উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র/বিবিধ প্রবন্ধ/আশ্চর্য প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব

আশ্চর্য প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব

 একজন স্পানিয়ার্ড আফ্রিকা দেশে পাখি মারিতে গিয়াছিল। পাখি শিকার করিয়া ফিরিয়া আসিবার সময় পথে একটা সিংহ আসিয়া তাহার সম্মুখে দাঁড়াইল। পশুরাজের মুখভঙ্গি দেখিয়াই সে বুঝিতে পারিল যে কেবলমাত্র কুশল জিজ্ঞাসা করিবার জন্য তাঁহার আগমন

হয় নাই। তাহার বন্দুক পাখি মারিবার জন্য প্রস্তুত করা ছিল। ইহা ভিন্ন আর গুলি বারুদ তাহার সঙ্গে ছিল না। গুলি করিলে সিংহ মরিবে না, কেবলমাত্র বিপদ বাড়িবে। সুতরাং সে অন্য উপায়ে রক্ষা পাইবার পথ দেখিতে লাগিল। তাহার মাথার টুপিতে অনেকগুলি উটপক্ষীর পালক বাঁধা ছিল। ভাবিয়া চিন্তিয়া সে টুপি মুখে করিয়া লইল। পালকগুলি কেশরের মতন হইয়া তাহার বুক মুখ ঢাকিয়া ফেলিল। ভিতর হইতে চক্ষু দুটি মিট্‌ মিট্‌ করিতে লাগিল। এইরূপ চেহারা করিয়া সে হামাগুড়ি দিয়া সিংহের দিকে যাইতে লাগিল। সিংহ ভাবিল যে এরূপ জানোয়ার তো সে কোনোদিন খাইতে যায় নাই—তবে-বা এটাই তাহাকে খাইতে আসিল। সুতরাং এরূপ কিম্ভূতকিমাকারের সামনে অধিকক্ষণ থাকা নিতান্তই আশংকাজনক মনে করিয়া, সে ইহাপেক্ষা নিরাপদ স্থানে যাইবার পন্থা দেখিল।

 একজন লোক নানাপ্রকার শব্দ ও বিদ্‌ঘুটে মুখভঙ্গি করিতে পারিত। এই লোকটাকে একবার সিংহে তাড়া করিল। সে বেচারা প্রাণপণে দৌড়িয়াও দেখিল যে আর বাঁচিবার আশা নাই এবারে নিশ্চয়ই সিংহ তাহাকে ধরিবে। এমন সময় সে হঠাৎ থামিল। থামিয়াই সিংহের দিকে তাকাইল — আমরা যেরকম করিয়া একে অন্যের পানে তাকাই সেরূপ করিয়া তাকাইল না, সিংহের দিকে পৃষ্ঠদেশ রাখিয়া মাথা নোঙাইয়া দুই ঠ্যাঙের মধ্যস্থ ফাঁক দিয়া তাকাইল, আর তখন মুখের এমনি একখানা চেহারা করিল যে তেমন চেহারা আর সে কখনো করে নাই। ইহার সঙ্গে সঙ্গে তাহার সেই ভয়ানক শব্দগুলির ভিতর হইতে বাছিয়া, যে শব্দটি সকলের চাইতে অস্বাভাবিক, সেই শব্দটি করিল। সিংহ থামিল এবং একটু চিন্তান্বিত হইল, আর এক মুখ বিকৃতি, আর-এক চীৎকার—সিংহ ভয় পাইল এবং ফিরিল। আর-এক চীৎকার—সিংহ উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়িয়া পলাইল।

 হঠাৎ কোনোস্থানে বিপদে পড়িলে ভয়ে জড়সড় না হইয়া বিপদ হইতে রক্ষা পাইবার উপায় ভাবা উচিত।