ঋতু

মোরা কালের সাথে বেড়াই ঘুরে মায়ের শিশুর মত,
মোরা আপন কাজে আপন মনে থাকি সদাই রত।
গগন মাঝে মেঘের কোলে
অচল শিরে নদীর নীরে
বরণ গন্ধ গীত ছন্দ জাগাই অবিরত।
গ্রীষ্ম : মোরা নিদাঘ দিনে,
তার ভীষণ রোষে সাগর শোষে, দহে ধরার অঙ্গ,
তপ্ত পবন বহে সঘন, কাঁপেন বসুন্ধরা
রবির প্রখর করে, হরে জীবন, ঝরে অনল ধারা।
বর্ষা :  মোরা শীতল করি পৃথিবীরে, নির্মল বরষা নীরে,
ঘোর গগনতল ছল ছল নীল জলদ ঘন ঘোরে।
নীরদ গুরু গুরু গম্ভীর গরজে, দুরু দুরু হৃদয়ে,
অবিরল বর্ষণ ঝর ঝর প্লাবিত সকল চরাচর।
চমকি চমকি চপলা চলে, চঞ্চল কুটিল বিভঙ্গে;
রাজিত ইন্দ্র-শরাসন সুন্দর জলধর অঙ্গে।
শরৎ  :  মোরা ধরার দেহে ফুটাই কান্তি মুখে সুখের হাসি,
নিশার গলে তারার মালা, ভালে বিমল শশী
মোহন বেশে, ধরায় আসে গোধূলি রূপসী,
অঞ্চলে শেফালি শোভে শিরে কিরণ রাশি।

হেমন্ত : মোরা শরৎ শেষে মলিন বেশে
যখন যেথায় আসি,
ভাঙি ধরার সুখের খেলা
স্বপন মোহের হাসি;
মলিন রবি, মলিন শশী, ম্লান গগন তলে,
ঢাকি ধরার বদন খানি কুয়াসা অঞ্চলে।
শীত : মোরা থামাই মনের মধুর গীতি হরষ কোলাহল;
তরুলতার নয়ন বাহি ঝরে অশ্রু জল।
মোদের চরণ ভরে তুষার ঝরে, অবশ দিবাকর,
মোদের হাসির সুরে প্রাণ শিহরে কাঁপে চরাচর।
বসন্ত : মোরা মুছাই ধরার নয়ন বারি জাগাই নবীন প্রাণে,
নূতন সুখে নূতন সুরে নূতন ভজন গানে।
সাজায় তাহারে দিই কিশলয় ভারে
মুকুল দোলে ফুলের চারু হারে, কতই যতন করে!
আনন্দ জাগিয়া রহে সুনীল অম্বরে,
সুধা ঝরে চরাচরে প্রেম উথলে অন্তরে।