ছয়

 বিশাল মস্কৌ সহরে অনেক কিছুই আছে। যতটা পারি দেখে নিচ্ছি। নানা প্রকার ম্যুজিয়মই আছে দশ-বারটা। আমরা গোটা চারেক দেখলাম। লেনিন ম্যুজিয়মে বাল্যকাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর স্মৃতির নিদর্শনগুলি স্তরে স্তরে সাজান রয়েছে। তাঁর গুলীবিদ্ধ ওভারকোট, ব্যবহার্য সব জিনিষই রয়েছে। স্তালিন তাঁর ৭০তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে নানা দেশ থেকে কত উপহার পেয়েছেন, একটি ম্যুজিয়ম তাতেই ভরে উঠেছে। লেনিন লাইব্রেরী পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ পুস্তকালয়। বসে পড়বার ঘরগুলি প্রশস্ত, দু’হাজার লোকের বসবার আসন। পাঁচশ’র অধিক কর্মচারী বই-এর তদারক করে। বই পাঠকের নিকট পৌঁছে দেবার জন্য বহু লিফ্‌ট আছে, আর আছে ক্ষুদে রেলওয়ে।

 রোজই জানলা দিয়ে ক্রেমলিন প্রাসাদ দেখি। জারের আমলের প্রাচীন গির্জাগুলির চূড়া, সুউচ্চ প্রাচীরের মিনার, পুরানো প্রাসাদ ও আধুনিক সরকারী ভবন দেখা যায়। দিল্লী বা আগ্রার কেল্লা-প্রাসাদ অপেক্ষাও আয়তন ও জাঁকজমক এর অনেক বেশী। ১৮শ শতাব্দীতে রাজধানী সেণ্ট পিটার্সবুর্গে স্থানান্তরিত হলেও ক্রেমলিনের বৈভব ম্লান হয়নি। সোবিয়েত আমলে এর খ্যাতি তো আজ জগৎজোড়া। এই বিশাল প্রাসাদ-দুর্গের এক কোণে অতি সাধারণ এক অট্টালিকায় তিনখানা সাদাসিধে কক্ষে স্তালিন থাকেন। ৪ঠা জুলাই ছাড়পত্র নিয়ে আমরা দক্ষিণ-পূর্ব দরজা দিয়ে ক্রেমলিনে প্রবেশ করলাম। আমাদের মত আরও অনেক দল নিজস্ব গাইড নিয়ে দেখতে এসেছে। পুরাতন জারদের প্রাসাদের বেশীর ভাগ ম্যুজিয়ম। অতীতের প্রবল প্রতাপ জারদের মণিমাণিক্যখচিত মুকুট ভূষণ ঘোড়ার সোনার সাজ স্বর্ণ ও রৌপ্য-পাত্র কত অলঙ্কার! প্রধান পাদ্রীদের বসন-ভূষণও জারের চেয়ে কোন অংশে নিষ্প্রভ নয়। ধর্মতন্ত্র ও রাজতন্ত্র একত্র হাত মিলিয়ে জনসাধারণকে কি ভাবে শোষণ ও শাসন করতো তার বহু নিদর্শন দেখলাম। রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের গোড়ার দিকে গল্প শুনতাম, বলশেভিকরা জারদের ধনরত্ন শিল্পকলার নিদর্শন সব লুটপাট করে নিয়েছে। এখানে এবং লেনিনগ্রাদের উইনটার প্যালেসে তার বিপরীত ব্যাপারই প্রত্যক্ষ করলাম। চার শতাব্দীর সম্রাটদের সংগৃহীত এবং পারস্য ও তুরস্কের শাহ সুলতানদের হীরামুক্তাখচিত পানপাত্র পেটিকা প্রভৃতি এবং ফরাসী অস্ত্রিয়া জর্মন সম্রাটদের উপহার-সামগ্রী এরা সযত্নে রক্ষা করেছে। সম্রাটদের প্রাসাদের সাজসজ্জা আসবাব দেয়াল ও ছাদের স্বর্ণখচিত কারুকার্য ফরাসী ও ইতালীয় শিল্পীদের অনবদ্য সৃষ্টি, সবই অক্ষত রয়েছে। ছেলেবেলায় পড়া পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য পদার্থ মস্কৌ নগরীর বিশাল ঘণ্টাও তেমনি ভগ্ন অবস্থায় রয়েছে। ঐশ্বর্য বিলাস প্রতাপ আজ কেবল তার বিষাদময় নিদর্শন রেখে ইতিহাসের পৃষ্ঠায় চিরনিদ্রিত। প্রাগৈতিহাসিক যুগের অতিকায় জীবের কঙ্কালের মত।

 সামন্ততান্ত্রিক যুগে নিষ্ঠুর শোষক-শ্রেণীর মধ্যেও অর্ধোন্মাদ উদার খেয়ালী মানুষ জন্মেছে। আমাদের দেশে দয়ালু দাতা দরিদ্র ও নিপীড়িতের বান্ধব এমন অনেক রাজা জমিদার এমন কি দস্যুদের কাহিনীও প্রচলিত আছে। জার সাম্রাজ্যেও এমন একটি মানুষের কাহিনী শুনে কৌতূহলী হয়ে উঠলাম। আমাদের গাইড বা পরিচালিকা কমরেড অকসানা দেবী তাঁর গল্পটা রাতে খাবার টেবিলে আমাদের শোনালেন এবং আশ্বাস দিলেন, পরদিন সকালেই তাঁর প্রাসাদে যাওয়া হবে। সেটাও একটা ম্যুজিয়ম।

 অষ্টাদশ শতাব্দীর অভিজাত জমিদার, নাম আস্তানফিনো। বিরাট জমিদারী এবং দু’লক্ষ ক্রীতদাসের মালিক। ফরাসী সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগ রুশ-অভিজাতদের ফ্যাসন ছিল। বসনে-ভূষণে চাল-চলনে আহারে-বিহারে গৃহনির্মাণ ও আসবাবে সর্বত্র ফরাসীর নকল। আস্তানফিনোও যুগধর্ম প্রভাবে ফরাসী সংস্কৃতির ভাবধারার বারি অঞ্জলী ভরে পান করেছিলেন। পৈত্রিক সম্পত্তির মালিক হয়েই ইনি সঙ্কল্প করলেন, সার্ফ বা ভূমিদাসদের মুক্তি দেবেন। কিন্তু অসহায় পরনির্ভর মানুষগুলি দাসপ্রথায় পশুর মত কায়ক্লেশে বেঁচে আছে, মুক্তি পেলেই যে মারা পড়বে! ইনি এদের নানা বিদ্যায় পারদর্শী করে তুলবার জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করলেন। সমাজের সর্বাধিক নীচু স্তরের মানুষের মধ্য থেকে কবি সাহিত্যিক স্থপতি চিত্রশিল্পী অভিনেতা-অভিনেত্রী ও নর্তকী সৃষ্টি হ’ল। আস্তানফিনো ছিলেন কলারসিক ও রঙ্গমঞ্চপ্রিয়। মস্কৌ-এ ইনি সাতটি রঙ্গালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এঁর দাসেরা মস্কোর উপকণ্ঠে যে বিশাল প্রাসাদ নির্মাণ করেছিল, নানা চিত্র ভাস্কর্য ও কারুকার্য দিয়ে সুষমামণ্ডিত করেছিল, তা আজ সোবিয়েত সরকার ম্যুজিয়মে পরিণত করেছেন। ইনি একজন রূপসী ও বিদুষী দাসীকে বিবাহ করেন। কিন্তু অতি ধনী হয়েও তাকে সামাজিক মর্যাদা দিতে পারেননি। ক্ষোভে ও অপমানে মহিলা আত্মহত্যা করেন। তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর শিল্পীদের জার গভর্নমেণ্ট সাইবেরিয়ায় নির্বাসিত করেন। এত বড় অনাচার অভিজাত সমাজ সইতে পারলো না। আস্তানফিনো ভগ্নহৃদয়ে প্রাণত্যাগ করেন।

 মস্কৌ-এর উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে বিস্তীর্ণ বাগানের মধ্যে আস্তানফিনোর প্রাসাদ। সম্মুখে একটা হ্রদ, ছোট ছোট ডিঙ্গী নৌকা নিয়ে তরুণ-তরুণীরা বাইচ খেলায় মেতেছে। এক কোণে একটা বৃহৎ গীর্জা, অযত্নে পড়ে আছে। প্রাসাদের পাশে দোকান-পশার খাবার সরবৎ ও কুলপী বরফ। দলে দলে দর্শনার্থী নরনারীর ভীড়। আমরা পশমের জুতো পরে প্রাসাদে প্রবেশ করলাম। শক্ত জুতোর ঘষায় মেঝের কাঠের রকমারী নক্সা ক্ষয়ে না যায়, সেই জন্য এ ব্যবস্থা। এ প্রাসাদটি দাসেরাই তৈরী করেছে। কাঠের স্বাভাবিক নানা রং-এর টুকরো দিয়ে বিচিত্র নক্সায় মেঝেগুলোর অপরূপ শোভা, চিত্র ও ভাস্কর্যের কি সংগ্রহ! এই প্রাসাদ কত সুন্দর, তা হায়দ্রাবাদের ফলকনামা প্রাসাদ বা বরোদার রাজপ্রাসাদ যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা কিছুটা অনুমান করতে পারবেন। ইয়োরোপের নানা দেশ থেকে সংগৃহীত বিচিত্র দ্রব্যসম্ভারের কি আশ্চর্য সমাবেশ। এর বৃহৎ নাট্যশালা ও নাচঘরের রূপসজ্জা নয়নময় হয়ে দেখবার মত। কলারসিক এবং সেকালের প্রগতিশীল অভিজাত বলেই এর কীর্তি সযত্নে রক্ষা করা হয়েছে।

 ৫ই জুলাই সকালে আমরা সরকারী কৃষি-গবেষণাগার দেখবার জন্য গর্কী গ্রামে যাত্রা করলাম। ৫০।৬০ মাইল পথ। সহরতলী ছাড়বার পর গ্রাম আরম্ভ হ’ল। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য আমাদের বাঙ্গলা দেশের মত নয়। উঁচু-নীচু তরঙ্গায়িত শস্যক্ষেত্র, মাঝে মাঝে বার্চ পাইনের বন, ছোট ছোট ক্ষীণস্রোতা নদী, নদীতে শত শত সাদা হাস সাঁতার দিচ্ছে, কতকগুলো চোখ বুজে ডাঙ্গায় রোদ পোহাচ্ছে। কৃষক যুবক-যুবতীরা মন্থরগতি ঘোড়ার গাড়িতে বসে গান গাইতে গাইতে চলেছে, রঙ্গীন পোষাক-পরা কৃষক-নারীরা আলু ও সব্জী ক্ষেতে কাজ বন্ধ করে গ্রীবা বাঁকিয়ে বিস্ময়-ভরা দৃষ্টিতে আমাদের দেখে নিচ্ছে, কোথাও গাছতলায় সুস্থ ও সবল দেহ ছেলেমেয়েরা খেলার আসর হাস্য-কৌতুকে জমিয়ে তুলেছে, এমনি টুকরো টুকরো ছবি চলে যাচ্ছে, সরে যাচ্ছে, দূরে ধূসর পাহাড়ের স্থির পটভূমির ওপর প্রকৃতি ও মানুষের সৃষ্টি তার বিশিষ্ট রূপ নিয়ে উদ্ভাসিত। আসানসোল থেকে হাজারীবাগ মোটর ভ্রমণের কথা মনে পড়ছিল।

 দিগন্তবিস্তৃত কৃষিক্ষেত্রের এক পাশে কৃষি-গবেষণাগার। লিসিঙ্কো পদ্ধতিতে গম আর রাই নিয়ে গবেষণা চলছে। অধ্যক্ষ গম ও রাই-এর মিশ্রণে উৎপন্ন অথচ রাই-এর চেয়ে উৎকৃষ্টতর এবং বেশী ফলনের গাছ দেখালেন। বিজ্ঞানকে কৃষিকাজে প্রয়োগ করে দীর্ঘকালের গবেষণা পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের ফলে কোন্ ফল ফুল ফসলের কতটা উন্নতি হয়েছে তা বোঝালেন। এ সব বুঝবার মত পাণ্ডিত্য আমাদের অবশ্য কারো নেই, তবে সাংবাদিকসুলভ সর্ববিদ্যাবিশারদের ভান করে আমরা কয়েকটি প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, উত্তর মেরুর কাছাকাছি স্বল্পস্থায়ী গ্রীষ্মকালে দ্রুত গম উৎপাদনের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে; তবে একবার গম বুনে ২।৩ বার ফসল পাওয়া এখনও সাফল্যলাভ করেনি। ফলের বাগানে বিশেষ সার প্রয়োগ এবং কলম করে, আপেল পীয়ার প্রভৃতির ফলন ও আয়তন বেড়েছে দেখলাম।

 এর পর অধ্যক্ষ আমাদের গো-পালনাগারে নিয়ে গেলেন। কয়েকটি বিভিন্ন জাতের ষাঁড় আর শ’দেড়েক গাভী রয়েছে। এখানে মিশ্র প্রজননে গোবংশের উন্নতির চেষ্টা চলছে। এ রকম অতিকায় গাভী আমি জীবনে দেখিনি। দৈনিক আধমণ থেকে ত্রিশ সের দুধ দেয় শুনে বিশ্বাস না হয়ে উপায় নেই। এখান থেকে দেশের নানা কেন্দ্রে উৎকৃষ্ট ষাঁড় ও গরু পাঠান হয়। আমাদের দেশের খর্বকায়া, বিশুষ্কস্তন্যা গো-মাতাদের রূপ চকিতে মনে পড়ে গেল। ‘গৌ মাতাকে লিয়ে’ আমরা নরহত্যাকে পুণ্য মনে করি, না খেতে দিয়ে বাছুর মেরে ফেলা, ফুঁকো দিয়ে দুধ দোহাকে আমরা পাপ মনে করিনে। গরুর প্রতি আমাদের দরদের একমাত্র প্রমাণ আইন সভায় আমরা গাভী হত্যা আইনতঃ নিষিদ্ধ করেছি। কিন্তু কেবল রাশিয়ায় কেন, সমগ্র ইয়োরোপে গো-খাদকদের গো-পালনের সযত্ন ব্যবস্থা দেখলে লজ্জায় মাথা নোয়াতে হয়।

 অধ্যক্ষের সঙ্গে আমরা কৃষিক্ষেত্রে গেলাম। দিগন্তবিস্তীর্ণ ঊষর স্তেপভূমি, হাজার বছর ধরে বন্ধ্যা হয়ে পড়েছিল। বার্চ, পাইন ও ওকের অরণ্যবলয় তৈরী করে, তীব্র শুষ্ক বায়ু রোধ করে, সেচ ব্যবস্থায় ক্রমে স্তেপভূমি শস্যশালিনী হয়ে উঠছে। অনুর্বর প্রান্তরকে জয় করার সংগ্রাম চলেছে, প্রধান হাতিয়ার ওক-গাছের চারাগুলি সবল হয়ে উঠছে। এক একটি অরণ্যবলয় তৈরী হবে, আর শস্যক্ষেত্র এগিয়ে যাবে। বহু দিনের পতিত জমিতে বুক-সমান উঁচু রাই-এর ক্ষেতে দাঁড়িয়ে মনে হতে লাগলো, এরা পারছে, কেন না রাষ্ট্র মাত্র ত্রিশ বছরে আদিম যুগের কৃষি ব্যবস্থাকে বিজ্ঞানের যন্ত্রযুগে এনে ফেলেছে। আর আমাদের দেশের কৃষকের এখনো শ্রীরামচন্দ্র বা অশোকের যুগের লাঙ্গল-বলদ ও দৈবের দয়ায় বৃষ্টিই ভরসা। বিদেশ থেকে আমরা অন্ন কিনি, অন্নসৃষ্টির যন্ত্র কিনি না। আমাদের আহার সংগ্রহ করে বেঁচে থাকবার প্রথাটা আদিম যুগেই রয়ে গেল; কিন্তু মরবার ও মারবার অতি আধুনিক মারণযন্ত্রগুলি আমরা বিদেশ থেকে প্রচুর আমদানী করি। কৃষকের ছেলে আকবরের আমলের কাঠের লাঙ্গল নিয়ে কৃষিক্ষেত্রে যায়, কিন্তু সে যদি সৈন্য ও পুলিশ দলে ভর্তি হয়, তার হাতে সে যুগের লাঠী সড়কী বল্লমের পরিবর্তে শোভা পায় দ্রুত মৃত্যুস্রাবী রাইফেল।

 এই গর্কী গ্রামেই একটা বাড়িতে লেনিন (১৯১৮-২৪) বাস করতেন। প্রায় একশ’ বিঘা উপবন ও উদ্যানের মধ্যে একটা দোতলা সুগঠিত বাড়ি, পশ্চিমে নীল পাইনের বন ঢালু হয়ে নেমে গেছে। দেখলেই বোঝা যায়, প্রাক্-বিপ্লব যুগে কোন ধনী অভিজাতের উদ্যান-বাটিকা ছিল। বাড়ির বাইরে চাকরদের থাকবার এবং পাকশালা প্রভৃতির স্বতন্ত্র বন্দোবস্ত। ইদানীং পাহারাদার সোবিয়েত পল্টনেরা এখানে থাকে। চারিদিকে কড়া পাহারার ব্যবস্থা, কেউ কোন জিনিস গাছপালা না নষ্ট করে সে দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। নবীন রাশিয়ার এটা এক প্রধান তীর্থক্ষেত্র। দলে দলে নরনারী আসছে, বাসে লরীতে গাড়িতে। এ বাড়ির চৌহদ্দীর মধ্যে ধূমপান করা নিষেধ। লেনিনের লাইব্রেরী, শয়নকক্ষ, বসবার ঘরের সব আসবাব সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁর চিঠিপত্র, হাতের টুকিটাকী লেখা, তাঁর ছবি এ সব পরিদর্শিকা বুঝিয়ে দিলেন। এখানে একটা রেকর্ডে লেনিনের বক্তৃতা শুনলাম। স্পষ্ট সতেজ আবেগপূর্ণ কণ্ঠস্বর। স্তালিন মলটোভ কিরোভ প্রভৃতি বলশেভিক নেতাদের সঙ্গে যে সব চেয়ার বা বাগানের বেঞ্চে বসে লেনিন পরামর্শ করতেন, সেগুলি চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। বাইরে গ্যারাজে লেনিনের ব্যবহৃত দু’খানা সে আমলের রোলস রয়েস গাড়িও রয়েছে দেখা গেল।

 তরুবীথিকার অন্তরালে এক নিভৃত স্থানে বসে মনে হ’ল, এই ভবনে ১৯২৪ সালের ২১শে জানুয়ারী মাত্র ৫৪ বৎসর বয়সে মানব-ইতিহাসের অনন্যসাধারণ বিপ্লবী নেতা মহান লেনিন চিরনিদ্রায় অভিভূত হয়েছিলেন। শিশু সোবিয়েতের সেই মহা দুর্দিনে— লেনিনের নামে, কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারী ও লেনিনের একনিষ্ঠ শিষ্য কমরেড স্তালিন শপথ গ্রহণ করেছিলেন; লেনিন-নির্দিষ্ট পথে মার্কস্‌বাদের পাষাণ কঠিন ভিত্তির উপর তিনি কৃষক-শ্রমিকের রাষ্ট্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন। এই শপথ-বাক্য বহু বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে স্তালিন অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। সুসম্বদ্ধ শক্তিমান সোবিয়েত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র আজ সর্বহারা নিপীড়িত জনগণের মুক্তির দিশারী, ধনতন্ত্রী শোষক-শ্রেণীর দুশ্চিন্তার স্থল।