স্বার্থপরতা।

 আমরা স্বার্থপরতার গণ্ডি দিয়া একটি ক্ষুদ্র সংসার করিয়া আমাদের বিশ্ব-জননীর রাজ্যে বাস করিতেছি। এই স্বার্থপরতার মূলে অহঙ্কার—আমাদের কর্ত্তৃত্বাভিমান হইতে এই সঙ্কীর্ণতা আসিয়াছে। আমার পুত্র আমার কন্যা আমার ধন ইত্যাদি করিয়া স্বার্থপরতা এত অভ্যস্ত হইয়া গিয়াছে যে তাহা আমরা সহজে পরিত্যাগ করিতে পারি না। সহজে পারি না বলিয়াই যদ্যপি মনের হাল ছাড়িয়া বসিয়া থাকি তাহা হইলে স্বার্থপরতার অতল সলিলে আমাদিগকে নিমজ্জিত হইতে হইবে। আমাদের কোন কর্ম্মের ক্ষমতা নাই অথচ “আমি করিতেছি” এই মনের ভাবই কর্ম্মফলরূপী পাপ পুণ্যের বোঝ আমাদের স্কন্ধে চাপাইতেছে আমরা সকলে সেই বিশ্বজননীর সন্তান, সমস্ত নরনারী আমাদের ভ্রাতা ও ভগিনী, তাহা আমরা জানিয়া শুনিয়াও তাহাদিগকে আপনার করিতে পারি না তাহার কারণ প্রেমের অভাব। সদ্ভাবের স্থান স্বার্থপরতা আসিয়া অধিকার করিয়াছে ও আমাদিগকে আপনার-পর, ধনী-দরিদ্র প্রভৃতি করিয়া পৃথক্ করিয়া দিতেছে। প্রেমের কাছে সব সমান। প্রেম বলে পাপকে ঘৃণা করিবে পাপীকে ঘৃণা করিবে না। প্রেমের বলে বলীয়ান হইয়া নিতাই জগাই মাধাইকে ভ্রাতৃ সম্বোধন করিয়া প্রেমালিঙ্গনে বদ্ধ করিয়া হরিনাম দিয়া উদ্ধার করিয়াছিলেন। স্বার্থপরতা আমাদের মনুষ্যত্ব হরণ করিয়াছে, এখন আমরা এই আমিত্বটুকু লইয়া এই বিশাল জগতের একপ্রান্তে পড়িয়া আছি। আমরা যে সকলে মিলিয়া সেই বিশ্ব-জননীকে ডাকিতেছি ও পরস্পরের মধ্যে মনোভাব আদান প্রদান করিতেছি ইহা কি কম সৌভাগ্যের বিষয়? যাঁহার হৃদয় দিয়া ঈশ্বর এই শুভ ইচ্ছা প্রেরণ করিয়াছেন তাঁহাকে আমরা ধন্যবাদ দিই। প্রেমময়! তুমি আমাদের মনের সঙ্কীর্ণতা দূর কর। স্বার্থপরতার কুটিল পাপ আমাদের মনুষ্যত্ব হরণ করিয়াছে। স্বার্থপরতার অতল জলে নিমজ্জিত হইতেছি। প্রেমময়! তোমার রাজ্যে বাস করিয়া কেন এত সঙ্কীর্ণতা লইয়া আছি? তুমি আমাদিগকে রক্ষা কর, সাহারার মরুভূমিতে অমৃতের প্রস্রবণ হউক। যেন সকলকেই আপনার করিতে পারি সে শক্তি আমাদিগকে দেও, অহঙ্কার রাগ দ্বেষ পাপ কুটিলতা আমাদের হৃদয় হইতে চিরদিনের জন্য বিদায় গ্রহণ করুক। তোমার দয়া আমাদের হৃদয়ে অবতীর্ণ হউক, প্রেমের বন্যায় স্বার্থপরতার পাপ তাপ দুঃখ দরিদ্রতা ভাসিয়া যাউক।