ধ্রুবতারা।

 তারা! তুমি অনিমেষ লোচনে চাহিয়া আছ কার দিকে? কত অসংখ্য নিশা কালের গর্ভে গিয়াছে ও যাইবে, কে তাহার ইয়ত্বা করিতে পারে? কত জীব আসিতেছে ও যাইতেছে তাহারও নির্ণয় করা যায় না। পৃথিবীর সকল ঘটনা তুমি দেখিয়াছ ও দেখিতেছ, এখনও প্রতি নিশায় ফুটিয়া মৃদু স্নিগ্ধ আলোক বিকীর্ণ করিয়া দিবাসমাগমে ঊষার অঞ্চলে মুখ লুকাইয়া কাহার সাধনায় মগ্ন থাক? তুমি কি আমার আরাধ্য দেবতা হৃদয়েশকে দেখিতে পাও? আমি বুঝিয়াছি, তুমি আমার সর্ব্বস্ব আমার জীবন মরণের সম্বল দরিদ্রের রত্নকে দেখ, আমার তাঁকে যে দেখিয়াছে তার কি আর চোখ পালটিবার শক্তি আছে? তাই তুমি স্থির নিশ্চল অনিমেষ লোচনে তাহারি দিকে চাহিয়া আছ। তারা! আমি জলে স্থলে ফুলে ফলে আমার প্রিয়তমের হাতের কার্য্য, তাঁহার সৌন্দর্য্যের আভাস পাইয়া চারিদিকে ছুটিতেছি, কোথাও তাঁর দর্শন মিলিতেছে না; তাঁহাকে যে দেখিয়াছে সেই আত্মহারা হইয়াছে তাহার কি আর নড়িবার শক্তি আছে সে স্থির ভাবে সেই করুণাময় পরমেশ্বরে আত্মসমর্পণ করিয়া থাকে তার কি আর সংসারের দিকে লক্ষ্য থাকে, সে তোমারি মত স্রষ্টার মুখের দিকে তাকাইয়া ঈশ্বরের কর্ত্তব্য কর্ম্ম সমাধান করিয়া, শেষে ঈশ্বরের চরণে আশ্রয় লাভ করিয়া থাকে। তিনি আত্মাতে পরমাত্মা রূপে, পূর্ণভাবে বিরাজ করিতেছেন। তারা! তুমি যখন মেঘের আবরণে—আচ্ছাদিত হও তখন তোমার স্নিগ্ধ জ্যোতি আর দেখা যায় না। মেঘ কাটিয়া যাইলে আবার তোমার অমল ধবল রূপ প্রকাশ পায়। মেঘ তোমায় কিছুই করিতে পারে না। তুমি যাহা তাহাই থাক, মেঘ কেবল আমাদের দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করিয়া থাকে মাত্র। আমার এ হৃদয় মোহ মেঘে আচ্ছ্বন্ন করিয়াছে আমি আর আমার হৃদয় রাজকে দেখিতে পাইতেছি না। আমার এ মোহ মেঘ কবে কাটিবে দয়াময়ের কৃপা পবন কবে প্রবাহিত হইবে, সেই আশাকেই সম্বল করিয়া যেন দয়াময়ের নাম করিতে করিতে শেষ নিশ্বাস পরিত্যাগ করিতে পারি।