ফুল।

 ফুল! আমি তোমায় বড় ভালবাসি, এত সৈৗন্দর্য্য আর কিছুতেই দেখিতে পাই না। ঈশ্বর তোমাকে কোমলতা ও পবিত্রতার আধার করিয়া সৃষ্টি করিয়াছেন? আমার হৃদয় মনের কান্তি আমি তোমাতেই দেখিতে পাই, তাই তোমার দিকে আমি অবাক্ হইয়া চাহিয়া থাকি; তোমার রূপে আমায় মোহিত করিয়াছে। আমার আরাধ্য দেবতার কণা মাত্র রূপ তোমাতে আছে কি না সন্দেহ, এতেই তুমি এত সুন্দর, না জানি তোমার সৃষ্টি কর্ত্তার কত রূপ! ফুল তুমি কেমন নীরবে ফুটিয়া বিশ্ব স্রষ্টার কাজ করিয়া যাইতেছ আমার বৃথা আড়ম্বর পূর্ণ জীবনকে তোমার মত ফুটাইয়া তাঁহার কার্য্য করিয়া মরিতে ইচ্ছা করিতেছি। ফুল! তুমি আমায় শিখাও কি করিলে তোমার মত জীৱন পাইব। তোমাকে আমি বালিকা কাল হইতে ভালবাসি, তখন তুমি আমার সঙ্গিনী ছিলে তখন তোমায় লইয়া কত খেলাই করিয়াছি। ফুল লইয়া তরঙ্গিনী বক্ষে ফেলিয়া দিতাম ঢেউয়ে যখন ফুলটিকে নাচাইতে নাচাইতে লইয়া যাইত তখন মনে এই প্রশ্ন হইত যে, ইহারা কাহর উদ্দেশে কোথায় যাইতেছে; এখনও সেই প্রশ্ন ধ্বনিত হইতেছে অনল, অনিল, গিরি, নদী, বন বক্ষে লইয়া কাহার উদ্দেশে পৃথিবী ধাবিত হইতেছে। আমাদের আত্মা প্রেম ভক্তি উপহার লইয়া কাহার, চরণ উদ্দেশে যাইতেছে? ফুল! তুমি কি বলে দিতে পার যে ইহারা কাহার উদ্দেশে কোথায় যাইতেছে, তুমি ছেলেবেলায় আমার সঙ্গিনী ছিলে এখন আমার জীবন সঙ্গিনী হইয়াছ আমাকে তোমার মত হইতে শিখাও। ফুল! তুমি আমায় বলে দিতে পার আমার হৃদয়েশ্বর কোথায় লুকাইয়াছেন? যখন দেখি প্রভাতের সূর্য্য অরুণ রাগে রঞ্জিত হইয়া পূর্ব্বাকাশে উদিত হইয়াছে অমনি ছুটিয়া যাই ও মনে করি বুঝি আমার হৃদয়রাজকে চুরি করিয়া রাখিয়াছে তাই এত সুন্দর দেখাইতেছে। সূর্য্য আমার দিকে চক্ষু রাঙ্গাইয়া বলিতেছে—

নতত্র সূর্য্যোভাতি ন চন্দ্র তারকম্
নেমা বিদ্যুতো ভান্তি কুতোহয়মগ্নিঃ
তমেব ভান্তমনুভাতি সব্বং
তস্য ভাষা সর্ব্বমিদং বিভাতি

এমনি করিয়া যাহার কাছে যাই সেই আমায় বলে—কাহার সাধ্য তাঁহাকে দেখা, তিনি আমাদের সকলের মূলে থাকিয়া আমাদিগকে প্রকাশ করিতেছেন। ফুল! তুমি আমায় বলে দেও আমার জীবন সর্ব্বস্ব কোথায় আছেন। কৈ, তুমি আমায় কিছু না বলিয়া কেবল হাসিতেছ; হাস, আমি পাগলিনী আমার হৃদয়মণি আমায় পাগল করিয়া কোথায় লুকইয়া আছেন তাই খুঁজিতে আসিয়াছি; দেখি তাঁহাকে খুঁজিয়া বাহির করিতে পারি কি না, চিরজীবন খুঁজিয়া দেখি মৃত্যুকালে দেখা পাই কিনা।