এখন যাঁদের দেখছি/অবনীন্দ্রনাথের গল্প
অবনীন্দ্রনাথের গল্প
অবনীন্দ্রনাথ ভাবুক, কিন্তু ভারিক্কে মেজাজের মানুষ নন। এমন সব বিখ্যাত গুণী ব্যক্তি আছেন, অত্যন্ত সাবধানে তাঁদের কাছে গিয়ে বসতে হয়। এমনি তাঁরা রাশভারী যে তাঁদের সামনে মন খুলে কথা কইতেও ভরসা হয় না। কিন্তু অবনীন্দ্রনাথ রাশভারী নন, রাশহাল্কাও নন, তিনি একেবারে সহজ মানুষ। কোন রকম ছাবলামি না ক’রেও যে-কোন প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি আর পাঁচজনের সঙ্গে যোগ দিয়ে গল্পসল্প, হাসি-তামাসা বা রঙ্গভঙ্গ করতে পারেন। তাঁর সরস সংলাপ গুরুতর বিষয়কেও ক’রে তোলে সহজসরল।
পরম উপভোগ্য তাঁর মজলিস। সেখানে কারুকেই মুখে চাবিতালা দিয়ে বসে থাকতে হয় না, সবাই অসঙ্কোচে বলতে পারেন তাঁদের প্রাণের কথা। অনেক জ্ঞানী ও গুণী চমৎকার বৈঠকী আলাপ করেন বটে, কিন্তু সমগ্র বৈঠকটিকে একাই এমনভাবে সমাচ্ছন্ন ক’রে রাখেন যে, আর কেউ সেখানে মুখ খোলবার ফুরসৎ পান না। কিন্তু অবনীন্দ্রনাথের বৈঠক Soliloquy বা আত্মভাষণের বৈঠক নয়। সেখানে সবাই তাঁর কথা শোনবার ও নিজেদের কথা শোনাবার অবসর পান। সেখানে কখনো কখনো কারুকে কারুকে মুখরতা প্রকাশ করতেও দেখেছি কিন্তু অবনীন্দ্রনাথ অধীরতা প্রকাশ করেন নি।
তাঁর ভাবপ্রবণ মনে মাঝে মাঝে জাগে এমন সব অদ্ভুত খেয়াল, ভারিক্কে ব্যক্তিদের কাছে যা ছেলেমানুষি ছাড়া আর কিছুই নয়। কলকাতায় বর্ষা নামে, বিদ্যুৎ জ্বলে, বাজ হাঁকে, আকাশে মেঘের মিছিল চলে, দিকে দিকে ছায়ার মায়া দোলে, ঠাকুরবাড়ীর দক্ষিণের বাগানে বাদলের ঝর ঝর ধারা ঝরে, গাছপালার পাতায় পাতায় মর্মরবাণী জাগে, বাতাসের নিঃশ্বাসে ফলের ও সোঁদা মাটির গন্ধ ভেসে আসে, কিন্তু অবনীন্দ্রনাথের মনে ফোটে না বর্ষার পুরন্ত রূপখানি। বৈষ্ণব কবিদের মত তাঁরও বিশ্বাস, বর্ষার জলসার সঙ্গে দর্দুর বা ভেকের অচ্ছেদ্য সম্পর্ক। বলেন, “এখানে ব্যাং কই, ব্যাং না ডাকলে কি বর্ষা জমে?”
তখনই হুকুম হয়, “যেখান থেকে পারো কতকগুলো ব্যাং ধ’রে নিয়ে এস।”
লোকজন ঝুলি নিয়ে ছোটে। হেদুয়া না গোলদিঘির পুকুরপাড়ে নিরাপদে ও নির্ভাবনায় দল বেঁধে ব’সে যে সব দর্দুরনন্দন কাব্যে বর্ণিত মকধ্বনিতে পরিপূর্ণ করে তুলছিল চতুর্দিক, হানাদাররা হঠাৎ গিয়ে পড়ে তাদের উপরে, টপাটপ ক’রে ধ’রে পুরে ফেলে ঝুলির ভিতরে। তারপর ঝুলিভর্তি ব্যাং এনে ঠাকুরবাড়ীর বাগানে ছেড়ে দেয়। বাস্তুহারা হয়েও ভেকের দল ভড়কে যায় না, গ্যাঙর গ্যাঙর তানে সম্মিলিত কণ্ঠে চলতে থাকে তাদের গানের আলাপ। অবনীন্দ্রনাথের মনে বর্ষার ঠিক রূপটি ফোটে। কিন্তু অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে হয়তো বাড়ীর লোকের কাণ আর প্রাণ।
এ গল্পটি আমার কাছে বলেছিলেন অবনীন্দ্রনাথের জামাতা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়।
ঠাকুরবাড়ীর প্রত্যেকেরই একটি শিষ্ট আচরণ লক্ষ্য করেছি। সর্বপ্রথম যখন রবীন্দ্রনাথের কাছে গিয়েছি তখন তিনি ছিলেন প্রৌঢ়, আর আমি ছিলুম প্রায় বালক। কিন্তু তখনও এবং তারপরও অনেক দিন পর্যন্ত তিনি আমাকে “তুমি” বলে সম্বোধন করতে পারেন নি। গগনেন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথও আমাকে “বাবু” বলে সম্বোধন করতেন, এটা আমার মোটেই ভালো লাগত না। অবশেষে আমার অত্যন্ত আপত্তি দেখে অবনীন্দ্রনাথ আমাকে “বাবু” ও “আপনি” প্রভৃতি বলা ছেড়ে দেন। সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুরও আমার পিতার বয়সী হয়েও আমার সঙ্গে ব্যবহার করতেন সমবয়সী বন্ধুর মত, তবু কিন্তু তিনি আমাকে কোনদিনই “তুমি” বলে ডাকতে পারেন নি, আমি আপত্তি করলে খালি মুখ টিপে হাসতেন। এ শ্রেণীর শিষ্টাচার দুর্লভ।
“আনন্দবাজার পত্রিকা”র সম্পাদক স্বর্গীয় প্রফুল্ল সরকারকে অবনীন্দ্রনাথ একদিন অতিশয় অবাক ক’রে দিয়েছিলেন। ১৩৩১ কি ৩২ সালের কথা। আমি তখন আনন্দবাজারের নাট্য-বিভাগের ভার গ্রহণ করেছি।
প্রফুল্লবাবু একদিন বললেন, “হেমেন্দ্রবাবু, দোলযাত্রার জন্যে আনন্দবাজারের একটি বিশেষ সংখ্যা বেরুবে। অবনীন্দ্রনাথের একটি লেখা চাই। আপনার সঙ্গে তো তাঁর আলাপ আছে, আমাকে একদিন তাঁর কাছে নিয়ে যাবেন?”
বললুম, “বেশ তো, কাল সকালেই চলুন।”
পরদিন যথাসময়ে অবনীন্দ্রনাথের বাড়ীতে গিয়ে দেখলুম, বাগানের দিকে মুখ ক’রে তিনি ব’সে আছেন একলা।
তাঁর সঙ্গে প্রফুল্লবাবুকে পরিচিত করবার জন্যে বললুম, “ইনি দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে আসছেন।”
অবনীন্দ্রনাথ সুধোলেন, “সে আবার কোন্ কাগজ?”
প্রফুল্ল্বাবু যেন আকাশ থেকে পড়লেন। সবিস্ময়ে বললেন “আপনি আনন্দবাজারের নাম শোনেন নি?”
অবনীন্দ্রনাথ মাথা নেড়ে বললেন, “না। খবরের কাগজ আমি পড়ি না।”
প্রফুল্লবাবু, দ’মে গিয়ে একেবারে নির্বাক।
আমি বললুম, “আনন্দবাজারের দোল-সংখ্যার জন্যে উনি আপনার একটি লেখা চাইতে এসেছেন।”
অবনীন্দ্রনাথ বললেন, “বেশ, লেখা আমি দেব।”
অবনীন্দ্রনাথ মজার মানুষ। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ীতে আগে খুব ঘটা ক’রে মাঘোৎসব হ’ত। বিশেষ ক’রে জ’মে উঠত ব্রহ্মসঙ্গীতের আসর। রবীন্দ্রনাথ বহু সঙ্গীত রচনা করতেন। সেই সব গান শোনবার জন্যে যাঁরা ব্রাহ্ম নন তাঁরাও সেখানে গিয়ে সৃষ্টি করতেন বিপুল জনতা। নিমন্ত্রিতদের জন্যে জলখাবারেরও ব্যবস্থা থাকত। এখনকার ব্যবস্থার কথা জানি না। একবার আমার বড় ছেলে (এখন ফুটবল খেলার মাঠে রেফারি অলক রায় নামে সুপরিচিত) আবদার ধরলে, আমার সঙ্গে ঠাকুরবাড়ীর মাঘোৎসব দেখতে যাবে। তাকে নিয়ে গেলুম। বাইরেকার প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। আমার ছেলের দিকে তাকিয়ে সুধোলেন, “তোমার সঙ্গে এটি কে?”
বললুম, “আমার ছেলে।”
অবনীন্দ্রনাথ তো হেসেই অস্থির। বললেন, “হেমেন্দ্র, তুমি আমার চোখে ধূলো দেবে ভেবেছ? ভাইকে ছেলে ব’লে চালিয়ে দিতে এসেছ?”
আমি যতই বলি, “না, এ সত্যিই আমার ছেলে” তিনি কিছুতেই সে-কথা মানতে রাজি হলেন না, কারণ আমার নাকি অত বড় ছেলে হ’তেই পারে না!
তিনি আমাকে তরুণ বয়স থেকে দেখেছেন। সেই তারুণ্যকেই তিনি মনে ক’রে রেখেছেন, আমি যে তখন প্রৌঢ় সেটা তাঁর চোখে ধরা পড়ে নি। কেবল প্রৌঢ় নই, আমি তখন ছয়টি সন্তানের পিতা।
অবনীন্দ্রনাথ কেবল তুলি ও কলমের ওস্তাদ নন, তাঁর অভিনয়নৈপুণ্যেও অসাধারণ। এটা নিশ্চয়ই সহজাত সংস্কারের ফল। তাঁর পিতামহ গিরীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেছিলেন “বাবুবিলাস” নাটক এবং নিজের বাড়ীতেই করেছিলেন তার অভিনয়ের আয়োজন। তাঁর পিতা গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রথম যুগের বাংলা রঙ্গালয়ের একজন বিখ্যাত নাট্য-ধুরন্ধর। তিনি ছেলেবেলা থেকেই নিজের বাড়ীতে নাট্যোৎসব দেখে এসেছেন, সুতরাং পাদপ্রদীপের মায়ার দিকে আকৃষ্ট হয়েছেন স্বাভাবিকভাবেই। রবীন্দ্রনাথ সাধারণতঃ ভারিক্কে ভূমিকা নিয়েই রঙ্গমঞ্চে দেখা দিতেন, কিন্তু অবনীন্দ্রনাথ গ্রহণ করেছেন হাল্কা কৌতুকরসের ভূমিকা। তাঁর এই শ্রেণীর কয়েকটি অভিনয় আমি দেখেছি এবং মুগ্ধ হয়েছি। তিনি নিজে যেমন সহজ-সরল মানুষ, নাট্যমঞ্চের উপরেও দেখা দিয়েছেন ঠিক সেইভাবেই, একবারও মনে হয়নি কৃত্রিম অভিনয় দেখছি।
সাধারণ রঙ্গালয়েও মাঝে মাঝে তিনি অভিনয় দেখতে গিয়েছেন। “সীতা” নাট্যাভিনয়ে বাংলা নাট্যজগতে দৃশ্য-পরিকল্পনায় যুগান্তর এনেছিলেন তাঁরই এক শিষ্য শ্রীচারুচন্দ্র রায়। “মিশরকুমারী” নাট্যাভিনয়ে দৃশ্য-পরিকল্পক স্বর্গীয় অমরেন্দ্রনাথ সিংহ রায়ের কাজ দেখে খুসি হয়ে তিনি প্রশংসাপত্র দিয়েছিলেন ব’লে মনে হচ্ছে। আর একজন নামকরা দৃশ্য-পরিকল্পক স্বর্গীয় পটলবাবুও তাঁর কাছে উপদেশ নিয়ে মিনার্ভা থিয়েটারের যবনিকার সম্মুখ অংশে (Proscenium) যে কারুকার্য দেখিয়েছিলেন, সকলেই তার প্রশংসা না ক’রে পারে নি।
আজ উদয়শঙ্করের নাম সকলের মুখে মুখে। কিন্তু প্রথম যখন তিনি কলকাতায় আসেন, দেশের কেউ তাঁর নাম জানত না এবং কোথাও তিনি আমল পান নি। সে এক যুগে গিয়েছে। পুরুষের নাচ ছিল থিয়েটারের বকাটে ছেলেদের নিজস্ব, শিক্ষিত ভদ্রঘরের ছেলে নাচবে, এটা ছিল লোকের কল্পনারও অগোচর। উদয়শঙ্কর দস্তুরমত হতাশ হ’য়ে পড়েছিলেন। শেষটা তিনি একদিন আমার সঙ্গে পরামর্শ করতে এলেন। আমি বললুম, “আপনি অবনীন্দ্রনাথের কাছে যান। তিনি শিল্পী, তাঁর মন গণ্ডী মানে না। নিশ্চয় তিনি কোন পথ বাৎলে দিতে পারবেন।”
আমার পরামর্শ ব্যর্থ হয় নি। উদয়শঙ্কর নাচবেন শুনে অবনীন্দ্রনাথ বিস্মিত হন নি বা তাঁকে প্রতিনিবৃত্ত করতে চান নি, পরম উৎসাহিত হয়ে সুধীসমাজে তাঁকে পরিচিত করবার জন্যে প্রাচ্য চিত্র কলাভবনের সুবৃহৎ হলঘরে একদিন তাঁর নাচ দেখাবার ব্যবস্থা ক’রে দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই সুগম হয়ে গেল উদয়শঙ্করের পথ। বিদ্বজ্জনগণ তাঁকে দিলেন জয়মাল্য, সঙ্গে সঙ্গে মুক্ত হ’য়ে গেল জনসাধারণের বদ্ধ মন ও দৃষ্টি।
এক সন্ধ্যায় পুরাতন ঠাকুরবাড়ীর উঠানে রবীন্দ্রনাথের কি একটি নাচ-গানের আসর বসেছে, পালাটির নাম আর মনে পড়ছে না। উঠানের দক্ষিণ দিকে রঙ্গমঞ্চ, উত্তরে ঠাকুরদালানে ওঠবার সোপানের উপরে অবনীন্দ্রনাথের পাশে ব’সে আছি আমি। মঞ্চের উপরে কয়েকটি ছোট ছোট মেয়ে নাচতে নাচতে গান গাইছে। অবনীন্দ্রনাথ বললেন, “দেখ হেমেন্দ্র, আমাদের নাচের একটা বিষয় আমার মনে ধরে না। গানের কথায় যা যা থাকবে, নাচের ভঙ্গিতেও যে তা ফাটিয়ে তুলতে হবেই, এমন কোন বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত নয়। নাচ হচ্ছে একটা স্বতন্ত্র আর্ট, গানের কথাকে সে নকল করবে কেন? সুরের তালের সঙ্গে নিজের ছন্দ মিলিয়ে তাকে স্বাধীনভাবে সৃষ্টি করতে হবে নূতন নূতন সৌন্দর্য।”
“ভারতী” পত্রিকার কার্যালয়ে বসত আমাদের একটি সাহিত্যিক বৈঠক। এই মজলিসে পদার্পণ করতেন প্রবীণ ও নবীন বহু বিখ্যাত সাহিত্যিক। অবনীন্দ্রনাথ মাঝে মাঝে সেখানে গিয়ে শুনিয়ে আসতেন স্বরচিত ছোট ছোট হাস্যনাট্য বা নক্সা। তাঁর পাঠ হ’ত একসঙ্গে আবৃত্তি ও অভিনয়। লেখার ভিতরে যেখানে গান থাকত, নিজেই গুনগুন ক’রে গেয়ে আমাদের শুনিয়ে দিতেন, গানে সুর সংযোগও করতেন নিজেই। শুনেছি কোন কোন যন্ত্রও তিনি বাজাতে পারেন।
চলমান জল দেখতে তিনি ভালোবাসতেন। পরীতে সাগরসৈকতে একখানি বাড়ী করেছিলেন, নাম দিয়েছিলেন “পাথারপুরী”। মাঝে মাঝে সেখানে গিয়ে কিছুকাল কাটিয়ে আসতেন। কলকাতাতেও এক সময়ে প্রত্যহ সকালে গঙ্গাবক্ষে স্টিমারে চ’ড়ে বেড়িয়ে আসতেন বহুদূর পর্যন্ত। সেই গঙ্গাভ্রমণ উপলক্ষ্যে তাঁর কয়েকটি চমৎকার রচনা আছে।
আমিও কলকাতার গঙ্গার ধারে বাড়ী করেছি শুনে তিনি ভারি খুসি। উৎসাহিত হয়ে বললেন, “আমাকেও গঙ্গার ধারে একখানা বাড়ী দেখে দাও না!”
কিন্তু তাঁর গঙ্গার ধারে থাকা আর হয় নি। তবে এখন তিনি যেখানে বাস করছেন, সেও মনোরম ঠাঁই। নেই সহরের গণ্ডগোল, নিরিবিলি মস্ত বাগান। গাছে গাছে বসে পাখীদের গানের সভা, দিকে দিকে নাচে সবুজে সুষমা, ফুলে ফুলে পাখনা দুলিয়ে যায় প্রজাপতিরা, সরোবরে ঢল ঢল করে রোদে সোনালী জ্যোৎস্নায় রূপালী জল। জোড়াসাঁকোর বাড়ীর মত দক্ষিণ দিকে তেমনি প্রশস্ত দরদালান, আবার তিনিও সেখানে আগেকার মতই তেমনি বাগানের দিকে মুখ ক’রে আসনে আসীন হয়ে থাকেন। কিছুদিন আগে গিয়েও দেখেছি, ব’সে ব’সে কাগজের উপরে আঁকছেন একটি ছেলেখেলার কাঠের ঘোড়া।
কিন্তু আজ ব্যাধি ও বার্ধক্য তাঁর হাত করেছে অচল। একদিন আমাকে কাতর স্বরে বললেন, “হেমেন্দ্র, বড় কষ্ট। আঁকতে চাই আঁকতে পারি না, লিখতে চাই লিখতে পারি না।” স্রষ্টা সৃষ্টি করতে পারছেন না ইচ্ছা সত্ত্বেও, মন তাঁর জাগ্রত, কিন্তু দেহ অন্তরায়, এর চেয়ে দুর্ভাগ্য কল্পনা করা যায় না। পৃথিবীর জীবনযাত্রা, আলোছায়া রঙের খেলা তেমনি চলছে, শিল্পীই আজ কেবল নীরব, নিশ্চল দর্শক মাত্র।
অবনীন্দ্রনাথ এখন দূরে গিয়ে পড়েছেন, জীবন-সংগ্রামে আমারও অবসর হয়েছে বিরল, তাঁর কাছে গিয়ে প্রণাম করবার সৌভাগ্য হয় কালেভদ্রে কদাচ। সাহিত্যক্ষেত্রে চরণস্পর্শ ক’রে প্রণাম করেছি মাত্র দুইজন লোককে। তাঁরা হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ।