এখন যাঁদের দেখছি/আমাদের দলের আরো কিছু
আমাদের দলের আরো কিছু
যে সময়ে আমাদের দল গঠিত হয়, তখন বাংলা ভাষা উচ্চশ্রেণীর অনুবাদ-সাহিত্যে বিশেষ পরিপুষ্ট ছিল না। “সাহিত্য” প্রভৃতি পত্রিকায় মাঝে মাঝে মোপাসাঁ প্রমখ দুই-তিনজন গত যাগের লেখকের ছোটগল্প প্রকাশিত হ’ত। এবং তখনকার কয়েকজন বিখ্যাত বাঙালী লেখক (দীনেন্দ্রকুমার রায় ও হরিসাধন মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি) নিম্নতর শ্রেণীর বিলাতী গল্পকে মৌলিক বলে চালিয়ে দিতে ইতস্ততঃ করতেন না।
অনুবাদ হচ্ছে সাহিত্যের একটি প্রধান বিভাগ। অনুবাদসাহিত্যের বিপুল ভাণ্ডার খুলেই ইংরেজী ভাষার প্রয়োজনীয়তা আজ এতটা বেড়ে উঠেছে। একমাত্র তার মাধ্যমেই আমরা পরিচিত হ’তে পারি পৃথিবীর অধিকাংশ সাহিত্যের সঙ্গে। বিভিন্ন দেশীয় সাহিত্যের আদর্শ চোখের সামনে এনে রাখলে বাংলা সাহিত্যের আদর্শও যে উচ্চতর স্তরে উন্নীত হবে, এ বিশ্বাস ছিল আমাদের বরাবরই।
কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রখ্যাত লেখকই অনুবাদ-সাহিত্যের প্রতি সদয় ছিলেন না। এমন কি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মত লেখকও অনুবাদের সার্থকতা স্বীকার করতেন না। অনুবাদ করতে দেখলে আমাকে তিনি ভর্ৎসনা করতেন। বলতেন, “অনুবাদ করার মানেই হচ্ছে পণ্ডশ্রম করা।” অথচ মজা এই, সাহিত্য-জীবনের পূর্বার্ধে তিনি নিজেই দুইখানি বড় বড় ইংরেজী উপন্যাস বাংলাভাষায় তর্জমা করেছিলেন।
“জাহ্নবী”কে কেন্দ্র ক’রে আমাদের দল যখন গ’ড়ে ওঠে, তখন প্রথম থেকেই আমরা অনুবাদ-সাহিত্যের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দি। তখনকার য়ুরোপের নানা দেশের অতি-আধুনিক সাহিত্যিকদের রচনার সঙ্গে আমরা ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ স্থাপন করেছিলুম। কিন্তু কেবল তাঁদের রচনা পাঠ ক’রেই আমরা তৃপ্তিলাভ করতে পারতুম না। ভালো জিনিস যেমন আর পাঁচজনকে খাইয়ে সুখ হয়, বাঙালী পড়ুয়াদের কাছে তেমনি পাশ্চাত্য সাহিত্যের রস নিবেদন করবার জন্যে আমাদেরও আগ্রহ ছিল যথেষ্ট।
অনতিবিলম্বেই যাঁদের নিয়ে আমাদের দল বৃহত্তর হয়ে ওঠে, সেই সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়, সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্রীসৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন ঐ একই মতাবলম্বী। সে যুগের পাশ্চাত্য সাহিত্যের বহু শ্রেষ্ঠ রত্ন তাঁরা উপহার দিয়েছেন বাঙালী পাঠকসমাজের কাছে। সত্যেন্দ্রনাথ যত কবিতার অনুবাদ করেছেন, এদেশের আর কোন কবি তা করেননি। কিন্তু কেবল পদ্য নয়, গদ্যানুবাদেও তাঁর দান আছে। মৌলিক রচনাতেও যে পূর্বোক্ত লেখকরা প্রচুর কৃতিত্ব প্রকাশ করেছেন, এ কথা সকলেই জানেন। কিন্তু তাঁদের কেহই অনুবাদকে পণ্ডশ্রম ব’লে মনে করতেন না। তাঁরা অনুবাদে হাত দিয়েছিলেন নিজেদের নাম কেনবার জন্যে নয়, মাতৃভাষাকে সমৃদ্ধ করবার জন্যেই। এ বিভাগে আমাদের দলের অবদান অতিশয় উল্লেখযোগ্য। তাঁরা যে পথে অগ্রণী হয়েছিলেন, আজ সেখানে দেখা দিয়েছেন বহু নবীন পথিক। আমাদের অনুবাদ-সাহিত্যের ভাণ্ডার তাই ক্রমেই অধিকতর পুষ্ট হয়ে উঠছে।
আগেই বলেছি শ্রীঅমলচন্দ্র হোম যখন আমাদের দলে যোগ দিয়েছিলেন, তখন তিনি বিদ্যালয়ের ছাত্র। বয়সেও ছিলেন প্রায় কিশোর। কিন্তু সেই বয়সেই তাঁর অধীত বিদ্যার পরিধি ছিল বিস্ময়কর। দেশ-বিদেশের সাহিত্যের হাটে নিত্য ছিল তাঁর আনাগোনা। এবং আসরে আসীন হয়ে যখন তিনি সাহিত্য ও ললিতকলার বিবিধ বিভাগ নিয়ে নিজের মতামত জাহির করতেন, তখন পাওয়া যেত তাঁর প্রভূত মনীষার পরিচয়। বিদ্যালয়ে পড়তে পড়তে সাহিত্যের আবর্তে গিয়ে পড়লে গুরুজনদের দ্বিতীয় রিপু যে শান্ত থাকে না, নিজের জীবনেই তার প্রমাণ পেয়েছি। অমলচন্দ্রও যে গুরুজনদের দ্বারা তিরস্কৃত হয়েছেন, বন্ধুবান্ধবদের মুখেই শুনেছি এ কথা। কিন্তু সাহিত্যের নেশা হচ্ছে আফিমের মৌতাতের মত; ধরলে আর ছাড়ান পাবার উপায় থাকে না। অমলচন্দ্রও সাহিত্যচর্চা ও আমাদের দল ছাড়তে পারেননি। “জাহ্নবী”র আসর থেকে উঠে গিয়ে ব’সেছেন “ভারতী”র বৈঠকে। এবং চিরদিনই বন্ধুরূপে নির্বাচন করেছেন সাহিত্যিক ও শিল্পীদেরই। মাঝে মাঝে তাঁর বাড়ীতেও গিয়েছি এবং তখনও আমাদের আলাপ্য বিষয় হ’ত কেবল সাহিত্য ও শিল্পই।
রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় নিজেকে সাহিত্যিক নয়, সাংবাদিক ব’লেই মনে করতেন। “প্রবাসী”র জন্যে লিখতেন কেবল বিবিধ সংবাদ। কিন্তু সাহিত্য বিচারে যে তাঁর অসামান্য শক্তি ছিল, সম্পাদকরূপে সেটা তিনি বিশেষভাবেই প্রমাণিত ক’রে যেতে পেরেছেন। সুরেশচন্দ্র সমাজপতি প্রথম জীবনে গুটিকয় ছোট গল্প রচনা করেছিলেন, কিন্তু আজ আর বাজারে তার চাহিদা নেই। আর আছে তাঁর কিছু কিছু চুটকি সমালোচনা, তারও কোন স্থায়ী মূল্য নেই। অথচ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে তাঁর নাম। কিন্তু তিনি যে ছিলেন কত বড় রসবেত্তা, তাঁর “সাহিত্য” সম্পাদনার মধ্যেই আছে তার অতুলনীয় প্রমাণ। এক একজন লোক সাহিত্য সৃষ্টি না ক’রেও সাহিত্য-সমাজে মধ্যমণির মত বিরাজ করতে পারেন।
অমলচন্দ্রকে এই শ্রেণীর মধ্যে গণ্য করা চলে। তিনি একজন প্রথম শ্রেণীর সাহিত্যবোদ্ধা, সাহিত্য ও চারুকলা নিয়ে মুখে মখে অনর্গল আলাপ-আলোচনা করতে পারেন এবং রচনাশক্তিতেও তিনি বঞ্চিত নন। কিন্তু নিজের রচনা নিয়েই সময় কাটাবার দিকে তাঁর তেমন ঝোঁক নেই। “জাহ্নবী”র জন্যে তিনি কিছু কিছু লিখেছেন ব’লে মনে পড়ছে। কিন্তু লেখার চেয়ে ভালো ক’রে পত্রিকা পরিচালনার দিকেই তাঁর আগ্রহ ছিল বেশী। “জাহ্নবী”তে হাতমক্স ক’রে তারপর তিনি যখন “মিউনিসিপ্যাল গেজেটে”র সম্পাদকরূপে দেখা দেন, তখন তাঁর বিশেষ গুণপনা আকৃষ্ট করেছিল সকলের দৃষ্টি। একখানি সাধারণ পত্রিকাকে তিনি ক’রে তুলেছিলেন অনন্যসাধারণ। এবং সুযোগ পেলেই ওর ভিতর দিয়েই তিনি প্রকাশ করতেন সাহিত্য ও শিল্প সম্বন্ধে নিজের রসগ্রাহিতাকে। “মিউনিসিপাল গেজেটে”র রবীন্দ্র-সংখ্যা সৌন্দর্যে ও ঐশ্বর্ষে অবিস্মরণীয়। সেই সময়ে আরো অনেকগুলি পত্রিকার রবীন্দ্র-সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু মিউনিসিপাল গেজেটে”র সেই সংখ্যায় সুযোগ্য সম্পাদক সুদক্ষ হাতে যে সব বিচিত্র তথ্য পরিবেশনের ভার নিয়েছিলেন তা হয়েছিল সবচেয়ে উপভোগ্য। অমলচন্দ্র বালক বয়স থেকেই রবীন্দ্রনাথের দূর্লভ সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন, কবি সম্পর্কীয় বহু তথ্যই তাঁর নখদর্পণে এবং রবীন্দ্র-সাহিত্যেও আছে তাঁর পরিপূর্ণ অধিকার। কাজেই তাঁকে পরের মুখে ঝাল খেতে হয়নি। রবীন্দ্রনাথের উপরে তাঁর অচলা নিষ্ঠা এবং আমাদের দলের প্রত্যেকেই ছিলেন রবীন্দ্রনাথের পূজারী। রবীন্দ্রজয়ন্তীর সময়েও অমলচন্দ্রের সম্পাদনায় একখানি উপাদেয় গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল।
অতি-আধুনিক সাহিত্য নিয়েও তিনি মতিষ্ক চালনা করেন এবং সে সম্বন্ধেও নিজের বক্তব্য প্রকাশ করেছেন একখানি পুস্তিকায়। সাহিত্য-সমাজে তা বিলক্ষণ আলোড়ন সৃষ্টি করতে পেরেছিল।
এখন তিনি সম্পাদকের গদী ছেড়ে অধিকার করেছেন সরকারী প্রচার-সচিবের আসন। তাঁর পক্ষে খুব গুরুতর ব্যাপার না হ’লেও এ-পদেরও গুরুত্ব বড় অল্প নয়।
কিশোর, তরুণ ও প্রাচীন অমলচন্দ্র জেগে আছেন আমার চোখের উপরে। তবে আগে তাঁর সঙ্গে যেমন ঘন-ঘন দেখা হ’ত, এখন আর তা হয় না বটে। কিন্তু কালে ভদ্রে দেখা হ’লেই বুঝতে পারি, অমলচন্দ্রের পরিবর্তন হয়নি। তাঁর একহারা দেহ আজ দোহারা (মাঝে তেহারাও হয়েছিল) হয়েছে বটে, কিন্তু আজও তাঁর স্বভাব হারিয়ে ফেলেনি তারুণ্যের প্রভাব। অমলচন্দ্র কোন দিন বোধ করি দেহে বড়ো হ’লেও মনে বুড়ো হবেন না।
আর একজনের কথা ব’লে আমাদের দলের প্রসঙ্গ শেষ করব। তিনি হচ্ছেন শ্রীসুধীরচন্দ্র সরকার। তিনি হচ্ছেন একাধারে সাহিত্যিক, সম্পাদক ও পদস্তক-প্রকাশক। সুধীরের আগে বাংলাদেশের আর কোন সাহিত্যিক বিখ্যাত প্রকাশকরূপে আত্মপ্রকাশ করেছেন ব’লে মনে পড়ছে না, এখন এই পথে দেখি একাধিক ব্যক্তিকে। অনেকেরই মতে লেখকদের সঙ্গে প্রকাশকদের হচ্ছে খাদ্য ও খাদকের সম্পর্ক। সুধীরের বেলায় ও-কথা খাটে না।
“জাহ্নবী”র ছোট আসরেই সুধীরের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়, বোধ করি তিনি তখন সবে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। সেই পঠন্দশাতেই সাহিতিক হবার উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে তিনি করেছিলেন লেখনীধারণ। একাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত হ’তে থাকে তাঁর রচনা।
তারপর “জাহ্নবী”, “যমুনা”, “সঙ্কল্প” ও “মর্মবাণী” পত্রিকা পরে পরে উঠে গেল। এ সব কাগজের সঙ্গেই সধীরের ও আমার সম্পর্ক ছিল। একদিন আমরা দু’জনে সুকিয়া (এখন কৈলাস বসু) ষ্ট্রীট দিয়ে যাচ্ছি। এমন সময়ে কান্তিক প্রেস থেকে স্বর্গীয় মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায় আমাদের আহবান করলেন।
মণিলাল বললেন, “স্বর্ণকুমারী দেবী আমার উপরে “ভারতী”র ভার অর্পণ করতে চান। আপনারা দু’জনে যদি আমাকে সাহায্য করবার প্রতিশ্রুতি দেন, তাহ’লে সে ভার আমি গ্রহণ করতে পারি।”
তাঁর প্রস্তাবে আমরা রাজি হলুম। তারপর নতুন ক’রে আবার “ভারতী” প্রকাশিত হ’তে লাগল এবং আমাদের দল রূপান্তরিত হ’ল “ভারতী”র দলে।
সুধীরের পিতৃদেব স্বর্গীয় এম সি সরকার রায় বাহাদুরের একখানি আইন সংক্রান্ত পুস্তকের দোকান ছিল। সুধীরও তখন বি-এ পাস ক’রে আইন পড়ছিলেন। তারপর হঠাৎ আইনের পড়া ছেড়ে দিয়ে বইয়ের দোকানে গিয়ে বসতে সুরু করলেন। তিনি হচ্ছেন সাহিতিক, শুকেনো আইনের কেতাব নিয়ে নিযুক্ত থাকতে চাইলেন না। প্রকাশ করতে লাগলেন বাংলা কথাসাহিত্যের পুস্তক। এ বিভাগে তাঁদের দ্বারা প্রকাশিত প্রথম দু’খানি বই যথাক্রমে চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও আমার দ্বারা রচিত। আজ তিনি ফলাও ক’রে ব্যবসা ফেঁদেছেন, “এম সি সরকার এণ্ড সন্স” হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান প্রকাশক। কিন্তু এই বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের মূলে আছে একমাত্র সুধীরেরই মনীষা, সততা ও অমায়িকতা। আজ পর্যন্ত একাধিক ব্যক্তি তাঁকে ঠকিয়েছে, কিন্তু কোন লেখককেই তাঁর কাছে ঠকতে হয়নি।
সুধীরের প্রধান কীর্তি “মৌচাক”। ছত্রিশ বৎসর আগে “ভারতী”র আসরে কবির সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের দ্বারা যখন “মৌচাকে”র নামকরণ হয়, তখন বাংলাদেশের খুব কম লেখকই শিশু-সাহিত্য নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইতেন। সুধীরের নির্বন্ধাতিশয়েই গত যুগের ও বর্তমান কালের অধিকাংশ প্রখ্যাত লেখক “মৌচাকে”র মাধ্যমে আমাদের শিশু-সাহিত্যিকে সমৃদ্ধ ক’রে তুলেছেন। “মৌচাকে”র সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ও মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায় প্রভৃতি স্বনামধন্য স্বর্গীয় লেখকরা। এবং “মৌচাক” আমন্ত্রণ না করলে সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়, প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, নরেন্দ্র দেব, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বুদ্ধদেব বসু, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, অন্নদাশঙ্কর রায়, শিবরাম চক্রবর্তী, নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রবোধকুমার সান্যাল ও স্বর্গীয় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধায় প্রভৃতি ছোটদের জন্যে কলমই ধরতেন কিনা সন্দেহ! আমাকেও বড়দের আসর থেকে টেনে এনে ছোটদের খেলাঘরে নামিয়েছে ঐ “মৌচাক”ই। তার আসরে এসে আসীন হয়েছেন আজ পর্যন্ত কত বিখ্যাত লেখক, ছোটদের আর কোন পত্রিকা তেমন গর্ব করতে পারবে না।
শরৎচন্দ্রের প্রথম পুস্তক “বড়দিদি” কোন পুস্তক-ব্যবসায়ী প্রকাশ করেননি, “যমুনা” সম্পাদক স্বর্গীয় ফণীন্দ্রনাথ পাল তা ছাপিয়েছিলেন সখ ক’রেই। প্রকাশকদের মধ্যে সর্বপ্রথমে সধীরই বইয়ের বাজারে শরৎচন্দ্রকে নিয়ে দেখা দেন। শরৎচন্দ্রের সর্বশেষ পুস্তক “ছেলেবেলার গল্প”ও তাঁরই দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে। মৃত্যুশয্যায় শায়িত শরৎচন্দ্রের যখন অনটন হয়েছিল, সুধীরই তাঁকে অর্থ সাহায্য করতে অগ্রসর হয়েছিলেন।
আমাদের সব সাহিত্যবৈঠক আজ অতীত স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে। বিদ্যমান আছে কেবল এই “মৌচাকে”র বৈঠক। যদিও তার আগেকার ঔজ্জল্য আর নেই, তবু এখনো যে সে শিবরাত্রির সলতের মত টিম টিম ক’রে জ্বলছে, এইটুকুই হচ্ছে আনন্দের কথা। কিন্তু সেখানে বিদ্যমান আছেন আগেকার সুধীরচন্দ্রই। সেখানে গেলেই আবার মনের চোখে দেখতে পাই তাঁদের প্রিয় মুখগুলি, জীবনের যাত্রাপথে চলতে চলতে আজ যাঁরা হারিয়ে গিয়েছেন—শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়, সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতি। মনের চোখে তাঁদের দেখি এবং মনে মনে তাঁদের সঙ্গসুখ উপভোগ করি।
প্রবাসী বঙ্গ-সাহিত্য সম্মেলনে শিশু-সাহিত্য শাখার সভাপতিরূপে সুধীরচন্দ্র যে চমৎকার অভিভাষণ পাঠ করেছিলেন, তার মধ্যে আাছে চিন্তাশীলতা ও বহু জ্ঞাতব্য তথ্য। সুধীরের মাথার কালো চুল একেবারে সাদা হয়ে গিয়েছে বটে, কিন্তু তাঁর কলমে আজও ঘুণে ধরেনি।