আশাকানন

[ ১৮৭৬ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত ]

হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্পাদক

শ্রীসজনীকান্ত দাস

বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ

২৪৩।১, আপার সারকুলার রোড,

কলিকাতা-৬

প্রকাশক

শ্রীসনৎকুমার গুপ্ত

বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ


প্রথম সংস্করণ—আষাঢ়,

মূল্য দুই টাকা


শনিরঞ্জন প্রেস, ৫৭ ইন্দ্র বিশ্বাস রোড, কলিকাতা-৩৭ হইতে

শ্রীরঞ্জনকুমার দাস কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত

৭'২—১. ৭. ৫৩

'আশাকানন' ১২৮৩ বঙ্গাব্দে (বেঙ্গল লাইব্রেরিতে জমা দেওয়ার তারিখ ৩০ মে ১৮৭৬) প্রকাশিত হইলেও ইহা যে তিন বৎসর পূর্বে ১২৮০ বঙ্গাব্দে (১৮৭৩) রচিত হইয়াছিল, প্রকাশক উমাকালী মুখোপাধ্যায় তাহার “বিজ্ঞাপনে” তাহা জ্ঞাপন করিয়াছেন। পৃষ্ঠা-সংখ্যা ছিল ১৭২। আখ্যাপত্রটি এইরূপ ছিল—

আশাকানন। [ সাঙ্গ-রূপক-কাব্য ] শ্রীহেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ও শ্রীউমাকালী মুখোপাধ্যায় কর্তৃক প্রকাশিত। কলিকাতা। রায় যন্ত্র, নং ১৭, ভবানীচরণ দত্তের লেন, শ্রীবাবুরাম সরকার দ্বারা মুদ্রিত। সন ১২৮৬ সাল।

এই allegorical কাব্যটি লিখিয়া, প্রকাশ করিতে হেমচন্দ্রের সঙ্কোচ ছিল। 'বীরবাহু’ কাব্যে তিনি স্বদেশ ও স্বজাতিকেই একটি কল্পিত কাহিনীর মধ্য দিয়া বড় করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু তাঁহার কবিচিত্ত তাহাতে সম্পূর্ণ প্রসন্ন হয় নাই। তিনি মানবের কাব্য, জগতের কাব্য লিখিতে চাহিলেন। 'আশাকানন' সেই ইচ্ছার ফল। তবু তিনি স্বদেশকে সম্পূর্ণ ভুলিতে পারেন নাই, বাল্মীকির সাক্ষাতে দেশমাতার দুঃখ নিবেদন করিয়াছেন।

শশাঙ্কমোহন সেন 'বঙ্গবাণী' গ্রন্থের (১৯১৫) দ্বিতীয় খণ্ডে (পৃ. ৭-৯) এবং শ্রীমন্মথনাথ ঘোষ 'হেমচন্দ্র' পুস্তকের (১৩২৭) দ্বিতীয় খণ্ডে (পৃ. ৪৪-৫৬) 'আশাকাননে'র বিস্তৃত সমালোচনা করিয়াছেন।

স্বতন্ত্র পুস্তকাকারে 'আশাকাননে'র প্রথম সংস্করণ মাত্র দেখিয়ছি। গ্রন্থকারের জীবিতকালে প্রকাশিত গ্রন্থাবলীভুক্ত 'আশাকাননে'র সহিত প্রথম সংস্করণের পাঠ মিলাইয়া আমাদের পাঠ প্রস্তুত করা হইয়াছে।

প্রথম সংস্করণের বিজ্ঞাপন

আশাকানন একখানি সাজ-রূপক কাব্য। মানব-জাতির প্রকৃতিগত প্রবৃত্তিসকলকে প্রত্যক্ষীভূত করাই এই কাব্যের উদ্দেশ্য। ইংরাজি ভাষায় এরূপ রচনাকে 'এলিগারি' কহে। প্রধান বিষয়কে প্রচ্ছন্ন রাখিয়া, তাহার সাদৃশ্যসূচক বিষয়াস্তরের বর্ণনা দ্বারা সেই প্রধান বিষয় পরিব্যক্ত করা, ইহার অভিপ্রেত। ইহা বাহ্যতঃ সাদৃশ্যসূচক বিষয়ের বিবৃতি; কিন্তু প্রকৃতার্থে গূঢ় বিষয়ের তাৎপর্য্যবোধক। এই ইংরাজি শব্দের প্রকৃত অর্থ প্রকাশ করিতে পারে, এরূপ কোনও শব্দ বাঙ্গালা ভাষায় প্রচলিত নাই; এবং কোনও বিচক্ষণ পণ্ডিতের নিকট অবগত হইয়াছি যে, সংস্কৃত ভাষাতেও অবিকল প্রতিশব্দ পাওয়া যায় না। তবে আলঙ্কারিকেরা যাহাকে 'অপ্রস্তুত প্রশংসা' বলিয়া উল্লেখ করেন, যৌগিকার্থে তাহার সহিত ইহার সৌসাদৃশ্য আছে; কিন্তু সাঙ্গ-রূপক শব্দ সম্যক্‌ অর্থবোধক হওয়াতে তাহাই ব্যবহার করা হইল।

প্রায় তিন বৎসর অতীত হইল এই কাব্য লিখিত হয়। কিন্তু কবি নানা কারণে সঙ্কুচিত হইয়া পুস্তকখানি প্রচার করিতে পরাঙ্মুখ ছিলেন, সম্প্রতি তিনি আমার অনুরোধ এড়াইতে না পারিয়া ইহা প্রকাশ করিতে অনুমতি দিয়াছেন। এ প্রকার কাব্য সম্বন্ধে লোকের মতভেদ থাকিতে পারে; এবং অনেক স্থলে কবিগণের আশঙ্কাও অকিঞ্চিৎকর বলিয়া প্রতিপাদিত হইয়াছে। হেম বাবুর সুললিত লেখনীরিনিঃনৃত কাব্যরসাম্বাদনে সর্ব্বসাধারণকে বঞ্চিত করা অকর্ত্তব্য মনে করিয়া আমি ইহার মুদ্রাঙ্কনকার্য্যে প্রবৃত্ত হইয়াছি। সর্ব্বথা ঈদৃশ কাব্য বঙ্গ-সাহিত্য হইতে বিলুপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয় নহে।

খিদিরপুর

১লা মে, ১৮৭৬

শ্রীউমাকালী মুখোপাধ্যায়

পরিচ্ছেদসমূহ (মূল গ্রন্থে নেই)

এই লেখাটি ১ জানুয়ারি ১৯২৯ সালের পূর্বে প্রকাশিত এবং বিশ্বব্যাপী পাবলিক ডোমেইনের অন্তর্ভুক্ত, কারণ উক্ত লেখকের মৃত্যুর পর কমপক্ষে ১০০ বছর অতিবাহিত হয়েছে অথবা লেখাটি ১০০ বছর আগে প্রকাশিত হয়েছে ।