আমার খাতা/পূর্ণিমার ইন্দু

পূর্ণিমার ইন্দু।

 পূর্ণিমার ইন্দু সকলেরই আনন্দপ্রদ। প্রেমিকের, ভক্তের, কবির সকলের হৃদয়ে আনন্দ প্রদান করে। শশাঙ্ককে দেখিলে কবির হৃদয়ের রুদ্ধদ্বার মুক্ত হইয়া কল্পনার উৎস খুলিয়া যায়, ভাবের গ্রস্রবন ছুটিতে থাকে। দম্পতির হৃদয়ের রুদ্ধ ভালবাসা উভয়ের হৃদয়ে নীরবে কার্য্য করিতে থাকে; পূর্ণিমার ইন্দুকে দেখিয়া প্রণয়ীর পবিত্র প্রণয় একের হৃদয় হইতে অপরের হৃদয়ে বিদ্যুৎগতিতে মিশিতে চায়। তাহাতে এক উচ্ছাসময় ভাবে উভয়ে মোহিত হইয়া ওঠে। তখন তাহারা স্বপ্নরাজ্য রচনা করিয়া তাহাতে বাস করে এবং মুহূর্ত্তের জন্য পবিত্র স্বর্গসুখ ভোগ করিয়া থাকে। ভক্তের হৃদয় চন্দ্রের বিমল জ্যোৎস্নায় পুলকিত হইয়া ওঠে তখন তাহার হৃদয় সৌন্দর্য্যের খনি হৃদয়মণি ঈশ্বরকে দেখিবার জন্য ব্যাকুল হইয়া ওঠে। তখন সে বাহ্যদৃষ্টি পরিত্যাগ করিয়া অন্তরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, তখন সে হিরন্ময়ে পরে কোষে নিষ্কলঙ্ক প্রেমচন্দ্র নিরীক্ষণ করিয়া কৃতার্থ হয়।[১]

 কিন্তু ইন্দু বিরহী হৃদয়ে বিচ্ছেদ জনিত দুঃখ দ্বিগুণিত করিয়া তোলে। পূর্ণিমার চন্দ্রকে দেখিলে প্রিয়জনের প্রেমপূর্ণ আনন বিরহীর হৃদয়ে জাগিয়া উঠে, তখন তাহার মন ব্যাকুল হইয়া পড়ে তড়িতের মত ভাব হৃদয় হইতে বাহির হইবার জন্য আঘাৎ করিতে থাকে, প্রিয়জন কাছে নাই একাকী আনন্দ ভোগ দুখভোগের কারণ হইয়া উঠে—তখন তাহার হৃদয় হইতে এই বাক্য বাহির হয়:

আমারি মত হৃদয় ব্যথা তার কিগো হয়
কাছে নাহি প্রিয়জন সুধাইব যায়—

মনুষ্যের স্বভাবতঃ এমন একটি গুণ আছে সে ভালবাসার পাত্রকে ছাড়িয়া একাকী কোন আনন্দ ভোগ করিতে চায় না, এইজন্য চন্দ্রমা বিরহীর বিচ্ছেদ ব্যথা আরও জাগাইয়া দেয়। চন্দ্র তাহার ধার করা রূপে এত লোককে মুগ্ধ করিয়া থাকে। কিন্তু যে হৃদয়ে নিষ্কলঙ্ক প্রেম-চন্দ্র দেখিয়াছে তাহাকে আর বাহিরের চন্দ্র মুগ্ধ বা ব্যথিত করিতে পারে না।


  1. এইরূপ প্রবাদ আছে যে একজন বিখ্যাত দার্শনিক ' নাস্তিক পুর্ণিমার চন্দ্র দেখিয়া তাঁহার শেষ জীবনে ঈশ্বরে বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছিলেন।