উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র/মহাভারতের কথা/দেবসেনার কথা

দেবসেনার কথা

 একদিন তিনি মানস পর্বতে বসিয়া, এই বিষয়ের চিন্তা করিতেছেন, এমন সময় একটি স্ত্রীলোকের চিৎকার তাঁহার কানে গেল। তিনি তখনই, ‘ভয় নাই’ বলিয়া সেই স্ত্রীলোকটিকে রক্ষা করিবার জন্য ছুটিয়া যাইতেছেন, এমন সময় দেখিলেন, কেশী নামক একটা দানব একটি বালিকাকে ধরিয়া লইয়া যাইতেছে। ইহাতে ইন্দ্র কেশীকে তিরস্কার পূর্বক, মেয়েটিকে ছাড়িয়া দিতে বলিলে, দুষ্ট তাঁহাকে একটি গদা ছুঁড়িয়া মারিল। সেই গদাকে ইন্দ্র অর্ধপথেই বজ্র দিয়া কাটিয়া ফেলাতে কেশী তাঁহাকে একটা পর্বত ছুঁড়িয়া মারিল। পর্বত বজ্রের ঘায়ে খণ্ড খণ্ড হইয়া উল্‌টিয়া কেশীর গায়েই পড়াতে, পাপিষ্ঠ সাংঘাতিক ব্যথা পাইয়া, কন্যাটিকে পরিত্যাগ পূর্বক পলায়ন করিল।

 তারপর সেই কন্যার পরিচয় লইয়া, ইন্দ্র দেখিলেন যে, তিনি তাঁহারই মাসতুত বোন, তাঁহার নাম দেবসেনা। সুতরাং তখন হইতেই তিনি একটি উপযুক্ত পাত্রের সহিত কন্যাটির বিবাহ দিবার জন্য চেষ্টা করিতে লাগিলেন।

 কিন্তু দেবসেনার সম্বন্ধে আগেই এ কথা জানা ছিল যে, “যে ব্যক্তি ইন্দ্রের সঙ্গে মিলিয়া দেব, দানব, যক্ষ, কিন্নর, সর্প, রাক্ষস প্রভৃতির সকলকে পরাজয় করিতে পারিবেন, তিনিই সেই কন্যাকে বিবাহ করিবেন।”

 ইন্দ্র দেখিলেন যে, এমন লোক একটিও সংসারে নাই। সুতরাং তিনি দেবসেনাকে লইয়া ব্রহ্মার নিকট গিয়া বলিলেন, “আপনি এই কন্যার জন্য এইরূপ একটি পাত্রের ঠিকানা বলিয়া দিন।”

 ব্রহ্মা বলিলেন, “ইন্দ্র, তুমি যেরূপ চাহিতেছ, ঠিক সেইরূপই একটি হইবে। সে এই কন্যাকেও বিবাহ করিবে আর তোমার সেনাপতির কাজও চালাইবে, ইহাতে সন্দেহ নাই।”