উপদেশ ও শিক্ষা/শিক্ষা ও নীতি
এই লেখায় এই অংশে একটি চিত্র থাকা উচিৎ। যদি আপনি তা দিতে পারেন, তবে, দয়া করে সাহায্য:চিত্র দেখুন। |
শিক্ষা ও নীতি।
যাহার গুণে মানুষ এই সংসারে সদা সুপথে নীত হইয়া থাকেন, তাহাকে নীতি বলে। সুতরাং নীতি শিক্ষার অঙ্গীভূত।
যে শিক্ষায় হৃদয়ের সুপ্রবৃত্তি উত্তেজিত এবং কুপ্রবৃত্তি প্রশমিত হয়, তাহাই নীতিশিক্ষা। উপদেশ এবং আদর্শ — নীতিশিক্ষার দুই পথ। উপদেশে হৃদয়ে শিক্ষার বীজ অঙ্কুরিত হইবে; আদর্শে সেই অঙ্কুর পরিপুষ্ট হইবে। প্রথম পাঠে এ কথা বলিয়াছি।
বিকৃত এবং কুপথগামিনী নীতিকে লোকে কুনীতি বলিয়া থাকে; যে নীতি সদা মানবকে স্থপথে রাখিয়া দেয়, তাহাকে লোকে সুনীতি কহে।ধর্ম্মের সহিত নীতির ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ। ধর্ম্মপথে চলিতে পারিলেই নীতিশিক্ষার পক্ষে সুবিধা হয়। যাহাতে অধর্ম্ম এবং পাপ, তাহাতে কখনই নীতিরক্ষা হইতে পারে না।
সকল ধর্ম্মেই সংসার-যাত্রার পথ নির্দ্দিষ্ট আছে। সেই পথে নিয়মিতরূপে বিচরণ করিতে পারিলেই, নীতিপথ প্রশস্ত থাকিবে। মহাজনগণের আদেশ এবং উপদেশও সর্ব্বদা ও সর্ব্বথা শিরোধার্য্য করা উচিত। আর মহাজনেরা যে পথে গিয়াছেন, সেই পথে ভ্রমণ করাই নীতিশিক্ষা ও নীতিরক্ষার প্রশস্ত উপায়।
মৃত ও জীবিত মহাজনদিগের আদর্শে পরিচালিত হইতে পারিলে, কখনই নীতিপথ হইতে বিপথে যাইতে হয় না। শিশু এবং বালকদিগের পক্ষে জীবিত লোকের আদর্শই অধিক শিক্ষাপ্রদ। রামের কাছে পিতৃভক্তি শিক্ষা করা অপেক্ষা স্বীয় পিতৃভক্ত জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার কাছে শিক্ষা করা বালকের পক্ষে অধিক সহজ। লক্ষ্মণের নিকট ভ্রাতৃভক্তি শিখা অপেক্ষা বালকের পক্ষে স্বীয় ভ্রাতৃবৎসল পিতা বা পিতৃব্যের কাছে শিখা অধিক সহজ।
পিতা মাতা জ্যেষ্ঠভ্রাতা প্রভৃতি গুরুজনের সৎকার্য্য দেখিলে শিশু ও বালকদিগের যেরূপ শিক্ষা হইতে পারে, পুস্তকের সহস্র আখ্যায়িকা বা লক্ষ উপদেশেও সেরূপ হইতে পারে না। বিদ্যালয়ে শিক্ষক মহাশয়ের আদর্শে যেরূপ নীতি উপার্জ্জিত হইতে পারে, তাঁহার লক্ষ উপদেশেও সেরূপ হইতে পারে না। উপদেশ ও আদেশের সঙ্গে সঙ্গে আদর্শের প্রয়োজন।
“সৎসঙ্গে কাশীবাস, অসৎসঙ্গে সর্ব্বনাশ।” বালকেরা যেরূপ দেখে সেইরূপ শিখে। সেই জন্যই ত বিজ্ঞেরা বলিয়া থাকেন; “যদি না পড়াস্ পো ত সভাতে থো।” সৎসঙ্গে থাকিতে পাইলে, মূর্খও নীতিরক্ষা করিয়া চলিবে; অসৎসঙ্গে পড়িলে পণ্ডিতও সদা দুর্নীতির পঙ্কে নিমগ্ন হইয়া থাকিবেন।