আশাকানন/অষ্টম কল্পনা
অষ্টম কল্পনা
ব্রহ্মবন্দনা ও সরস্বতী-অর্চ্চনা।
ব্রহ্মাণ্ড ভুবন সৃজন যাঁহার,
প্রাণী বিরচিত যাঁর,
যে জন হইতে জগত পালন,
যিনি জীব-মূলাধার;
রবি, শশধর, পবন, আকাশ,
জ্যোতিষ্ক, নক্ষত্রদল,
জীমূত, জলধি, পর্ব্বত, অরণ্য,
হ্রদিনী, ধরিত্রী, জল,
নিনাদ, বিদ্যুৎ, অনল, উত্তাপ,
হিম, রৌদ্র, বাষ্প, বাস,
পুষ্প, বিহঙ্গম, ফল, বৃক্ষলতা,
লাবণ্য, আস্বাদ, শ্বাস,
বাক্য, স্পর্শ, ঘ্রাণ, শ্রবণ, দর্শন,
স্মৃতি, চিন্ত সুখকর,
সৃজন যাঁহার প্রেম, ভক্তি, আশা,
পালন পৃথিবী'পর;
জগত-ভূষণ মানব-শরীর,
মানব-ভূষণ মন,
সৃজিলা যে জন নমি আমি সেই
দেব নিত্য সনাতন।
করেছি প্রবেশ দুর্গম কান্তারে,
দুরাশা বামন হৈয়ে
ধরিতে শশাঙ্ক ধরাতে থাকিয়া
শিশুর উৎসাহ লৈয়ে;
দুরন্ত বাসনা আশার কাননে
ভ্রমিব পৃথিবীময়;
কর কৃপা দান কৃপানিধি প্রভু
হর ভ্রান্তি, হর ভয়।
পথের সম্বল নাহি কিছু মম
অবলম্ব সুধু আশা,
জ্ঞান চিন্তাহীন বোধ বিদ্যাহীন
অঙ্গহীন খর্ব্ব ভাষা;
যশঃ তৃষাতুর, ক্ষিপ্ত অভিলাষ
পীড়িত করে হৃদয়,
সর্ব্বশক্তিময়, তব শক্তি বিনা
বাঞ্ছা পূর্ণ কভু নয়।
কর দয়াময় দয়াবিন্দু দান,
আমি ভ্রান্ত মূঢ়মতি,
জ্ঞানী পরমেশ আদি মধ্য শেষ
অচিন্ত্য চরণে নতি।—
তুমিও গো দয়া কর মা ভারতী,
দেও মনোমত ফুল,
সাজাই কানন বাসনা যেরূপ
তুষিতে বান্ধবকুল;
খোল মা বারেক উদ্যান তোমার,
প্রবেশ করিব তায়,
তুলিয়া আনিব গুটিকত ফুল
গাঁথিতে নব মালায়;
নাহি সে সুবর্ণ রজতের কুঁজি
অদৃষ্টে আমার ঠাঁই,
বিহনে সাহায্য জননি তোমার,
কাননে কেমনে যাই।
কত চিত্র মাতঃ! দেখি চিত্ত-পটে,
বাসনা অক্ষরে আঁকি,
বাণীর অভাবে না পারি আঁকিতে
অন্তরে লুকায়ে রাখি!
পূর্ণ কর মাতঃ, মূঢ়ের বাসনা
রসনাতে দিয়া বাণী,
বর্ণে যেন পাই শত অংশ তার
যে চিত্র মানসে মানি;
মানবের হৃদি আঁকি চিত্র-পটে
রচিব আশার বন!
জননি, তোমার করুণা-বিহনে
কোথা পাব কিবা ধন!
দেও গুটিকত মানস-রঞ্জন
কুসুম তোমার তুলে,
পুরাই বাসনা, আশার কানন
সাজাই তোমার ফুলে!