উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র/মহাভারতের কথা/মধুকৈটভের কথা

লুয়া ত্রুটি মডিউল:Header_template এর 348 নং লাইনে: bad argument #1 to 'next' (table expected, got nil)।

মধুকৈটভের কথা

 এ কথা বলিবামাত্র, মধু আব কৈটভ নামক দুইটা ভয়ঙ্কর দৈত্য, গদা হাতে সেই দুই বিন্দু জলের ভিতর হইতে বাহির হইয়া আসিল। ব্রহ্মা তখন অন্য জিনিস সৃষ্টি করিবার আগে, সবেমাত্র বেদ কখানি প্রস্তুত করিতে আরম্ভ করিয়াছেন। দুষ্ট দানবগণ তাহা দেখিবামাত্র, ব্রহ্মার হাত হইতে বেদের পুঁথি কাড়িয়া লইয়া, ঝুপ করিয়া জলে লাফাইয়া পড়িল। তারপর সেই জলের ভিতরে ডুব সাঁতার দিয়া, তাহারা একেবারে পাতালে গিয়া বসিয়া রহিল।

 এদিকে বেদ হারাইয়া ব্রহ্মার দুঃখ আর-আক্ষেপের সীমা পরিসীমা রহিল না। তিনি আর উপায় না দেখিয়া, নিতান্ত কাতর ভাবে নারায়ণকে বলিলেন—“ভগবন্, মধু আব কৈটভ যে বেদ কাড়িয়া নিল, এখন উপায় কি হইবে? বেদ না হইলে ত সৃষ্টি করাই অসম্ভব দেখিতেছি!”

 সুতরাং নারায়ণের আর নিদ্রা হইল না। তিনি সেই মুহূর্তেই উঠিয়া, অতি ভীষণ হয়গ্রীব মূর্তি (অর্থাৎ সেই মূর্তির মাথা ঘোড়ার মতন ছিল) ধারণ পূর্বক, বেদ আনিবার জন্য পাতালে যাত্রা করিলেন।

 পাতালে উপস্থিত হইয়া নারায়ণ উচ্চৈঃস্বরে সুর করিয়া সাম বেদ গান করিতে লাগিলেন। সেই গানের শব্দ শুনিবামাত্রই মধুকৈটভ তাড়াতাড়ি বেদ ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দেখিতে চলিল, উহা কিসের শব্দ। সেই অবসরে নারায়ণ বেদ আনিয়া ব্রহ্মাকে দিয়া, হয়গ্রীব মূর্তি পরিত্যাগ করতঃ আবার ঘুমাইয়া রহিলেন। মধুকৈটভ ইহার কিছু জানিতে পারিল না।

 এদিকে মধু আর কৈটভ ‘কিসের শব্দ’ ‘কিসের শব্দ’ করিয়া পাতালময় খুঁজিয়া কিছুই দেখিতে পাইল না। তারপর ফিরিয়া আসিয়া দেখে, বেদও নাই! তখন তাহারা পাতাল হইতে উঠিয়া আসিয়া দেখিল, নারায়ণ নিদ্রা যাইতেছেন।

 নারায়ণকে দেখিয়াই দানবেরা বলিল, “ঐ সেই সাদা বেটা (নারায়ণের দেহ শ্বেতবর্ণ ছিল) ঘুমাইতেছে। বেদ চুরি করা উহারই কাজ।”

 এই বলিয়া তাহারা নারায়ণের কাছে আসিয়া আবার ঘোরতর শব্দে বলিতে লাগিল, “এ বেটা কে রে? বেটা ঘুমাইতেছে কেন?”

 ইহাতে নারায়ণের ঘুম ভাঙ্গিয়া গেল, তিনি চাহিয়া দেখিলেন যে, দুই দানব মিলিয়া তাঁহাকে আক্রমণ করিবার আয়োজন করিতেছে। সুতরাং তখন তিনিও তাহাদিগকে আক্রমণ করিলেন, আর দেখিতে দেখিতে দুই দানবের প্রাণও বাহির হইয়া গেল।

 তবেই দেখা যাইতেছে যে, সৃষ্টির গোড়া হইতেই দেবতা আর অসুরের শত্রুতা। এই অসুরদের হাতে দেবতারা যে কত লাঞ্ছনা ভোগ করিয়াছে তাহা বলিয়া শেষ করা যায় না। অসুরগুলি স্বভাবতই বেজায় ষণ্ডা ছিল। তাহাদের চেহারা অতি ভয়ঙ্কর আর দেহগুলি পাহাড় পর্বতের মত বড় হইত। ইহার উপর আবার বড় বড় দেবতাদিগকে নিতান্ত ভালো মানুষ পাইয়া, উহারা সহজেই তাঁহাদিগকে তপস্যায় তুষ্ট করিয়া ফেলিত। তুষ্ট হইলেই তাঁহারা তাহাদিগকে তাহাদের ইচ্ছামত বর দিতেন। এমনি করিয়া এক একটা অসুর বড়ই ভয়ানক হইয়া উঠিত। সুন্দ আর উপসন্দ নামক দুইটি দানব, এইরূপে ব্রহ্মার নিকট বর পাইয়া, কি কম কাণ্ড করিয়াছিল?