উপদেশ ও শিক্ষা/বিদ্যা ও শিক্ষা
বিদ্যা ও শিক্ষা।
যাহাকে যেমন শিখাইবে, সে সেইরূপ শিখিবে। কেবল মনুষ্যশিশু কেন, সকল জীবের শিশুকেই নানাপ্রকার শিক্ষা দেওয়া যাইতে পারে; শিক্ষা দেওয়া হইয়াও থাকে। কুকুরকে কতপ্রকার শিক্ষা দেওয়া হয়; অশ্বও নানাপ্রকারে শিক্ষিত হইয়া থাকে। শুক পক্ষী কথা কহিতে শিখে; বানর অভিনয় করিতে শিখে; ভল্লুকও নৃত্য করিতে শিখে।
পুস্তক পড়িলেই জ্ঞান হয়, শিক্ষা হয়; অন্যথা হয় না; ইহা যাঁহারা মনে করেন, তাঁহারা ভ্রান্ত। রণজিৎ সিংহ ক খ জানিতেন না; কিন্তু অনেক বিষয়ে তাঁহার অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল। নেপালের জঙ্গ বাহাদুর কখনও বর্ণপরিচয় করেন নাই; কিন্তু রাজনীতিশাস্ত্রে তাঁহার বিলক্ষণ ব্যুৎপত্তি ছিল। পুস্তক পাঠে বিদ্যালাভের সুবিধা হয়; এই নিমিত্ত লোকে বাল্যাবধি পুস্তকপাঠ করিয়া থাকে।
শিক্ষার দুই উপায়; আদর্শ এবং উপদেশ। দুইটী উপায়ই অবলম্বন করিতে হইবে, কেবল উপদেশে বা কেবল আদর্শে নির্ভর করিলে চলিবে না। আদর্শের অভাব উপদেশে পূর্ণ করিতে হইবে; উপদেশ আদর্শের গুণে গভীরভাবে অঙ্কিত হইবে। কেবল উপদেশে শিক্ষা দিলে, জ্ঞানোপার্জ্জনে অসুবিধা ও বিলম্ব ঘটিয়া থাকে; এই নিমিত্ত উপদেশের সঙ্গে সঙ্গে আদর্শ আবশ্যক।
অধ্যবসায় কাহাকে বলে, উপদেশে তাহার শিক্ষা দিয়া, একটী বিখ্যাত অধ্যবসায়ী মহাজনকে আদর্শরূপে সম্মুখে ধরিয়া দাও; বালকের জ্ঞানলাভ সহজেই হইবে। অধ্যবসায়শীল মানবের দৃষ্টান্ত না পাও, মধুমক্ষিকা ও পিপীলিকা প্রভৃতি সামান্য জীবের অসামান্য অধ্যবসায় আদর্শরূপে উপস্থিত কর; শিশুর শিক্ষাপথ সহজেই প্রশস্ত হইয়া পড়িবে। পিতৃভক্তি শিখাইবার সময় রামকে আদর্শ কর; ভ্রাতৃভক্তির সময় লক্ষ্মণকে লইয়া আইস। ইতিহাস এবং পুরাণে এইরূপ কত আদর্শ পাইবে।প্রবৃত্তি চাই, বুদ্ধি চাই; তবে শিক্ষালাভের সুবিধা হইবে। বুদ্ধি সকলের সমান নহে সত্য; কিন্তু পরিচালনায় বুদ্ধি তীক্ষ্ণ হয়। ক্রমাগত ঘষিলে পাথরেও ধার হয়। প্রবৃত্তিই শিক্ষার প্রধান উপায়; শিক্ষার অভ্যাস থাকিলে, প্রবৃত্তি আপনাআপনিই বাড়ে; অনভ্যাসে প্রবৃত্তি আপনাআপনিই কমিয়া যায়। শিক্ষায় যত প্রবৃত্তি বাড়িবে, জ্ঞানের পথ ততই প্রশস্ত হইবে; বুদ্ধি ও সঙ্গে সঙ্গে ততই প্রখর হইবে।
এই লেখায় এই অংশে একটি চিত্র থাকা উচিৎ। যদি আপনি তা দিতে পারেন, তবে, দয়া করে সাহায্য:চিত্র দেখুন। |