উভয় সঙ্কট/তৃতীয় পরিচ্ছেদ
তৃতীয় পরিচ্ছেদ।
সমস্ত রাত্রি নিদ্রা নাই, তার উপর ইন্স্পেক্টর সাহেব আমার মস্তিষ্ক খারাপের বড়ই একটা ভয় দেখাইয়াছিলেন, সেই কারণ থানায় আসিয়া প্রথমেই স্নান করিলাম। তার পর সামান্য একটু জলযোগের পর আমি কেনারম দাদাকে সঙ্গে লইয়া থানা হইতে বাহির হইলাম। চিৎপুর রোডের যে বাড়ীতে খুন হইয়াছিল, প্রথমে সেই বাড়ীতে আসিলাম। অনুসন্ধানে জানিলাম—সে বাড়ীখানির মালিক—চোরবাগানের দত্তবাবুরা। এ বাড়ী কে ভাড়া লইয়াছিল, এ কথা প্রতিবাসীরা কিছুই বলিতে পারিল না, তবে এই মাত্র জানিতে পারিলাম—বাড়ীখানা এতদিন খালি পড়িয়াছিল, সবে ৪।৫ দিন মাত্র ভাড়াটিয়া আসিয়াছে। গতরাত্রে ভাল করিয়া দেখা হয় নাই—প্রথমেই বাড়ীখানার নীচে উপর তন্ন তন্ন করিয়া খুঁজিলাম, কোন রূপ চিঠিপত্র পাওয়া যায় কি না তাহাও ভাল করিয়া দেখিলাম। আসামী বা হতব্যক্তির পরিচয় বাহির করা সম্বন্ধে সে বাড়ীর মধ্যে যাহা যাহা করা আবশ্যক, তাহ সমস্তই করিলাম, কিন্তু সে বিষয়ের কিছু অনুসন্ধান করিতে পারিলাম না। তখন কেনারাম দাদাকে সঙ্গে লইয়া চোরবাগানের দত্ত বাবুদিগের বাড়ীর উদ্দেশে বাহির হইলাম।
পথে কেনারাম দাদা আমায় কহিল, “ভায়া হে, তোমার ডিটেক্টিভ বিভাগের এত লোক থাকিতে আমার উপর এ অনুগ্রহ কেন?”
আমি উত্তর করিলাম,—“কাজটা কি মন্দ করিয়াছি দাদা? চিরকালই কি জমাদারীতে কাটাইবে? নিজের উন্নতির কোন চেষ্টাও করবে না? যদি আমরা এ খুনের কোন কিনারা করিতে পারি, তবে তোমার এ মৌরসী পাট্টার জমাদারী আগে ঘুচাইব।”
কেনারাম দাদা তখন কহিলেন,—“আমি ত ভাই, তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারিতেছি না। খুন হইয়াছে ত একপ্রকার আমাদেরই চক্ষের সাম্নে। খুন হইয়াছে যে বন্দুকের গুলিতে— সেই বন্দুক হস্তে আসামীকে আমরা ধরিয়াছি, সুতরাং এইখানেইত কাজের খতম—এ খুনের কিনারা করিতে পারিলে উন্নতি হইবে বলিতেছ, কিন্তু এ খুনের কিনারা আবার কিরূপে করিতে হইবে, আমি ত ভাই, কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না।”
আমি কহিলাম,—“কেন,—বড় সাহেবের কথা কি ভুলিয়া গেলে দাদা? বড় সাহেব তোমারই সম্মুখে আমায় বলিলেন, এ কাজ বড় গুরুতর। আসামী ধৃত হইয়াছে বটে, তাহার বিপক্ষে প্রমাণ কি? আর সেই যে আসামী, তাই বা এখন কেমন করে বলা যাইতে পারে? তাহাকেই সন্দেহ হয় বটে, কিন্তু তাহার বিপক্ষে এখন অনেক প্রমাণ সংগ্রহ করিতে হইবে। প্রথমতঃ খুনের উদ্দেশ্য কি— সেটা পর্য্যন্ত আমরা এখনও জানতে পারি নাই।
কেনারাম দাদা কহিলেন, “বড় সাহেব ত তোমার মতেই মত দিলেন দেখিতেছি। মুখে বলুন আর নাই বলুন, যখন তোমার উপরই এ খুনের তদন্তের ভার দিয়াছেন, তখন তোমার মতে মত দেওয়া হইয়াছে। এই কারণ, আমাদের ইন স্পেক্টার সাহেবের তোমার উপর রাগ দেখিতে পাওয়া যায়। বড় সাহেবের সম্মুখে কিছু বলিতে পারিল না, কিন্তু মনে মনে বড়ই চটিয়া গিয়াছে। ইন্স্পেক্টর সাহেবের বিশ্বাস, তুমিই একটা তিলকে তাল পাকাইতেছ। কোথা থেকে সম্ভ্রান্ত স্ত্রীলোক, আর আসামী একজন ছদ্মবেশী বড় লোক, ইহার ভিতর আনিয়া একটা গোল পাকাইতেছ।”
এইরূপ কথা কহিতে কহিতে আমরা চোরবাগানের দত্তবাবুদের বাড়ী আসিয়া পৌঁছিলাম। প্রথমে কর্ত্তাবাবুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল। কিন্তু আমরা যে সংবাদের জন্য তাঁহার নিকট গিয়াছিলাম, তিনি সে সম্বন্ধ কিছুই বলিতে পারিলেন না। তবে তিনি একটা ভরসা দিলেন যে, তাঁহার সরকার মহাশয় সে সকল সংবাদ দিতে পারিবেন। তখন সরকার মহাশয় সেখানে ছিলেন না, তবে তাঁহার বাসা নিকটেই ছিল, আমাদের অনুরোধে তাঁহাকে বাসা হইতে ডাকিয়া আনিতে লোক পাঠান হইল। প্রায় অর্দ্ধঘণ্টা পরে সরকার মহাশয় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাঁহার সহিত আমার নিম্নলিখিতরূপ কথাবার্ত্তা হইল।
আমি। আপনাদের —নং চিৎপুর রোডের বাড়িখানা ভাড়া হইয়াছে কোন্ তারিখ হইতে?
সরকার। আজ ছয় দিন হইল। গত বুধবার হইতে।
আমি। কোন এগ্রিমেণ্ট হইয়াছে কি?
সরকার। না মহাশয়, কোন এগ্রিমেণ্ট হয় নাই।
আমি। কে ভাড়া লইয়াছে?
সরকার। একজন মুসলমান।
আমি। তার নাম কি?
সরকার। নামটা আমি জানি না।
আমি। বাড়ী কাকে ভাড়া দিলেন, তার নাম পর্য্যন্ত জানেন না—কি রকম?
সরকার। আপাততঃ এক মাসের ভাড়া অগ্রিম দিয়া ভাড়া লইয়াছিল, পরে এগ্রিমেণ্ট হইবে—এরূপ কথা ছিল।
আমি। সে অগ্রিম টাকার রসিদ দেওয়া হয় নাই?
সরকার। আজ্ঞে না—এগ্রিমেণ্ট হইলে পর, তবে রসিদ দেওয়া হইত।
আমি। এগ্রিমেণ্টের কাগজ কেনাও হয় নাই?
সরকার। আজ্ঞে না।
আমি। আচ্ছা, যে লোক ভাড়া লইয়াছিল, তাহাকে দেখিলে চিনিতে পার?
সরকার। পারি।
আমি। চেহারা কিরূপ?
সরকার। লোকটা লম্বা—বেশী মোটাও নয়, আর খুব রোগাও নয়। রং শ্যামবর্ণ—বয়স আন্দাজ ৫০ বৎসর হইবে।
আমি। দাড়ী আছে?
সরকার। দাড়ী আছে—লম্বা দাড়ী নয়—ঝাঁটা দাড়ী আর দাড়ীতে কাঁচা পাকা চুল।
সরকারের এই সকল কথা শুনিয়া আমি বড় আশায় নৈরাশ হইলাম। সরকার সে লোকের যে চেহারার পরিচয় দিল, ধৃত আসামী বা হত ব্যক্তির চেহারার সহিত তাহার কিছুই মিলিল না। তখন এ বাড়ীওয়ালার নিকট অনুসন্ধানে কোন ফল হইল না, বুঝিয়া আমি সেখান হইতে বিদায় লওয়াই শ্রেয় মনে করিলাম। তথাপি যাইবার সময় সেই সরকারকে কেনারাম দাদার সহিত একবার থানায় পাঠাইয়া দিলাম। ধৃত আসামী ও লাস দেখিয়া চিনিতে পারে কি না—ইহাই পরীক্ষা করা আমার উদ্দেশ্য ছিল।
তার পর সে অঞ্চলের নিকট যে সকল গাড়ীর আড্ডা ছিল, আমি সেই সকল আড্ডা অনুসন্ধান করিয়া বেড়াইতে লাগিলাম। গত রাত্রের দুর্য্যোগের পর, রাত্রি আন্দাজ সাড়ে বারটার সময় কোন্ গাড়োয়ান সেই বস্তির গলির মধ্য হইতে ভাড়া লইয়া গিয়াছে, সন্ধান করিয়া বাহির করাই আমার উদ্দেশ্য। অনেক চেষ্টার পর আমি মুক্তারামবাবুর স্ট্রীটের মোড়ে, যে ভাড়াটিয়া গাড়ীর আড্ডা আছে, সেই আড্ডার একজন কোচম্যানের নিকট যে সন্ধান পাইলাম, তাহাতে মনে কতকটা আশা জন্মিল। সে কহিল,—“আবদুল কাল অধিক রাত্রে ঐখান হইতে একটা ভাড়া লইয়া খিদিরপুর গিয়াছিল।”
আমি কহিলাম, “তুমি কিরূপে সে কথা জানিলে?”
সে কহিল, “একবারে ৫৲ পাঁচ টাকা ভাড়া পায় বলিয়া আমার নিকট সে আজ সকালে গল্প করিয়াছিল।”
আমি তখন সেই আবদুলের সহিত দেখা করিতে চাহিলাম। কিন্তু আবদুল তখন আস্তাবলে ছিল না, ভাড়া খাটিতে কোথায় চলিয়া গিয়াছে। কখন ফিরিয়া আসিবে—তাহাও কেহ বলিতে পারিল না, তবে দুই প্রহরের সময় আসা সম্ভব, এই কথা শুনিলাম। কাজেই আমি তখন থানায় ফিরিয়া গেলাম। সেই খানে কেনারাম দাদার সহিত আমার সাক্ষাৎ হইল। তাঁহারই মুখে শুনিলাম, আমি যাহা অনুমান করিয়াছিলাম, তাহাই ঠিক। ধৃত আসামী বা হতব্যক্তির মধ্যে কেহ সে বাড়ী লয় নাই। আহারাদির পর আমি পুনরায় সেই মুক্তরাম বাবুর স্ট্রীটের সেই আস্তাবলে গিয়া উপস্থিত হইলাম। কেনারাম দাদাও আমার সঙ্গে ছিলেন। আস্তাবলে গিয়া শুনিলাম, আবদুল তখনও ভাড়া খাটিয়া ফিরিয়া আইসে নাই। আমি সেখানে তাহার জন্য অপেক্ষা করিব কি না—এই কথা মনে মনে চিন্তা করিতেছি, এমন সময় দেখি, একখানি গাড়ী আসিয়া আস্তাবলের সম্মুখে থামিল। তখন একজন সহিসের মুখে জানিলাম, সেই গাড়ীর গাড়োয়ানের নামই আবদুল। আমি তখন যেন স্বর্গ হাতে পাইলাম। আবদুল কোচবাস্ক হইতে নামিল, গাড়ীর ঘোড়া খুলিয়া দিল, গাড়ী রাস্তার উপরই রহিল, কিন্তু ঘোড়া দুইটাকে সহিসের হস্তে প্রদান করিল। আমি ততক্ষণ রাস্তায় দাঁড়াইয়া তাহার অপেক্ষায় রহিলাম। এই সকল কার্য্য শেষ করিয়া সে একটু সুস্থ হইলে, আমি তাহার নিকটে গেলাম; এবং ধীরে ধীরে জিজ্ঞাসা করিলাম, হাঁ হে, তুমি কাল রাত্রে দুর্য্যোগের পর খিদিরপুরে ভাড়া লইয়া গিয়াছিলে?”
আবদুল আমার প্রশ্ন শুনিয়া কিছুক্ষণ অবাক্ হইয়া আমার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল, তাহার পর উত্তর করিল, “আমি ত কালরাত্রে খিদিরপুরে কোন ভাড়া লইয়া যাই নাই!”
আমি। অস্বীকার কর কেন? তুমি যে ৫৲ পাঁচ টাকা ভাড়া পাইয়াছ, তাহা ত আর আমি কাড়িয়া লইব না।
আবদুল। হাঁ—হাঁ, মনে পড়িয়াছে;—আমি কাল অধিক রাত্রে খিদিরপুরে একটা ভাড়া লইয়া গিয়াছিলাম বটে।
আমি তখন পকেট হইতে দুইটী টাকা বাহির করিয়া আবদুলের হস্তে গুঁজিয়া দিয়া কহিলাম,—“দেখ, এখন তোমায় দুই টাকা দিতেছি, আর তুমি যে বাড়ীতে সেই সওয়ারীদের রাখিয়া আসিয়াছ, সেই বাড়ী দেখাইয়া দিলে, তোমায় আর ৩৲ তিন টাকা দিব।”
আবদুল টাকার মোহিনীশক্তিতে বশীভূত হইয়া, আমার নিকট হইতে সেই দুই টাকা গ্রহণ করিল। তখন আমি তাহাকে একে একে নিম্নলিখিত প্রশ্ন করিতে লাগিলাম।
আমি। সওয়ারী কয়জন ছিল?
আব। দুইজন; একজন পুরুষ আর একজন স্ত্রীলোক।
আমি। তুমি নিজেই সেই বস্তির গলির মধ্যে গাড়ী লইয়া গিয়াছিলে, না অন্য স্থান হইতে কেহ তোমায় ঐ স্থানে ডাকিয়া আনে?
আব। সেই পুরুষ আমায় মেছুয়াবাজার স্ট্রীট হইতে ভাড়া করিয়া সেই বস্তির গলির মধ্যে লইয়া যায়।
আমি। সে পুরুষ হিন্দু না মুসলমান—তুমি সে কথা বলিতে পার কি?
আব। পারি,—লোকটা মুসলমান।
আমি। আচ্ছা, তাহার চেহারা কি রকম?
আব। তাহার চেহারাখানা মাফিক সই, রংটা খুব ফরসা নয়, বরং একটু ময়লা হইবে।
আমি। আচ্ছা, তার দেহখানা লম্বা না বেঁটে?
আব। বেঁটে নয়— বরং লম্বা হইবে।
আমি। আচ্ছা,মুসলমান বলিয়া কি করিয়া জানিতে পারিলে?
আব। কেন, আমার সহিত বেশ উর্দ্দুতে কথা কহিল, আর আমিও নিজে একজন মুসলমান, আর মুসলমান দেখিলে চিনিতে পারিব না?
আমি। সে লোকটার দাড়ি ছিল কি না?
আব। হাঁ, দাড়ি ছিল—তবে লম্বা নয়—ঝাঁটা ঝাঁটা দাড়ি।
আমি। সে দাড়িতে কি কাঁচা-পাকা চুল ছিল?
আব। আমি রাত্রে তাহাকে দেখিয়াছি, সুতরাং সে কথা বলিতে পারি না।
আমি। আচ্ছা, তার বয়স কত আন্দাজ কর?
আব। বয়স—আন্দাজ ৫০ বৎসরেরই কাছাকাছি হইবে।
আমি দেখিলাম,—দত্তবাবুদের সরকার যে চেহারা বর্ণনা করিয়াছিল, সেই চেহারার সহিত এই চেহারা প্রায় সমস্তই মিলিয়া গেল। তবে যে ব্যক্তি বাড়ী ভাড়া লইয়াছিল, সেই ব্যক্তিই সেই স্ত্রীলোককে উদ্ধার করিয়া লইয়া গিয়াছে। খুনের রহস্য ক্রমেই জমাট বাঁধিতে আরম্ভ করিল। আমি আগ্রহের সহিত জিজ্ঞাসা করিলাম, “তাহার সহিত যে স্ত্রীলোক ছিল, তাহার চেহারা কিরূপ, বলিতে পারি কি?”
আবদুল উত্তর করিল, “ঠিক চেহারা বলিতে পারি না, কারণ তাহার আপাদমস্তক একখানা ঢাকাই চাদরে ঢাকা ছিল। তবে সে স্ত্রীলোক যে খুব সুন্দরী ও যুবতী—একথা আমি বলিতে পারি।”
আমি। আচ্ছা, সে স্ত্রীলোককে কি কোন বড়ঘরের স্ত্রীলোক বলিয়া মনে হয়—গায়ে মূল্যবান গহনা ছিল কি না বলিতে পার?
আব। অলঙ্কার নিশ্চয়ই ছিল, তবে মূল্যবান কি না বলিতে পারি না, কারণ আমি পূর্ব্বেই বলিয়াছি, সে স্ত্রীলোকের আপাদমস্তক চাদরে ঢাকা।
আমি। তবে গায়ে গহনা ছিল কিরূপে বুঝিলে?
আব। বৃষ্টির দরুণ গাড়ীর দরজা আঁট হইয়া গিয়াছিল, তাহারা দরজা বন্ধ করিতে পারে নাই। আমি দরজা বন্ধ করিতে গিয়া স্ত্রীলোকের গায়ের গহনার শব্দ পাইয়াছিলাম।
আমি। তুমি যখন মেছুয়াবাজার স্ট্রীট হইতে গাড়ী লইয়া সেই মাঠের ধারে যাও, তখন কি সেই স্ত্রীলোক সেখানে গাড়ীর অপেক্ষায় ছিল?
আব। না—তখন সেখানে সে স্ত্রীলোক ছিল না, সেই লোকটা মাঠের দিক হইতে সেই স্ত্রীলোককে সঙ্গে করিয়া আনিয়াছিল।
আবদুলের নিকট এই সকল সংবাদ পাইয়া আমার বড়ই আহ্লাদ হইল। তখন আর আমার কালবিলম্ব সহ্য হইল না। আমি আবদুলকে তৎক্ষণাৎ গাড়ী জুতিয়া আমায় খিদিরপুরে লইয়া যাইতে কহিলাম। সে এইমাত্র ঘোড়াকে খাটাইয়া আস্তাবলে আসিয়াছে—এখন নিজেও স্নানাহার করিবে, সুতরাং সে সময় যাইতে অস্বীকার করিল। আমি তখন তাহাকে আমার প্রতিশ্রত আর তিনটি টাকা দিলাম। আমার নিকট সে টাকা পাইয়া আবদুল আর কোন আপত্তি করিল না। অন্য ঘোড়া জুতিয়া আমায় খিদিরপুরে লইয়া গেল। খিদিরপুরে লইয়া গিয়া সে আমায় একটা গেটওয়ালা বাড়ী দেখাইয়া দিল। গাড়ী হইতে নামিয়া দেখি,—সে গেট চাবিবন্ধ। সে বাড়ীর মধ্যে কোন লোকজন নাই। অনুসন্ধানে জানিলাম, সে বাড়ী রামপুরের নবাবের। সে বাড়ীতে নবাব বাস করেন না—ভাড়া দেওয়া হয়। প্রায় সাহেব ভাড়াটিয়া সে বাড়ী ভাড়া লইয়া থাকে। আজ প্রায় দুই মাস হইল, সে বাড়ী খালি পড়িয়া রহিয়াছে— কোন ভাড়াটিয়া নাই। গত রাত্রে সে বাড়ীতে কেহ ছিল কি না—সে কথা কেহ বলিতে পারিল না। তবে একজন বুড়ো দরওয়ান সে বাড়ীর রক্ষণাবেক্ষণ করিত। প্রায় এক সপ্তাহ হইল, তাহার জ্বর হওয়ায় তাহাকে হাসপাতালে দেওয়া হইয়াছে। উহার স্থানে এ পর্য্যন্ত আর কোন নূতন লোক নিযুক্ত করা হয় নাই। আমি বড় আশায় নৈরাশ হইলাম— এই সংবাদে আমার মাথায় যেন এক ভীষণ বজ্রাঘাত হইল!