আমার খাতা/দয়া
দয়া।
দয়া ধর্ম্মের মূল; আর নরকের মূল কি—না অভিমান। অবশ্য আমাদের ভিতর কেহই নরক নামক সুখের আলয়ে সাধ করিয়া যাইতে চাহেন না, ও চাহিবেন না। কিন্তু আমরা কত সাধে অভিমানকে হৃদয়ে স্থান দান করিয়া থাকি, আমাদের সেই অভিমানই যে নরকের মূল তাহা জানি না অথবা জানিয়াও তাহাকে পরিত্যাগ করিতে পারি না। অভিমান পরিত্যাগ করিবার উপায় আমাদের বিবেকবুদ্ধির দ্বারা বিবেচনা করিয়া দেখিতে হইবে। অহঙ্কার হইতেই আমাদের এ পচা আমির উৎপত্তি। এই অভিমান অহঙ্কার পরিত্যাগ করা বড়ই কঠিন। অভিমান হইতে অহঙ্কার আর অহস্কার হইতে আমির উৎপত্তি। এই আমার আমিত্ব এই বিশ্বসংসারে পরব্রহ্মের সত্ত্বায় হারাইতে হইবে। অহঙ্কার বিমূঢ়াত্মা কর্ত্তাহ— মিতিমন্যতে—আমাদের কোন কর্ম্মের ক্ষমতা নাই, অহঙ্কারের দ্বারা বিমূঢ় আত্মা আপনাকে কর্ত্তা বলিয়া মনে করিয়া থাকে। কর্ম্মন্যে বাধিকারস্তু মা ফলেষু কদাচন—কর্ম্মে আমাদের অধিকার হউক কিন্তু ফলেতে যেন আকাঙক্ষা না থাকে। ঈশ্বরের অমূল্য দান দয়া, তাহা যদি আমরা রত্ন ভাবিয়া কণ্ঠে স্থান দিই তাহা হইলে অনায়াসে আমরা ধর্ম্মকে লাভ করিব কারণ দুইটি এক সূত্রে গ্রথিত জিনিষ। এই জন্য ভক্ত তুলসী দাস গাহিয়াছেন—দয়া ধরম কি মূল হ্যায় নরক মূল অভিমান, তুলসী কহে মৎ ছোড় দয়া যাবৎ কণ্ঠাগত প্রাণ। ধর্ম্ম আমাদের স্বর্গসুখ ভোগ করায় ও আমাদের জীবন মরণের সঙ্গী হইয়া থাকে ও মৃত্যুকালে পরলোকের অচেনা পথের পথ প্রদর্শক হইয়া আমাদের পরলোকে লইয়া যায়—এই দয়া বৃত্তিকে অনুশীলন দ্বারা আমরা স্বর্গের দ্বারকে মুক্ত করিয়া থাকি। যে কোন সৎবৃত্তিকে আমরা দৃঢ়ভাবে ধরিয়া থাকিতে পারি তাহা দ্বারাই নিঃসন্দেহ জীবনসংগ্রামে জয়লাভ করিব।