তিনি আমাদের জীবন মরণেরও সঙ্গী। আজ যদি আমার প্রাণ দেহ পরিত্যাগ করে তাহা হইলে এই মৃত দেহকে অনলে ফেলিয়া ভস্মসাৎ করিয়া গৃহে আসিবে, দুইদিন আমার জন্য দুইচার বিন্দু অশ্রুজল ফেলিবে ও পরে আমার স্মৃতি হৃদয় হইতে মুছিয়া ফেলিবে, এত ভালবাসার এই পরিণাম, তখন কেবল অমৃতময় পরমেশ্বর তাঁহার অমৃতময় ক্রোড়ে স্থান দিবেন। ঈশ্বর ছাড়া প্রাণীর আর গতি নাই সেইজন্য আত্মদর্শী ঋষিরা বলিয়া গিয়াছেন “এযাস্য পরমা গতিরেষাস্য পরমা সম্পৎ এষোস্য পরমো লোক এষোহস্য পরমআনন্দ! এতস্যৈবানন্দস্যান্যানি ভূতানি মাত্রামুপজীবন্তি।”
হে দয়াময় তুমি আমাদের পাপতাপ শোকদুঃখপূর্ণ সংসারে একমাত্র গতি এই বিপদরূপ সংসারসমুদ্রে তুমি আমাদের ধ্রুবতারা এই সংসারসাগরে তোমার চরণ-তরি আমাদের একমাত্র; আশ্রয় আমরা যেন বিপদে সম্পদে সুখে দুঃখে তোমাকে না হারাই এই তোমার চরণে প্রার্থনা।
ওঁ শান্তি! শান্তি!!