উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র/বিবিধ প্রবন্ধ/নানাপ্রসঙ্গ: ৫
এই ভাবিয়া সকলে ঠেলিয়া তাহাকে ঘরের বাহির করিয়া দিল, আর আমনি ঘরের উপর বাজ পড়িয়া তাহারা মরিয়া গেল। যাহাকে বাহির করিয়া দিয়াছিল সে বাঁচিল।
একটি ছোটছেলের বাপ-মা মরিয়া যাওয়াতে সে বড়ই দুঃখে পড়িল। সে মনে করিল যে এরূপ দুঃখ সহ্য করার চাইতে মরিয়া যাওয়াই ভালো। এই ভাবিয়া সে একটা গর্ত খুঁড়িতে আরম্ভ করিল। এমন সময়ে এক পুত্রহীন সওদাগর সেই পথ দিয়া যাইতেছিল, সে সেই ছেলেটিকে ঐরাপ গর্ত খুঁড়িবার কারণ জিজ্ঞাসা করিল। বালক উত্তর করিল, আমার মা নাই, বাপ নাই, আমার আর বাঁচিয়া ফল কি? আমি এই গর্তে পড়িয়া মরিব।” সওদাগরের বড় দয়া হইল, সে বলিল, “তোমার মরিয়া কাজ নাই, তুমি আমার সঙ্গে এস, আমরাই তোমার বাপ-মা হইব।’ বালক সওদাগরের সঙ্গে তাহার বাড়িতে গেল, সেখানে সে খুব যত্ন পাইতে লাগিল। কিছুদিন পরে সওদাগরের এক ছেলে হইল। সওদাগর ও তাহার স্ত্রী এখন সেই দুঃখী ছেলেটিকে অত্যন্ত হিংসা করিতে লাগিল। তাহদের হিংসা এতদূর বাড়িয়া উঠিল যে তাহারা সেই ছেলেটিকে মারিয়া ফেলিবার জন্য একটা গভীর কুপ খুঁড়িয়া রাখিল— মনে করিল, ‘একবার তো কূপে পড়িয়াই মরিতে গিয়াছিল, এবারে কূপ প্রস্তুত রহিয়াছে দেখিলে অবশ্যই তাহাতে ঝাঁপিয়া মরিবে। কিন্তু সেই দুঃখী সন্তান ইহার কোনো খবর পাইবার পূর্বেই সওদাগরের নিজের ছেলে সেই কূপ দেখিতে গেল এবং হঠাৎ তাহাতে পড়িয়া প্রাণত্যাগ করিল।
গল্পগুলি সত্য না হউক ইহাদের ভিতর বেশ উপদেশ আছে। পরের মন্দ ভাবিও না। দেখ এই সকল লোক পরের অনিষ্ট করিতে গিয়া কি শক্তিই পাইল।