উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র/বিবিধ প্রবন্ধ/হারমোনিয়াম শিক্ষা
হারমোনিয়াম—শিক্ষা
সুর ও সপ্তক
একটি গান গাইতে বা বাজাইতে হইলে প্রধানতঃ দুটি বিষয়ের দিকে দৃষ্টি রাখিতে হয়; গানটিতে কি কি সুর লাগিতেছে, আর কোন সুরটি কতক্ষণ থাকিতেছে।
প্রত্যেকটি সুরের জন্য হারমোনিয়াম যন্ত্রে এক একটি করিয়া “পর্দা” থাকে। প্রধান সুরগুলির নাম ‘স্বাভাবিক’ সুর, ইহাদের জন্য সাদা পর্দা; অন্য সুরগুলির নাম ‘বিকৃত’ সুর, ইহাদের জন্য কাল পর্দা।
সা, রে, গা, মা, পা, ধা, নি—সুরের এই সাতটি নাম। এত সুর থাকা সত্ত্বেও যে সাতটির অধিক নাম নাই, তাহার কারণ আছে। সুরের ধর্ম এই যে, সাতটির পর আবার গোড়ার সুরটি ফিরিয়া আইসে। সা রে গা মা পা ধা নি ক্রমে সাত সুর চড়িয়া, আর এক ধাপ উঠিলেই দেখা যায় যে পুনরায় অবিকল ‘সা’র মতন একটি সুরে উপস্থিত হওয়া গিয়াছে। এই ‘সা’ প্রথম ‘সা’ হইতে অবশ্য অনেকখানি চড়া; কিন্তু তথাপি ইহাদের ভিতরে এরূপ আশ্চর্য সাদৃশ্য আছে যে ইহাদিগকে পৃথক নাম দেওয়া চলে না। সুতরাং এই নুতন সুরেরও নাম ‘সা’। এইরূপে, ইহার পরের সুরটি ‘রে’ তাহার পরেব সুরটি ‘গা’ এইরূপ করিয়া ক্রমে আবার ঐ সা রে গা মা পা ধানি সাতটি সুর পাওয়া যায়। হারমোনিয়মে এই সকল সুরের জন্য সাদা পর্দা থাকে। এগুলি স্বাভাবিক সুর। বিকৃত সুরগুলি স্বাভাবিক সুরের মধ্যবর্তী। হারমোনিয়মে এইরূপ বিকৃত সুর সা ও রে’র মধ্যে একটি, রে ও গা’র মধ্যে একটি, মা ও পা’র মধ্যে একটি, পা ও ধা’র মধ্যে একটি, এবং ধা ও নি’র মধ্যে একটি আছে। গা ও মা’র মধ্যে এবং নি ও সা’র মধ্যে কোন বিকৃত সুর নাই।
বিকৃত সুরগুলিকে আর পৃথক কোন নাম দেওয়া হয় নাই। বিকৃত সুরটি যে দুটি স্বাভাবিক সুরের মধ্যে, তাহদেরই নামে তাহারও নাম হয়। সা ও রে’র মধ্যে যে বিকৃত সুরটি, তাহা কড়ি সা বা কোমল রে। কড়ি সা, কিনা সা’র চাইতে কড়ি অর্থাৎ চড়া। কোমল রে, কিনা রে’র চাইতে কোমল অর্থাৎ খাদ। এইরূপ কড়ি রে বা কোমল গা, কড়ি মা বা কোমল পা, কড়ি পা বা কোমল ধা, কড়ি ধা বা কোমল নি। সা ও মা-এর কোমল নাই; নি ও গা-এর কড়ি নাই।
সা রে গা মা পা ধা নি এই সাতটি সুরকে লইয়া ‘সপ্তক’ হইয়াছে। খুব খাদ হইতে খুব চড়া পর্যন্ত অনেকগুলি সপ্তক আছে। হারমোনিয়মে ৩ হইতে ৫ সপ্তক সুর পাওয়া যায়, কিন্তু কণ্ঠে তিনটির অধিক সপ্তক সচরাচর বাহির হইতে দেখা যায় না। এইজন্যই হিন্দু সংগীতে তিনটি মাত্র সপ্তকের উল্লেখ দেখা যায়। এই তিনটি সপ্তকের তিনটি নাম আছে: খাদ সপ্তক ‘উদারা’, মধ্য সপ্ত ‘মুদারা’, চড়া সপ্তক ‘তারা’।
লিখিবার সময় সপ্তকের সাতটি সুরকে এইরূপে লেখা হয়—সা ঋ গ ম প ধ নি। কোমল সুর বুঝাইতে হইলে সুরের মাথায় ত্রিকোণ চিহ্ন এবং কড়ি বুঝাইতে হইলে ঐ স্থানে (...) পতাকা চিহ্ন দিতে হয়; যেমন গ (কোমল গ), ম (কড়ি মধ্যম)। উদারার সুরের নীচে বিন্দু দিতে হয়; যথা সা। তারার সুরের মাথায় বিন্দু দিতে হয়; যথা সা। মুদারার সুর সাদা; যেমন সা।